কোথাও ছাড়া হচ্ছে না পথ, কোথাও পর্যাপ্ত নিকাশি ছাড়াই গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। বিষ্ণুপুরের অলি-গলিতে গড়ে ওঠা আবাসন নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই মল্লরাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে। পুরসভার অবশ্য দাবি, সে ভাবে অভিযোগই মেলে না। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
বছর দশেক আগে বিষ্ণুপুর শহরে আবাসন ‘সংস্কৃতি’ শুরু হতে দেখা যায়। ধাপে ধাপে সেই চল ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেই নিজের পুরনো বাড়ি প্রোমোটারকে বিক্রি করে সেখানে বহুতল গড়ে তুলছেন। এ ভাবে শহরের ২২টি জায়গায় বহুতল গড়ে উঠেছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
তবে এই বহুতলগুলি নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যায় স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছে। শুক্রবার শহরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে নির্মীয়মাণ একটি বহুতলের ইটের বস্তা পড়ে জখম হন এক শ্রমিক। সেই সময় ওই রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাওয়া দুই মহিলা কোনও ক্রমে রক্ষা পান। নির্মাণকাজ চলাকালীন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
রসিকগঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভ, সঙ্কীর্ণ জায়গার মধ্যেই একাধিক বহুতল গড়ে উঠেছে। বহুতলগুলির ছাদের জল গড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। ভিতরে পার্কিং ব্যবস্থাও কিছু ক্ষেত্রে নেই। আবাসিকেরা যানবাহন রাস্তার উপর রাখেন। এর জেরে যানজট বাড়ছে বলেও অভিযোগ।
বিষ্ণুপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি পুর-প্রতিনিধি শঙ্খজিৎ রায় বলেন, ‘‘বেশির ভাগ আবাসনেই তদন্ত করলে বোঝা যাবে পুর-আইন না মেনেই নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গাও ছাড়া হয়নি। যে জায়গায় আবাসনগুলি তৈরি হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখানে দমকলের গাড়ি ঢোকার জন্য রাস্তাও নেই। পুরসভায় যে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে, বাস্তবে নির্মাণের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায় না।’’ তাঁর অভিযোগ, এ সব নিয়ে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে অনেকবার প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেনি।
এ নিয়ে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের গৌতম গোস্বামীর দাবি, ‘‘নিয়ম মেনে যে কাজ হচ্ছে না, এটা কে বলছে? আমরা তো কোথাও তেমন অভিযোগ শুনিনি। কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্মাণ কাজ চলার সময় দুর্ঘটনা ঘটেছিল। খবর পেয়েই কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’’ বহুতলগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যার অভিযোগ নিয়ে পুরপ্রধান বলেন, ‘‘নকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না সেটা আমরা নজর রাখি। কোথাও তেমন সমস্যা দেখিনি। বিরোধীরা রাজনৈতিক স্বার্থে এ সব অভিযোগ তুলছে।’’
সম্প্রতি বিষ্ণুপুরের রাজদরবার এলাকায় একটি লজ নির্মাণ করা হচ্ছিল। আদালতের নির্দেশে সেই লজ ভেঙে ফেলা হয়। শহরের শালবাগান এলাকাতেও একটি আবাসনের অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয়েছিল। গৌতম এই দু’টি তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘‘অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নজির এই শহরে রয়েছে। আমরাই সেই কাজ করেছি।’’
ঘটনা হল, প্রাচীন বিষ্ণুপুর শহরের বড় অংশই অপরিকল্পিত ভাবে গড়া। এই পরিস্থিতিতে শহরময় নির্মীয়মাণ বহুতলগুলি নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না তার উপরে পুরসভা কড়া নজর না রাখলে আগামী দিনে সমস্যা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন শহরবাসীর একাংশ। গৌতমের আশ্বাস, নির্মাণগুলির উপরে নজর রয়েছে পুরসভার।
অন্যদিকে, জেলার আর এক পুরশহর সোনামুখীতেও কয়েক বছর ধরে বহুতল তৈরি শুরু হয়েছে। সোনামুখীর পুরপ্রধান সন্তোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহুতল নির্মাণে নিয়ম মেনে কাজ হচ্ছে কি না পুর-প্রতিনিধি থেকে ইঞ্জিনিয়ার সবাই নজর রাখেন।’’ (শেষ)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)