গেট আটকে বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের জন্য রাতে উনুনে ফুটছে খিচুড়ি।—নিজস্ব চিত্র।
কে বলবে সরকারি অফিস? অফিসে ঢোকার দরজা আটকে বসে রয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা কবে উঠবেন কেউ জানে না। কিন্তু তাঁদের জন্য সরকারি অফিস চত্বরে মূল দরজা থেকে কিছুটা দূরেই উনুন জ্বালিয়ে খিচুড়ি রান্না চলল। সতরঞ্জি বিছিয়ে অনেকে রাতে সেখানেই ঘুমালেন। শনিবার রাতে এই ছিল পুরুলিয়া প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস চত্বরের ছবি।
রবিবার অবশ্য বাইরে থেকে খাবার কিনে এনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু আন্দোলনের জমি তাঁরা ছাড়ছেন না।
আর এই বিক্ষোভেই কবে ফের টেট-উত্তীর্ণদের কাউন্সেলিং হবে, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
রবিবার ছুটির দিন হলেও পুরুলিয়ায় এ দিনও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসের সামনে টেট-নিয়ে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান অব্যাহত থাকল।
টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি, এই অভিযোগ তুলে শুক্রবার দ্বিতীয় দফার নিয়োগের কাউন্সেলিংয়ের প্রথম দিনে দফতরের প্রধান দরজা আটকে বিক্ষোভ শুরু হয়। সে দিন রাতে বৈঠকে শিক্ষা সংসদের সভাপতি আলোচনায় বসলেও তা সন্তোষজনক না হওয়ায় শনিবারও তাঁরা অবস্থান জারি রাখেন। এই পরিস্থিতিতে ফোন করে টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাউন্সেলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিধানসভায় এ নিয়ে সরব হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো। যদিও সংরক্ষণ বিধি না মানার অভিযোগ ঠিক নয় বলে এ দিনও দাবি করেছেন পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হেমন্ত রজক। এই পরিস্থিতিতে আজ সোমবারও একই ভাবে সংসদ অফিসের দরজা আটকে তাঁরা পড়ে থাকবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’-এর নেতা অজিত মাহাতো। সে দিন শাসকদলের শিক্ষা সেলের কয়েকজন পরিচিত মুখকে আন্দোলনে দেখা গিয়েছিল। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে এ নিয়ে সতর্ক করেন। শনিবার থেকে দলের শিক্ষা সেলের নেতাদের আর অবশ্য চোখে পড়েনি। তবে রবিবার থেকে অজিত মাহাতোরা নিজেদের সংগঠনের পতাকা নিয়েই আন্দোলনের রাশ হাতে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শনিবারই আমরা আদিবাসী কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলাম। এই নিয়োগে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি। তাই সমস্ত বঞ্চিতদেরই প্রতিবাদ জানাতে সামিল হতে ডাকছি।’’
এ দিন সকালে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন মন্ত্রী শান্তিরামবাবুর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি অন্য কর্মসূচিতে থাকায় দেখা হয়নি। তবে শনিবার রাতে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপালবাবুর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কথা হয়েছে। অজিতবাবুর দাবি, ‘‘নেপালবাবুর সমর্থন পেয়েছি। আমরা বড় জমায়েত করে এই প্যানেল বাতিলের দাবিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে স্মারকলিপি দেব। ব্লকে ব্লকে সংরক্ষণ নীতির বিরোধিতায় প্রচার
চালানো হবে।’’
নেপালবাবু বলেন, ‘‘টেটেরে নিয়োগ নিয়ে যে খবর আমার কাছে রয়েছে, তাতে সংরক্ষণ বিধি যে মানা হয়নি তা স্পষ্ট। এক শ্রেণির আমলার জন্যই জেলার কিছু প্রার্থী বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় জবাব চাইব।’’ একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কিন্তু এই জেলার বিধায়ক, সাংসদ তাঁদের তো হস্তক্ষেপ করে এর প্রতিবাদ জানানো দরকার।’’ এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি বলেন, ‘‘শুক্রবার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে খোদ রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কথা হয়েছে। সেদিন তিনি আন্দোলনকারীদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তাছাড়া এই প্যানেল রাজ্য থেকে হয়েছে। জেলা থেকে হয়নি।’’
এ দিকে, কাউন্সিলং আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন টেট-উত্তীর্ণেরা। তাঁরাও দূরদূরান্ত থেকে সংসদ অফিস চত্বরে এসে নিয়মিত খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন। কবে থেকে ফোনের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাউন্সেলিং করা হবে? তাও স্পষ্ট করতে পারেননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘আগে তো অফিস খুলুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy