Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
khayrasole

সুদীপ্তের সমর্থনে চিঠি সাত অঞ্চল সভাপতির

বস্তুত, জেলা তৃণমূলের মাথাব্যথার নাম খয়রাশোল—এমনটা আড়ালে বলে থাকেন কর্মীরাই।

সুদীপ্ত ঘোষ (বাঁ দিকে) কোর কমিটির সদস্য, কাঞ্চন অধিকারী (ডান দিকে) ব্লক সভাপতি।

সুদীপ্ত ঘোষ (বাঁ দিকে) কোর কমিটির সদস্য, কাঞ্চন অধিকারী (ডান দিকে) ব্লক সভাপতি।

দয়াল সেনগুপ্ত 
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫৫
Share: Save:

খয়রাশোল নিয়ে তৃণমূলের ‘সমস্যা’ যেন মিটেও মিটছে না। ব্লক সভাপতির অভিযোগ পেয়ে খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক সুদীপ্ত ঘোষকে সরানোর পরেও সেখানে শাসকদলের ‘দ্বন্দ্ব’ সামনে এসেছে। সুদীপ্তর সমর্থনে চিঠি দিয়েছেন সাত-সাত জন অঞ্চল সভাপতি।

বস্তুত, জেলা তৃণমূলের মাথাব্যথার নাম খয়রাশোল—এমনটা আড়ালে বলে থাকেন কর্মীরাই। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ৬টিতেই বিজেপির তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে ছিল শাসকদল। জেলার মধ্যে একমাত্র হাতছাড়া হয়েছে দুবরাজপুর বিধানসভা (খয়রাশোল এর অন্তর্গত) আসনটিও। এই অবস্থায় ‘কোন্দল’ এতটাই বেড়েছে সেখানে যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল কী হয়, তা নিয়েও স্থানীয় কর্মীদের মনে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

শুক্রবার জেলার নেতাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বৈঠকের পরে সেই ‘দ্বন্দ্ব’ আরও প্রকট হয়েছে বলে অভিযোগ। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন বৈঠকে খয়রাশোলের প্রসঙ্গ উঠতেই ব্লক তৃণমূলর সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী দলনেত্রীকে জানান, পর্যবেক্ষক হিসাবে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষের জন্য তাঁর ‘স্বাধীন ভাবে’ কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এর পরেই মমতা সুদীপ্তকে খয়রাোলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। তবে, বোলপুরের ওই নেতাকে জেলার কোর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।

কিন্তু বিষয়টি এখানেই মিটে যায়নি। তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৈঠকের পরে পরে খয়রাশোলের ১০টি অঞ্চলের মধ্যে সাতটির অঞ্চল সভাপতি ব্লক সভাপতির মতের বিরুদ্ধে গিয়ে সুদীপ্তকেই পর্যবেক্ষক রাখার আর্জি জানিয়ে সুব্রত বক্সীকে চিঠি দেন। যদিও কাঞ্চন অধিকারীর অনুগামীদের দাবি, এই কাজ ওই সাত জনকে দিয়ে ‘করিয়ে নেওয়া’ হয়েছে। রবিবার জেলা কমিটির বৈঠকের আগে, শাখা সংগঠনের নেতাদের তরফেও সুদীপ্তকে পর্যবেক্ষক রাখার আর্জি গিয়েছে বলে খবর।

কাঞ্চন বলেন, ‘‘সব ঠিক হয়ে যাবে। দিদির কথাই শেষ কথা।’’ আর সুদীপ্তর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। জেলা সভাপতির (অনুব্রত মণ্ডল) নির্দেশে ওই ব্লকের সংগঠন দেখছিলাম। আমার সাংগঠনিক কাজে খুশি হয়ে যদি আমাকে কেউ চান, তা হলে আবার যাব।’’ দল সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, সুদীপ্তর সমর্থনে সাত অঞ্চল সভাপতির চিঠি জমা পড়েছে যখন, তার মাঝে বোলপুর থেকে খয়রাশোলে পাঠানো হয়েছে দুবরাজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক নরেশ বাউড়িকে।

ফলে, খয়রাশোলে তৃণমূলের ‘কোন্দল’ এখনই মেটার নয় বলেই আড়ালে মানছেন সেখানকার অনেক নেতা। দলেরই একটি সূত্র বলছে, দুর্নীতি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, মানুষের সঙ্গে প্রকৃত যোগযোগ না-রাখা, হিংসা-বোমাবাজি সহ একগুচ্ছ কারণে ৬ হাজারেরও বেশি ভোটে গত বিধানসভা নির্বাচনে পিছিয়ে ছিল শাসকদল। ব্লকের তৃণমূল কর্মীদের দাবি, সংগঠন মজবুত করার দায়িত্বে সুদীপ্ত ঘোষকে আনার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে ব্লক সভাপতির সংঘাত বাড়ছিল। সূত্রের খবর, অনুব্রতহীন জেলায় কোর কমিটির দুই সদস্যের এক জন সুদীপ্তকে সামনে রাখছিলেন। কোর কমিটির আর এক সদস্যের ‘সমর্থন’ ছিল ব্লক সভাপতি কাঞ্চনের দিকে। ব্লক সভাপতি ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, খয়রাশোলের সংগঠনে তিনি ক্রমে ‘ব্রাত্য’ হয়ে পড়ছিলেন। সে কথাই দলনেত্রীকে জানিয়েছেন। অন্য দিকে, স্থানীয় কর্মীদের অনেকেরই দাবি, এ রকম চললে ব্লকের ৩টি জেলা পরিষদ আসন, ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১০টি পঞ্চায়েতের ১৪১টি আসনে লড়তে সমস্যা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

khayrasole TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE