Advertisement
১৮ মে ২০২৪

লাভপুরে বৃদ্ধার মৃত্যু, তরজা শুরু দুই দলের

বউমার নামে থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন শাশুড়ি। পরে সেই বৃদ্ধার মৃত্যু হল হাসপাতালে। ঘটনাস্থল, লাভপুর। ভোটের বীরভূমে এই ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। সিপিএমের দাবি, অভিযোগ জানাতে যাওয়া ওই বৃদ্ধাকে লাভপুর থানার ওসি বলে দেন, তিনি সিপিএম সমর্থক হওয়ায় তাঁর অভিযোগ নেওয়া হবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

বউমার নামে থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন শাশুড়ি। পরে সেই বৃদ্ধার মৃত্যু হল হাসপাতালে।

ঘটনাস্থল, লাভপুর। ভোটের বীরভূমে এই ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। সিপিএমের দাবি, অভিযোগ জানাতে যাওয়া ওই বৃদ্ধাকে লাভপুর থানার ওসি বলে দেন, তিনি সিপিএম সমর্থক হওয়ায় তাঁর অভিযোগ নেওয়া হবে না। ভোটের পরে দেখা যাবে। বারবার বলাতেও কাজ না হওয়ায় পূর্ণিমা মণ্ডল (৬০) নামে ওই বৃদ্ধা ক্ষোভে হতাশায় থানা চত্বরেই বিষ খেয়ে নেন। বৃহস্পতিবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে তিনি মারা যান। সিপিএম নেতৃত্বের আরও দাবি, মৃত্যুর আগে তাঁদের সামনেই লিখিত অভিযোগে টিপসই দিয়ে যান ওই বৃদ্ধা। সেই অভিযোগ বিডিও-র কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে এ দিনই লাভপুরের ওসিকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মৃতার বাড়ি লাভপুরের আরার গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে পূর্ণিমাদেবীর স্বামীর মৃত্যু হয়। একমাত্র ছেলে ও বউমার সংসারে থাকতেন। কিছু জমিজমাও ছিল বৃদ্ধার নামে। ছেলে কাজল ও তাঁর স্ত্রী মিঠু এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। অভিযোগ, ওই বৃদ্ধার সম্পত্তি হাতানোর জন্য কিছুদিন ধরে বউমা তাঁর উপরে নির্যাতন চালাতেন। বুধবার নির্যাতনের মাত্রা চরমে ওঠে।

সিপিএমের লাভপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক মানিক মণ্ডলের দাবি, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় ওই বৃদ্ধা তাঁদের জানান, বুধবার বউমার অত্যাচার সইতে না পেরে তিনি বলেছিলেন, ‘দাঁড়া সিপিএমকে ভোট দিচ্ছি। দিয়ে তোদের ব্যবস্থা করছি।’ তার পরেই তিনি থানায় যান নালিশ ঠুকতে। ওসি দেবাশিস ঘোষ সব শুনে বৃদ্ধার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চান। বৃদ্ধা নিজেকে সিপিএম সমর্থক হিসেবে দাবি করেন। মানিকবাবুর দাবি, ওসি বৃদ্ধা কে বলেন, ‘সিপিএম করেন। সিপিএম যারা করে, তাদের বিচার হবে না। বাড়ি যান। ভোটের পর আসুন।’ মানিকবাবুর কথায়, ‘‘বৃদ্ধা ওসি-কে বারবার বলেন, বউমা তাঁকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা না করলে, তিনি কী করে বাড়ি ফিরবেন। কোথায় যাবেন। তাতেও ওসি কিছু না করায় ওই বৃদ্ধা থানা চত্বরেই, বাড়ি থেকে আনা বিষ খান বলে আমাদের জানিয়েছেন।’’

সূত্রের খবর, পুলিশ কর্মীরাই পূর্ণিমাদেবীকে প্রথমে লাভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান। খবর পেয়ে সিপিএম নেতারা সেখানে যান। বৃদ্ধার ‘বক্তব্য’ অভিযোগ আকারে লেখার পরে তাতে তাঁর টিপছাপ নেওয়া হয়। অভিযোগপত্রটি বুধবার বিকেলে বিডিও-র কাছে জমা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃদ্ধাকে বোলপুর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ তিনি মারা যান।

ওই ঘটনার পরেই, ওসির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে সিপিএম। মানিকবাবুর অভিযোগ, ‘‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে তৃণমূলের হয় সব ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব করাই তাঁর কাজ। এক জন বৃদ্ধাও যে বিচার চাইতে গিয়ে রাজনৈতিক দলাদলির শিকার হবেন, তা মানা যায় না। আমরা আগেই ওসির অপসারণ চেয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশনের কাছে আবারও চাইব।’’

সিপিএম এ কথা বললেও কিছু প্রশ্ন উঠছে। কেন ওই বৃদ্ধার ‘বয়ান’ অভিযোগ আকারে নথিভুক্ত সময় সিপিএম নেতারা গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক বা পুলিশকর্মীদের ডাকেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী। যা শুনে সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, যে ওসি এক অসহায় বৃদ্ধার অভিযোগটুকুও নিতে পারেন না, তিনি আদৌ হাসপাতালে ‘বয়ান’ নথিভুক্ত করতে আসতেন না। তাই তাঁকে ডাকা হয়নি।

তরুণবাবুর দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। নিতান্তই পারিবারিক ব্যাপার। সিপিএমের লোকেরা রাজনৈতিক রং দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নিজেরাই টিপ ছাপ দিয়ে ওই অভিযোগ বৃদ্ধার বলে চালাছে।’’ পূর্ণিমাদেবীর ছেলে ও বউমাও অত্যাচার চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা এ দিন বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল করি ঠিকই। কিন্তু, ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। আসলে মা আমাদের কিছু সম্পত্তি অন্যকে বিক্রি করে দিতে চাইছিলেন। আমরা আপত্তি করতেই উনি রাগ করে থানায় গিয়েছিলেন। অশান্তি সব সংসারেই হয়। কিন্তু এমনটা যে হবে তা ভাবতে পারিনি।’’

ওসি দেবাশিসবাবুর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। পাওয়া যায়নি জেলা পুলিশ সুপারকেও। কথা বলতে চাননি লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস। তবে, অভিযোগপত্রটি জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

woman's death Political clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE