Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মাঠ জুড়ে বুড়ো হাড়েই ভেলকি দেখালেন ওঁরা

কারও বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। কেউবা ষাট ছুঁই ছুঁই। সেই বয়সের ভারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখালেন ওঁরা। দক্ষ খেলোয়ারের মতোই সুইং, ডজ করে সোজা মারলেন গোলে।

বল দখলের লড়াই। নিজস্ব চিত্র।

বল দখলের লড়াই। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২০
Share: Save:

কারও বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। কেউবা ষাট ছুঁই ছুঁই। সেই বয়সের ভারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখালেন ওঁরা। দক্ষ খেলোয়ারের মতোই সুইং, ডজ করে সোজা মারলেন গোলে। দর্শকেরা গোল বলে চিৎকার করে উঠতেই শিশুর মতো মাঝমাঠ থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন সতীর্থ খেলোয়াড়দের। তখন তাঁদের দেখে কে বলবে, কেউ কয়েক বছর পরেই অবসর নেবেন। কেউবা চশমা চোখে ক্লাসে রীতিমতো রাশভারী শিক্ষক!

শনিবার কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুল মাঠে মহকুমা টিচার্স কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় শিক্ষকদের ওই খেলা ঘিরে তাই উৎসাহের অন্ত ছিল না। গত দু’বছর ধরে স্কুলের স্পোর্টস কমিটির উদ্যোগে ওই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত পুজোর ছুটির আগেই খেলার সময় নির্ধারিত রয়েছে। এ বার স্কুলেরই শিক্ষক শ্রীজীব ভট্টাচার্যের অবসর গ্রহণ উপলক্ষে এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। শিবচন্দ্র হাইস্কুলল ছাড়াও প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় রজতপুর হাইস্কুল, বোলপুর হাইস্কুল, চারকলগ্রাম হাইস্কুল, বিপ্রটিকুরী হাইস্কুল, দ্বারোন্দা হাইস্কুল, শীর্ষা হাইস্কুল এবং বেলুটি হাইস্কুল। ফাইনালে বোলপুর হাইস্কুল চারকলগ্রাম হাইস্কুলকে টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।

জয়-পরাজয় যা-ই হোক না কেন, এ দিনের খেলায় খেলোয়াড়দের ঘিরেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে গোটা মাঠ। জার্সি পড়ে মাঠে নামেন বোলপুর হাইস্কুলের ৫৯ বছরের সমীরকুমার দাস, ৫৭ বছরের নিত্যানন্দ সাহা, ৫৫ বছরের সুশান্ত দাস, চারকলগ্রামের ৫২ বছরের সৌমেন চক্রবর্তীরা। একই ভাবে মাঠে নেমেছেন অপেক্ষাকৃত কমবয়সী কীর্ণাহারের দীপক আচার্য, পার্থসারথি পাল, উজ্জ্বলকান্তি ঘোষ, চারকলগ্রামের চন্দন রায়, সুদীপ মণ্ডলেরাও। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই চশমা চোখে রাশভারী শিক্ষক হিসাবে ছাত্রমহলে পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু এ দিন সেই গাম্ভীর্যের বেড়াটুকু ভেঙে যায়। বিপক্ষের গোলরক্ষককে ভেদ করে সুশান্তবাবুর জোরালো শট জালে ঢুকতেই নিত্যানন্দবাবু, সমীরবাবুরা নিজেদের জড়িয়ে ধরেন। তাঁরা বলেন, ‘‘সেই ছাত্রাবস্থায় কবে বল খেলেছি। কিন্তু এ দিন মাঠে নেমে বয়সের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল ছেলেবেলাটাই যেন ফিরে এসেছে।’’ অন্য দিকে, হারের পরে চন্দনবাবু, সুদীপবাবুদের মতো তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকেরা বললেন, ‘‘স্যারেদের পায়ের কাজ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, একসময় ওঁরা ভালই মাঠ কাঁপাতেন।’’

আর দর্শক আসনে বসে উৎসাহে ফুটতে দেখা গেল কীর্ণাহার হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র দীপ মণ্ডল, নবম শ্রেণির নবীনচন্দ্র ঘোষদের। তারা বলছে, ‘‘স্যারদের খেলা দেখে খুব মজা পেয়েছি। তবে আমাদের স্কুল হেরে যাওয়ায় একটু মনখারাপ।’’ প্রতিযোগিতা জেতার কথা মাথায় রেখে পরের বছর স্যারেদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করার কথা ভাবছে ওরা!

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রীড়া কমিটির সম্পাদক প্রভাকর বন্দ্যোপাধ্যায়, স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক শুভাশিস দত্তরা বলেন, ‘‘বিভিন্ন স্কুলের সঙ্গে সংহতি রক্ষার পাশাপাশি ফুটবল খেলা সম্পর্কে পড়ুয়াদের আগ্রহী করতেই এই উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Veteran teachers Football match
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE