কখনও ‘লিঙ্ক’ নেই, আবার কখনও গতি মন্থর। বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা অবর নিবন্ধক কার্যালয়ের (সাব-রেজিস্ট্রেশন অফিস) ইন্টারনেটের এই দুর্বিপাকে বিষম সমস্যায় পড়েছেন মানুষজন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন ভোগান্তিতে পড়ে এ জন্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন। শুধু তাঁদেরই নয়, পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ায়, ক্ষোভ বাড়ছে ওই দফতরের দলিল লেখক সমিতি ও কপি রাইটারদের মধ্যেও। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তাঁরা পরিষেবা স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহলে।
বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা অবর নিবন্ধক কার্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক মানুষের আনাগোনা। ওই অফিসের পশ্চিমবঙ্গ কপি রাইটার সমিতির সম্পাদক সুপ্রিয় চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘গত ১৩ মে থেকে আমাদের অফিসে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছে। কখনও ইন্টারনেটের ‘লিঙ্ক’ থাকছে না, আবার কখনও গতি এমনই কমে যায়, যে কাজ করা যায় না। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে করতে ফিরে যেতে হয় লোকজনকে। শুধু তাঁরাই নন, ইলামবাজার এলাকার বাসিন্দা শেখ কুতুবুদ্দিন, লুতফার বিবি, মালা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর সাত্তারদের অভিযোগ, ‘‘সম্পত্তির মূল্যায়ণ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আজ হবে কাল হবে বলে, ফি দিন এসে ঘুরে যেতে হচ্ছে। কোন কাজই হচ্ছে না। শুধু আসা-যাওয়া করা তাই সার। কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না।’’
এ দিকে ওই দফতরের পশ্চিমবঙ্গ দলিল লেখক সমিতির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র ভাণ্ডারীর অভিযোগ, ‘‘শুধু ইন্টারনেটের গণ্ডগোলই নয়, সম্পত্তির মূল্যায়ণেও অদ্ভূত রকমের সমস্যা হচ্ছে। কখনও সেই মূল্যায়ণ বেড়ে যাচ্ছে, আবার কখনও সেই মূল্যায়ণ কমে যাচ্ছে। একটা ভূতুড়ে ব্যাপার হচ্ছে।’’ ইলামবাজার এলাকার বাসিন্দা সুশীলা বিবি, কবিরুল আলি, মিহসাপুরের চাঁদনেহার বিবিদের অভিজ্ঞতা আবার অন্যরকমের। নারায়ণবাবুর দাবি, ‘‘কখন জমির দাম বাড়ছে, কখন কমছে, কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। যদি কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ থাকে, তাহলে দ্রুত সারানোর বন্দোবস্ত করুক কর্তৃপক্ষ।’’
ই-রেজিস্ট্রেশনের কারণে শুধু মাত্র বোলপুরেই এই সমস্যা, তা কিন্তু নয়। সদর শহর সিউড়ির জেলা অবর নিবন্ধকের কার্যালয়েও ‘লিঙ্ক’ নেই ও কম গতিজনিত সমস্যা চলছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন। ওই অফিসের পশ্চিমবঙ্গ দলিল লেখক সমিতির বীরভূম জেলা শাখার সভাপতি শেখ আরজুল হোসেনের অভিযোগ, ‘‘শুধু জেলা সদর কার্যালয় বা বোলপুরের কার্যালয়ই নয়। একই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই, দুবরাজপুর-সহও ৮টি দফতরে। জেলার শুধুমাত্র নানুর এলাকায় ই-রেজিস্ট্রেশনের আওতায় না আসায় সেখানকার বাসিন্দারা এই ভোগান্তি থেকে মুক্ত।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় ই-রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা ২৪ এপ্রিল থেকে জেলার সদর সিউড়ি, মডেল অফিস বোলপুর-সহ মোট আটটি জায়গায় চালু হয়। সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক এবং কপি রাইটার সংগঠনের দাবি, আনুষ্ঠানিক ভাবে ই-রেজিস্ট্রেশন চালু হওয়ার পর দিন থেকেই সমস্যার শুরু হয়। কিন্তু ভোগান্ত চরমে ওঠে ১০ মে-র পর থেকে। কোন এক অজ্ঞাত কারণে একাধিক কার্যালয়ের ইন্টারনেট পরিষেবায় সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ই-রেজিস্ট্রেশনের সুফল পাওয়ার বদলে ভোগান্তিতে পড়তে হল বাসিন্দাদের।
বোলপুর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনের পর দিন এহেন পরিষেবা বিপর্যস্তের কারণে গ্রাহক, সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মী এবং দলিল লেখক ও কপি রাইটার সংগঠনগুলির মধ্যে ক্ষোভ বাডছে। শুক্রবারও প্রায় দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়। অভিযোগ, শুধু মানুষের ভোগান্তিই নয়, সরকারের রাজস্বেরও ক্ষতি হচ্ছে। অবিলম্বে পরিষেবা স্বাভাবিক করা দাবি তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল।
অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সাব রেজিস্ট্রার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ফোন ধরেননি। এসএমএসে এ নিয়ে জানতে চাইলে জবাবও দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy