Advertisement
E-Paper

খনি খুলতে পথে শ্রমিক, ব্যবসায়ীরা

গত মাসের শেষ সপ্তাহে এই কয়লাখনি পরিদর্শন করেন ডিজিএমএসের পূর্বাঞ্চলের ডিরেক্টর এন শর্মা ও ডেপুটি ডিরেক্টর এম কে সাহু।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:২০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সত্তর বছরের খনিতে রাতারাতি কয়লা তোলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে না তো? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ায়। তাই আর সময় নষ্ট ন করে, অবৈধ কয়লা খাদানের সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত যাতে ওই খনির কাজ শুরু করা হয়, সেই দাবিতে এক জোটে আন্দোলনে নেমে পড়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।

দলীয় ঝাণ্ডা সরিয়ে ‘পারবেলিয়া কয়লা খনি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে মঙ্গলবার থেকেই কয়লাখনির সামনে শুরু হয়েছে ধর্না, অবস্থান, বিক্ষোভ। পাশে দাঁড়িয়েছে দলও। এসইউসি নেতা নবনী চক্রবর্তী থেকে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব, কংগ্রেসের শান্ত চট্টোপাধ্যায় সকলেই বলছেন— ‘‘কোনও ভাবেই ইসিএলের কয়লাখনি বন্ধ করা চলবে না। প্রয়োজনে যতদূর যাওয়ার, আমরা যাব।” লক্ষ্যণীয় ভাবে এই আন্দোলনে সামিল হয়েছে এলাকার ব্যবসায়ীরাও।

নিতুড়িয়ার দুই কয়লাখনির মধ্যে অন্যতম এই পারবেলিয়া কয়লাখনিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে কর্মী ও শ্রমিকদের কয়লাখনির মধ্যে নামতে বারণ করে নির্দেশ জারি করেছে ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইনস সেফটি (ডিজিএমএস)। গত মাসের শেষ সপ্তাহে এই কয়লাখনি পরিদর্শন করেন ডিজিএমএসের পূর্বাঞ্চলের ডিরেক্টর এন শর্মা ও ডেপুটি ডিরেক্টর এম কে সাহু। রিপোর্টে তাঁরা জানিয়েছেন, কয়লাখনির সঙ্গে অবৈধ কয়লা খাদানের সংযোগ ঘটেছে। দুষ্কৃতীরা খনির কয়লা তুলে সিমেন্টের বস্তায় ভরে রেখেছিল। এমনকী কয়লাখনির পিলারের কিছুটাও তারা কেটে কয়লা বের করেছে। তারপরেই নিরাপত্তাজনিত কারণে ডিজিএমএসের নির্দেশ মতো কয়লাখনিতে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে ইসিএল।

পুজোর মুখে এই উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ জারি হয়। পুজো মিটতেই জোট বেঁধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার দু’দিনেই কয়লাখনির গেটের সামনে মিলিত ভাবে ধর্না, অবস্থান করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতা কর্মীরা। শ্রমিক সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলেছে, ইসিএলের এলাকায় সিআইএসএফ-এর নিরাপত্তায় থাকার কথা। তাহলে কী ভাবে সেখানে অবৈধ খাদান চলল?

ওই নির্দেশে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। এসইউসি-র শ্রমিক সংগঠনের নেতা নবনী চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘বছর ১০-১২ বছর আগে এ ভাবেই নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়েই নিতুড়িয়ার আরেকটি কয়লাখনি ভামুরিয়াতে প্রথমে উৎপাদন বন্ধ করেছিল ইসিএল। পরে কয়লাখনিটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পারবেলিয়াতে তেমনই করতে চাইছে ইসিএল।’’ তৃণমূল নেতা শান্তিভূষণপ্রসাদবাবুর দাবি, ‘‘আমরা ওই বেআইনি খাদানগুলি বন্ধে উদ্যোগী হয়েছি। খাদান বন্ধ করলেই কিন্তু ইসিএলকে ফের কয়লাখনিতে উৎপাদন শুরু করতে হবে।”

অন্য দিকে, কয়লাখনি বন্ধ হলে এলাকার অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কিত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্বাধীনতার সমসাময়িক সময়ে শুরু হওয়া এই কয়লাখনি সত্তরের দশকের প্রথম দিকে অধিগ্রহণ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই কয়লাখনিতে সাড়ে আটশোর কাছাকাছি কর্মী কাজ করেন। পারবেলিয়া-সহ পাশের নিতুড়িয়া, শালতোড়, হিজুলি, রানিপুরের মতো ছ’-সাতটি গ্রাম এই কয়লাখনির উপরে নির্ভরশীল। ওই এলাকার বাজারের হাজারখানেক দোকান চলে কয়লাখনির কর্মী ও তাঁদের পরিজনদের ভরসায়। কয়লাখনিতে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় স্বভাবতই আশঙ্কিত স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা।

মঙ্গলবার কয়লাখনিতে উৎপাদন শুরু করার দাবিতে এলাকায় মিছিলে পা মিলিয়েছেন বহু ব্যবসায়ীও। পারবেলিয়া বাজার কমিটির কর্মকর্তা দোলন সরকার, সন্তোষ সাহুরা বলেন, ‘‘পারবেলিয়া কয়লাখনি বন্ধ হলে ওই এলাকা-সহ আশপাশের গ্রামগুলির ব্যবসা পরোপুরি লাটে উঠবে। কোনও ভাবেই যাতে কয়লাখনি বন্ধ না হয় সেই দাবিতে তাই সামিল হয়েছি।”

আন্দোলনে সামিল হওয়া শ্রমিক সংগঠন বা ব্যবসায়ীদের মনোবল বাড়িয়েছে প্রশাসনের ভূমিকা। উৎপাদন বন্ধ হওয়ার কথা শোনার পরেই পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় যোগাযোগ করেছেন ইসিএলের সাথে। কয়লাখনি যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য ইসিএলের উপরে চাপ বাড়িয়েছে প্রশাসন। পাশাপাশি কয়লাখনির পাশেই ইসিএলের লিজহোল্ড এলাকার মধ্যে থাকা জায়গায় কী ভাবে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কয়লাখাদান চলল, সেই বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কয়লাখনির নিরাপত্তা-সহ অন্যান্য বিষয় দেখার জন্য সিআইএসএফ ওখানে মোতায়েন আছে। তাদের চোখ এড়িয়ে কী ভাবে কয়লাখনির ঠিক পাশেই অবৈধ খাদান চলছিল?’’ তবে ইসিএলের ব্যাখ্যা, বিস্তীর্ণ এলাকা ইসিএলের লিজহোল্ড এলাকার মধ্যে আছে। সেখানকার খুঁটিনাটি তাদের বা সিআইএসএফের পক্ষে সবসময় দেখা সম্ভব হয় না। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ঘটনাটি শোনার পরেই ইসিএলের সঙ্গে কথা বলেছি। কোনও ভাবেই কয়লাখনি যাতে বন্ধ না করা হয়, তা দেখতে বলেছি।’’

কয়লাখনির পাশের গ্রাম পারবলিয়াতে অবৈধ কয়লাখাদানগুলি বন্ধ করার দাবিতে মঙ্গলবার ইসিএলের অতিথিশালায় বৈঠক হয়। আলোচনায় স্থির হয়েছে, কোন এলাকার অবৈধ কয়লাখাদানের সাথে কয়লাখনির সংযোগ হয়েছে, সেটা ইসিএল চিহ্নিত করবে। সেই মতো খাদান ভরাট করবে পুলিশ ও প্রশাসন। সূত্রের খবর বুধবার দুপুর থেকেই কয়েকটি খাদান ভরাট করার কাজ শুরু করা হয়েছে। ইসিএলের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘উৎপাদন বন্ধ করা মানেই কয়লাখনি বন্ধ করে দেওয়া হবে, বিষয়টি আদৌও এমন নয়। ডিজিএমএসের নির্দেশ মতো আপাতত খনির মধ্যে শ্রমিকদের নামতে বারণ করা হয়েছে।’’

Coal mine Coal Businessman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy