Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাঁকুড়া কি সূর্যের কাছে! চর্চা

পূর্বাভাসে ছিল আতঙ্ক। উল্টে সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার পারদ কিছুটা নামল বাঁকুড়ায়। কিন্তু আগুনে বাতাসের জ্বালা থেকে রেহাই মিলল না মোটেই।

বাতাসে আগুনের হলকা। বিষ্ণুপুরে বাইপাসে ভগৎ সিং মোড়ের কাছে রাস্তায় মঙ্গলবার মরীচিকা ধরা পড়ল শুভ্র মিত্রের ক্যামেরায়।

বাতাসে আগুনের হলকা। বিষ্ণুপুরে বাইপাসে ভগৎ সিং মোড়ের কাছে রাস্তায় মঙ্গলবার মরীচিকা ধরা পড়ল শুভ্র মিত্রের ক্যামেরায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৩
Share: Save:

পূর্বাভাসে ছিল আতঙ্ক। উল্টে সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার পারদ কিছুটা নামল বাঁকুড়ায়। কিন্তু আগুনে বাতাসের জ্বালা থেকে রেহাই মিলল না মোটেই।

সোমবার আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড করা স্থানগুলির মধ্যে রাজ্যের সব থেকে বেশি তাপমাত্রা ধরা পড়েছিল বাঁকুড়ায়, পারদ ড়েছিল ৪৫.২ ডিগ্রি। পূর্বাভাস ছিল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছবে ৪৭-এ। যদিও দিনের শেষে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরুলিয়াতেও সোমবার যা ছিল (৪২.১), এ দিন তার কিছুটা কমেছে (৪০.৩)। যদিও বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, তাপমাত্রা কমলেও গরম বাতাসের দাপটের কোনও হেরফের তাঁদের অবশ্য মালুম হয়নি। সোমবারের মতোই রাস্তাঘাট, ট্রেন-বাস— সর্বত্রই ছিল সুনসান অবস্থা।

দৃশ্য ১: সকাল ১০টা। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা মোড়। রাস্তায় মেরেকেটে ১৫-২০ জন পথচারী, কারও মুখে রুমাল, কারও মাথা জড়ানো গামছা তা তোয়ালেতে। সাইকেল, মোটরবাইক থাকলেও তা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও খদ্দেরদের দেখা নেই বললেই চলে।

দৃশ্য ২: সকাল ১১টা। খাতড়ার করালী মোড়ে বাসস্ট্যান্ডে দু’টি বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। করালী মোড় থেকে দাসের মোড়, সিমলাপাল রোড, কংসাবতী রোড প্রায় ফাঁকা। ১৫-২০ জন পথচারী হাঁটছেন। দেড়-দু’মিনিট অন্তর একটা করে মোটরবাইক পার হচ্ছে। বাসের অনেক সিট ফাঁকা। নেই যাত্রীও।

দৃশ্য ৩: সকাল সাড়ে ১১টা। বিষ্ণুপুর স্টেশন চত্বর। প্লাটফর্মে গুটি কয়েকজন যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায়। আদ্রাগামী আরণ্যক এক্সপ্রেস প্রায় ফাঁকা অবস্থায় স্টেশনে ঢুকল। ট্রেন থেকে নেমেই যাত্রীদের অনেকে ছুটলেন স্টেশনের ঠান্ডা পানীয় জল পান করতে, হাত মুখ ধুতে।

দৃশ্য ৪: দুপুর সাড়ে ৩টে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া রুটের একটি বাস এসে থামল হুড়ার লালপুর মোড়ে। বাসে উঠেই চমক! অধিকাংশ সিটই ফাঁকা। যাত্রী মেরেকেটে জনা পনেরো। বাসচালক থেকে খালাসি এমনকী কিছু যাত্রীর মুখে ভিজে কাপড়-গামছা দিয়ে জড়ানো।

বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও খাতড়া শহরের ব্যস্ততম এই এলাকাগুলি কয়েক দিন আগেও এই সময়ে মানুষের ভিড়ে গমগম করে। গরম পড়তেই ব্যস্ত এলাকাও কার্যত জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে। এপ্রিলের শুরুতেই গরম এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে অনেকেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ছবি দিয়ে রসিকতা করছেন, ‘বাঁকুড়া মনে হয় এ বার সূর্যের অনেক কাছে চলে গিয়েছে রে’।

এ দিন অশোক ষষ্ঠী উপলক্ষে সকালের দিকে গৃহিণীরা কেনা কাটার জন্য বাজারে, পুজো দেওয়ার জন্য মন্দিরে ভিড় করেছিলেন। কিন্তু বেলা যত গড়িয়েছে, চড়া রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লু-র দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠল বাসের নিত্যযাত্রী, গাড়িচালক থেকে পথচারী সহ- বাড়িতে থাকা লোকজনেরও।

বাঁকুড়া শহরের ব্যস্ততম এলাকা কলেজ মোড়, মাচানতলা, তামলিবাঁধ, ভৈরবস্থান, গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড, নতুনগঞ্জ, রেলস্টেশন প্রভৃতি এলাকা বেলা ১১টাতেই ফাঁকা-ফাঁকা চেহারা নেয়। রাস্তায় গাড়ি চলাচল করলেও সে ভাবে যাত্রীদের দেখা যায়নি। অথচ অন্যান্য দিনে সাইকেল, রিকশা, টোটো, অটো সহ ছোট গাড়ি ও মানুষের জমজমাট ভিড়ে রাস্তা পেরোতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। এ দিন সেই চেনা ছবিটাই যেন উধাও। যাঁরা নিতান্তই প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন আপাদমস্তক ঢেকে রেখেছিলেন। দুপুরে যাত্রীর তেমন দেখা মেলেনি বাসেও। পুরুলিয়ায় বাঁকুড়াগামী একটি বেসরকারি বাসের কন্ডাক্টর শ্যামল দত্ত বলেন, ‘‘এই দেখুন বাস ফাঁকা। বেলা একটু বাড়লেই লোকজন বেরোচ্ছেই না।’’ পুরুলিয়া-বিষ্ণুপুর রুটের আরও একটি বাসের কন্ডাক্টর প্রবোধ কুণ্ডুর কথায়, ‘‘রুটে বাস নামানোর খরচই উঠছে না।’’

বাঁকুড়ার গরম এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কম যাচ্ছে না পুরুলিয়াও।
তবে তাপ-যুদ্ধে পড়শি জেলার থেকে এখনও পিছিয়ে। পুরুলিয়া শহরে সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

এর সঙ্গে তফাত ছিল না খাতড়া, বিষ্ণুপুর, বড়জোড়া, কোতুলপুর, আদ্রা, রঘুনাথপুর, মানবাজার, ঝালদা প্রভৃতি এলাকার। সরকারি ও সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে গরমের জন্য পড়াশোনা বন্ধ থাকায় খুদে পড়ুয়ারা রেহাই পেয়েছে। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এ দিনের গরম তাঁদের স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। বাঁকুড়ার শাসকদলের এক নেতার আক্ষেপ, “ভেবেছিলাম এ বার কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। কর্মীদের সঙ্গে একটু গল্প গুজব করব। কিন্তু গরমের চোটে বাড়ি থেকে বের হতেই পারিনি। বাড়িতেই কুলার চালিয়ে সারাটা দিন কাটালাম।” নেতারা আয়েশে বাড়িতে কাটালেও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের অবশ্য বাড়ির বাইরে বের হতেই হয়েছে। গরমে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাই বেশি। বাঁকুড়ার রাস্তায় রিকশা টানতে টানতে এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘লোক না বইলে খাব কী? গরমের জন্য তো খালি পেটে থাকা যায় না।’’

গরমের জন্য সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও হাসি ফুটেছে ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম, ডাব বিক্রেতাদের মুখে। এক ধাক্কায় বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খুশি তাঁরা। তাঁদের কথায়, “অসহ্য গরম। অনেকেই তাই ঠান্ডা খাচ্ছেন। বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। আমাদের বাড়তি লাভের মুখ দেখাচ্ছে এই গরমই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

heat wave summer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE