সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন শাসকদলের নেতা ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। এমন অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হল দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের কুখুটিয়া গ্রাম।
কেন এমন অনৈতিক আচরণ তাঁরা করছেন, তার কৈফিয়ত চাইতে শাসকদলের স্থানীয় জনা চারেক তৃণমূল নেতার বাড়িতে চড়াও হন গ্রামের মহিলা-পুরুষেরা। বুধবার সন্ধ্যার ঘটনা। ঘটনাস্থালে ছুটে আসতে হয় পুলিশ বাহিনীকে। বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ, গ্রামে শাসকদলের হয়ে কয়েক জন কর্তৃত্ব শুরু করেছেন। ইচ্ছেমতো কাজ করছেন। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের বাগদি পাড়ায় মনসা মন্দির ঘেঁষা একটি চাতাল তৈরির টাকা বছরখানেক ধরে তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি সুব্রত দত্তের বাবার অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকলেও সে কাজ এখনও হয়নি।
‘আমার ফসল আমার গোলা’ এই সরকারি প্রকল্পে গরিব চাষিদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকলেও, সেই টাকা স্থানীয় নেতা স্বপন রুজ, সৌমেন দত্ত এবং ঝুমা সেনদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। অথচ, তাঁরা কেউই গরিব চাষি নন।
গ্রামের মানুষের আরও অভিযোগ, স্থানীয় জব সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা সৌমেন দত্ত ১০০ দিনের কাজে গাছের চারা তৈরির নার্সারি করার সুযোগ পেলেও গ্রামের কোনও জবকার্জধারীকে কাজে লাগাননি। সব কাজই করেছেন বাড়ির লোকজন। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষ কী দোষ করলাম?’’ বিক্ষোভে সামিল গ্রামের বাসিন্দারা বিষয়টি ফোনে বিডিওকে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। গ্রামের মানুষের বিক্ষোভে নৈতিক সমর্থন ছিল বিজেপি এবং তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীরও।
যদিও ঘটনার পরে গ্রামের কয়েক জনের বিরুদ্ধে তাঁদের হেনস্থা করার অভিযোগ এনেছেন শাসকদলের নেতারাই।
তাঁদের মিলিত দাবি, ‘‘কোনও অন্যায় তাঁরা করেননি। অকারণে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়েছেন গ্রামের মানুষ।’’
তাঁদের ভুল বুঝিয়ে এমনটা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের। বুথ সভাপতি সুব্রত দত্তের বক্তব্য, ‘‘সরকারি প্রকল্পের টাকা এসেছে। কিন্তু, কিছু মানুষ চাইছিলেন টাকাটা তাঁদের দিয়ে দেওয়া হোক। তবে, চাতাল করতে কোনও আপত্তি নেই।’’ সৌমেন দত্ত, স্বপন রুজ, ঝুমা সেনরা বলছেন, ‘‘কারও নামেই আমার ফসল আমার গোলার সরকারি টাকা আসেনি।’’ ঝুমাদেবীর কথায়, ‘‘সে সব না জেনেই আমাকে চূড়ান্ত হেনস্থা করা হয়েছে।’’
তবে সরকারি প্রকল্পে নার্সারি গড়ে বাড়ির লোকজনকে কাজ দেওয়া হয়েছে, তা মেনেছেন সৌমেনবাবু। তবে তাঁর ব্যাখ্যা, এতে প্রয়োজন ছিল জনা আটেক শ্রমিকের। গোটা গ্রামের মানুষকে তাতে কাজে লাগানো যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে কাজ করে পরে পয়সা পাওয়া যাবে এই শর্তে গ্রামের পাঁচ জন, আর বাকি কাজ পরিবারের লোকেরা করেছে। এতে দোষের কী আছে।’’
দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি রবীন বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হবে কিনা তা নিয়ে দ্বন্দ্বে শাসকদলের একাংশ। কারণ এমন মনে করছে তারা, তাতে গ্রামের একটা বড় অংশ বিপক্ষে চলে যেতে পারে।
বিজেপির স্থানীয় নেতা শ্রাবণ ধীবর বলছেন, ‘‘গ্রামের মানুষের ক্ষোভ, অভিযোগ সবই সত্যি। শুনেছি, ওঁরা অভিযোগ তুলে নেবেন। নইলে পুলিশের কাছে গিয়ে পাল্টা অভিযোগ আমরা জানাব।’’
দুবরাজপুরের বিডিও বনমালি রায় বলেন, ‘‘মৌখিক আভিযোগ পেয়েছি। ছুটি শেষে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy