Advertisement
E-Paper

সর্বনাশের গরমেই পৌষমাস পুরুলিয়ার তরমুজ চাষিদের

গরমে জেরবার জেলাবাসী। শুকিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা সব্জি খেত। নানা প্রান্তে তীব্র জল-সঙ্কট। এরই মধ্যে দেখা গেল অন্য ছবি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তরমুজ ফলিয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। তাদের মুখে চওড়া হাসি।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৩
মানপুর গ্রামে কাছে কুমারী নদীর শুকনো খাত ছেয়ে গিয়েছে সবুজে। —নিজস্ব চিত্র

মানপুর গ্রামে কাছে কুমারী নদীর শুকনো খাত ছেয়ে গিয়েছে সবুজে। —নিজস্ব চিত্র

গরমে জেরবার জেলাবাসী। শুকিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা সব্জি খেত। নানা প্রান্তে তীব্র জল-সঙ্কট।

এরই মধ্যে দেখা গেল অন্য ছবি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তরমুজ ফলিয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। তাদের মুখে চওড়া হাসি। জানালেন, গরমে তরমুজের ফলন ভাল হচ্ছে। দামও মিলছে ভাল। পুরুলিয়ার মানবাজার, বোরো, বরাবাজার, বলরামপুর থানা এলাকায় নদীর চড়ে এই মরসুমে তরমুজ চাষ করেন চাষিরা।

বোরোর আর মানবাজার থানার সীমানা ঘেঁষে বয়ে চলেছে কুমারী নদী। তার তীরে মানপুর গ্রাম। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল নদীর শুকনো খাত গাছে গাছে সবুজ হয়ে রয়েছে। তরমুজ তুলে এনে এক দিকে জড়ো করছেন চাষিরা। গ্রামের চাষি লাল্টু বাউরি, তরণি বাউরিরা বলেন, ‘‘এ বছর তরমুজের আকারও বড় হচ্ছে। আশা করছি, মরসুম শেষে চাষের খরচ বাদ দিয়ে ভালই লাভ থাকবে।’’ তাঁরা জানান, ঠিক মতো পরিচর্যা করলে এক একটি তরমুজ প্রায় দশ কিলো অবধি ওজনের হতে পারে।

চাষিরা জানান, এই এলাকায় আগে তরমুজের চাষের চল ছিল না। গ্রামের কিছু বাসিন্দা বর্ধমানে শ্রমিকের কাজ করতে যেতেন। সেখানে তাঁরা তরমুজ চাষের পদ্ধতি শিখে গ্রামে ফিরে চাষ শুরু করেন। সে আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগের কথা। নদীর চরে অল্প জায়গায় বুনেছিলেন তরমুজের বীজ। মানবাজারের ব্লক কৃষি অধিকর্তা শান্তিগোপাল কর্মকার বলেন, ‘‘আগে সব্জি চাষিরা ভিন জেলা থেকে তরমুজ কিনে এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন। এখন নদীর চর ধরে জেলার অনেক জায়গায় চাষ শুরু হয়েছে।’’ এখন প্রতিদিন এখান থেকেই লরিতে করে জেলার অন্য জায়গায় তরমুজ চালান যায়। কৃষি অধিকর্তা জানান, তরমুজের পাশাপাশি মরসুমি নানা সব্জি এবং শসা চাষ হচ্ছে নদীর তীরের জমিতে। তবে তরমুজ চাষের এলাকা প্রতি বছর বেড়ে চলেছে। বিকল্প চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।

সাধারনত মাঘ মাসের শুরু থেকে চাষের কাজ শুরু হয়। চাষ হয় নদীর চরের জমিতে। এই সময় নদী শুকিয়ে আসতে থাকে। চাষিরা জানান, নদীর পলি মাটিতে তরমুজ বা শসা চাষ ভাল হয়। সামান্য সারেই জমি তৈরি হয়ে যায়। চাষিদের থেকে জানা গেল, ১০০ গ্রাম তরমুজ বীজের দাম ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা। বিঘা খানেক জমিতে বীজ ছড়ানোর পর সার দিতে হয়। ২৪ কেজি সারের দাম পড়ে ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে জমি তৈরির জন্য ট্রাক্টর এবং নদী থেকে পাম্প চালিয়ে সেচের জল তোলার খরচ। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ পড়ে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় লাভ মেলে গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।

মানবাজারের কুমারী নদীর তীর বরাবর মানপুর, দোলদেড়িয়া, ধানাড়া প্রভৃতি এলাকায় ফি বছর তরমুজ চাষের এলাকা বাড়ছে। দেড় থেকে দু’কিলো ওজনের তরমুজ স্থানীয় বাজারে খুচরো বিক্রি হয় দশ টাকা কিলো দরে। চাষিরা জানালেন, এ বছর ধানবাদ, শিয়ালদা, নদীয়া এবং ঝাড়খণ্ডের মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি করে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামে বসেই ক্যুইন্টাল প্রতি দাম পাওয়া যাচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা। সম্প্রতি বোরো থানার সীমানায় দুয়ারসিনি গ্রামে তরমুজ কিনতে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার সিন্দরি বাজারের ব্যবসায়ী সঞ্জয় গুপ্ত। সিন্দরি বাজারে তাঁর আড়ত রয়েছে। সঞ্জয়বাবু জানান, সেখানে পাইকারি হারে তরমুজের ক্যুইন্টাল প্রতি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা অবধি দাম পাওয়া যায়। সঞ্জয়বাবুর মতো অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীই ভিন রাজ্য থেকে জেলায় এসে তরমুজ নিয়ে যান।

বরাবাজারের অযোধ্যাডি গ্রামের চাষি গম্ভীর মাহাতো বলেন, ‘‘গত বছর শিলা বৃষ্টিতে চাষের খুব ক্ষতি হয়েছিল। তরমুজ বড় হয়নি।’’ ছোট আকারের তরমুজের জন্য ভাল দাম পাওয়া যায় না। তা ছাড়াও শিলা বৃষ্টিতে তরমুজের গায়ে দাগ পড়ে গিয়েছিল। অনেক তরমুজ ফেটেও গিয়েছিল। চাষিরা জানান, সে বার মূলধনের টাকাও ওঠেনি। গত বছর প্রথম দিকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দর উঠলেও পরে ২৫০ টাকা কুইন্টাল দরে ফসল বেচতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই বছর গরম হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে।

Water melon Heat Wave Farmers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy