পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ মৃত্যু হয়েছিল পুলিশকর্মী বাবার। সে শোক নিয়েই, পারলৌকিক ক্রিয়া অসম্পূর্ণ রেখে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল মেয়ে। আজ, ৩৪৯ নম্বর পেয়ে পাস করেছে সেই মেয়ে দিশা গড়াই। বাবার মতোই পুলিশে কাজ করতে চায় সে। কিন্তু অর্থাভাবে সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিশার পরিবার। অন্য দিকে, মাধ্যমিক শুরুর আগেই মাকে হারিয়েছিল দুবরাজপুরের শ্রীশ্রী সারদা বিদ্যাপীঠের ছাত্র বিষ্ণু বাগদি। ২৩৪ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। পাশ করে মায়ের কথা মনে পড়ছে বিষ্ণুর।
বর্তমানে বোলপুরের প্রান্তিক এলাকায় থাকে দিশা। ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎই মায়াপুর পুলিশ ব্যারাকের ফাঁড়িতে গলায় ফাঁস লাগা অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়েছিল দিশার বাবা দেবাশিস গড়াই। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দিশার। শোক সামলে এবং বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া অসম্পূর্ণ রেখেই মাধ্যমিকের শেষ দিনের পরীক্ষায় বসেছিল গোয়ালপাড়া তনয়েন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী দিশা।
দিশার পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছিল বোলপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিকে ৩৪৯ পেয়েছে সে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দিশার এ ফলে খুশি তাঁর পরিবার-পরিজনেরা। বড় হয়ে বাবার মতোই পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখে দিশা। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে পড়েছে বলে জানান দিশার মা। দিশা জানায়, ভাই আর মা— সব মিলিয়ে তিন জনের সংসার। মা কোনওরকমে তিন সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন। কী ভাবে মেয়ের পড়ার খরচ চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে দিশার পরিবার।
দিশার মা মালতি গড়াই বলেন, “ওর বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল, মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবে। তাই মেয়েকে অনেক করে বুঝিয়ে ওই দিন পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছিলাম। বাড়িতে অঘটন ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও মেয়ে নিজের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাস করায় আমরা খুবই খুশি। তবে ওর বাবার প্রাপ্য অর্থ এখনও কিছুই পাইনি। পারিবারিক পেনশনও চালু হয়নি। তাই মেয়ের সামনের পড়াশোনার খরচ কী ভাবে চালাব ভেবে পাচ্ছি না।”
দিশা বলে, “বাবা সব সময় বলতো ভাল করে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। আমি এখন বাবার সে ইচ্ছা পূরণ করতে চাই।” পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে উনি মারা গিয়েছেন। পারিবারিক পেনশন চালু হতে কিছুটা সময় লাগে।’’
বিষ্ণুর বাবা ট্রাক্টর চালক। দাদা কাজের সূত্রে বাইরে থাকে। পরীক্ষার আগের দিন দুপুরে হঠাৎ-ই মত্যু হয় বিষ্ণু-র মা পদ্মা বাগদির। দু’সন্তানের ছোট বিষ্ণু লেখাপড়া চালিয়ে যাক চাইতেন মা।
মাকে দাহ করে পরীক্ষার আগের দিন রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ শ্মশান থেকে ফেরে বিষ্ণু। পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না ওই কিশোরের। কিন্তু কাকা শ্যামল বাগদি বোঝান, একটা বছর এ ভাবে নষ্ট না করে পরীক্ষা দিতে। অশৌচের পোশাকে মাধ্যমিক দিতে গিয়েছিল দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের রূপশিমুল গ্রামের বিষ্ণু। সে বলে, ‘‘প্রস্তুতি ভালই ছিল। কিন্তু মাকে হারিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার মতো মনের অবস্থা ছিল না। এখন শুধু মায়ের মুখটা মনে পড়ছে। এর থেকে বেশি আশা করিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হব।’’
সহ প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)