লোকসভা ভোটে বীরভূমের দুই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে রেকর্ড গড়ার মতো করতে চান বলে জানালেন তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। রবিবার জেলা কোর কমিটির বৈঠকের পরে কাজলের এই বার্তার জেরে লোকসভা ভোটে ‘গা জোয়ারি’ হতে পারে বলে আশঙ্কা করে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
এ দিন বোলপুরে তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে কাজল বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে বীরভূমে দু’টি কেন্দ্রে ২ লক্ষ ভোটের বেশি ব্যবধানে তৃণমূল জয়লাভ করবে। বিরোধীদের জামানত জব্দ হবে। একটু ধৈর্য ধরুন।’’ কাজলের কথায়, ‘‘জয়ের ব্যবধান এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছি, যেটা বাংলার ৪২টা কেন্দ্রে রেকর্ড হবে।’’
তৃণমূল সূত্রে দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হতে না হতেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দল। সংগঠনকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে একাধিক কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে। সেই মতো এ দিন বোলপুরের তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে প্রথমে কোর কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি সাংগঠনিক বৈঠক করা হয়। কিছুক্ষণ পরই কোর কমিটির প্রত্যেক সদস্য-সহ বিধায়ক, পুরপ্রধান, ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি-সহ দলের দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
এ দিনের বৈঠকে কাজল-সহ দলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মাল, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কোর কমিটির প্রত্যেক সদস্যও। তৃণমূল সূত্রে দাবি, সাংগঠনিক বিভিন্ন দিক আলোচনার সঙ্গেই উঠে আসে পঞ্চায়েতে প্রধান, উপপ্রধান নির্বাচনের বিষয়টি।
দলীয় সূত্রে খবর, জেলার ১৪টি জায়গা বাদে বাকি প্রায় সব জায়গাতেই দলের নির্দেশে সহমতের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন করা হয়েছে। এই ১৪টি জায়গায় কেন দলের নির্দেশে সহমতের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন হল না তা নিয়ে দায়িত্ব থাকা সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা নেতৃত্বের কাছে সেই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল লোকসভা নির্বাচনে না থাকলে কী প্রভাব পড়তে পারে সেই প্রশ্নের উত্তরে কাজল বলেন, “বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্বে আছেন সুতরাং কে থাকল, কে গেল দেখে লাভ নেই।” পরক্ষণেই তিনি বলেন, “অনুব্রত আমাদের অভিভাবক, তিনি বীরভূম জেলায় যে দল গঠন করে দিয়ে গিয়েছেন, সেই টিম অনুব্রতই গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজ করেছে। সেই মতো চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও কাজ হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হবে।”
কাজলের মন্তব্য নিয়ে গা জোয়ারির আশঙ্কা করছে বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, এই মন্তব্য সন্ত্রাসের ইঙ্গিত। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, “উনি সন্ত্রাসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তবে এই প্রচেষ্টা কখনওই তাদের সফল হবে না।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “ওরা যে পদ্ধতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন করিয়েছে সেই পদ্ধতিতে ভোট করালে উনি যা বলছেন সেই ব্যবধানেই জয় পাবে তৃণমূল। তবে এতে মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)