লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট বিজেপির বিরুদ্ধে সাফল্য না পেলেও পুরুলিয়ার জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে সাফল্য ছিনিয়ে আনল তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট। নির্বাচনে ‘প্রগতিশীল জোট’ সমবায়ের ৩৩টি আসনের মধ্যে ২৭টিতে জিতেছে।
নির্বাচনের আগে ১৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন জোট প্রার্থীরা। বাকি ১৯টি আসনে জোটের প্রার্থীদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই হয় বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের। শনিবার ছিল নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। আসরে নামেন তৃণমূলের শ্রমিক ও যুব সংগঠনের জেলা সভাপতিদের। ভোট গণনা হয় জয়পুর আরবিবি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ১৯টি আসনের মধ্যে ১৩টি পায় ‘প্রগতিশীল জোট’। তার মধ্যে তৃণমূল ৭, কংগ্রেস ৪, সিপিএম ২টি আসন পেয়েছে। প্রধান বিরোধী বিজেপি ৫ ও নির্দল ১টি আসনে জয়লাভ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে শেষবার নির্বাচন হয় সমিতির। ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। ২০২০ সাল নাগাদ সেই বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। তারপরে ২০২০ সাল থেকে প্রশাসক বসিয়ে বোর্ডের দায়িত্বে কাজকর্ম চলতে থাকে। স্থানীয়দের দাবি, এই সময়ে সমিতির কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল। সমিতির ব্যাঙ্কে যাঁদের টাকা গচ্ছিত আছে, তাঁরা সঠিক সময়ে টাকা পাচ্ছিলেন না। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালন সমিতি গঠনের দাবি উঠেছিল।
তবে একক ভাবে না লড়ে জোট গড়া হল কেন? জয়পুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি প্রণব চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘‘সমবায় সমিতি একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আমরা চেয়েছিলাম অরাজনৈতিক ভাবে পরিচালন সমিতি গঠন করে সমিতির সার্বিক উন্নয়ন করা হবে। সে বিষয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সিপিএম ও কংগ্রেস রাজি হয়। কিন্তু বিজেপি সে প্রস্তাবে রাজি না হয়ে একক ভাবে নির্বাচনে লড়েছে।’’ একই সুরে কংগ্রেসের জয়পুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অনিল মাহাতোও বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ওই সমবায়ে পরিচালন সমিতির বোর্ড না থাকায় ডামাডোল অবস্থায় সমবায় চলছিল। সমবায় সমিতির উন্নয়নের স্বার্থে আমরা এই জোটে অংশগ্রহণ করেছি। একটাই লক্ষ্য, সমিতিকে বাঁচানো।’’ সিপিএমের জয়ী প্রার্থী দেবব্রত পট্টনায়কও বলেন, ‘‘সমিতিকে বাঁচানোর জন্যই আমরা এক হয়েছি।’’
অন্য দিকে, বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি রবীন সিংহ দেও বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ চেয়েছিলেন সমবায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে বোর্ড গঠন করা হোক। তাই বিজেপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল একক ভাবে জিততে পারবে না বুঝেই সিপিএম ও কংগ্রেসকে নিয়ে জোট করেছিল।’’
ঘটনা হল, জয়পুর কৃষি সমবায় জয়পুর পঞ্চায়েত এলাকাকে নিয়ে গঠিত। ওই পঞ্চায়েতের ভোটে ২০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৮টি, বিজেপি ১০টি, নির্দল ২টি আসনে জিতেছিল। পরে বিজেপি থেকে ৪ জন ও নির্দলের ২ জন তৃণমূলে যোগ দেন। তারপরে ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, সমবায় হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাতেই কি জোট গড়েছে তৃণমূল? যদিও সে দাবি মানেননি জয়পুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি রাজাবাবু আনসারি। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি নয়, সমিতিকে বাঁচানোই আমাদের লক্ষ্য ছিল। তাই জোট গড়েছি।’’ জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার অয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়েছে। পরিচালন সমিতির বোর্ড গঠন হলে সমিতি পরিচালন করতে সুবিধা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)