E-Paper

বৃষ্টির ঘাটতিতে বীজতলা শুকোচ্ছে, চিন্তা ধানচাষ নিয়ে

জুনের শেষে দিকে জেলায় ভাল বৃষ্টি হওয়ায় বীজতলা তৈরির সুযোগ পেয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু জুলাই থেকে থমকে গিয়েছে ধারাপাত। ফলে, শুরু হয়েও এগোচ্ছে না ধানচাষ।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়  , অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩ ০৯:১৬
জলের অভাবে ধানের বীজতলায় জমি ফেটে গেছে।সিউড়ির লম্বোদরপুর গ্রামে।

জলের অভাবে ধানের বীজতলায় জমি ফেটে গেছে।সিউড়ির লম্বোদরপুর গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধান বসানোর আদর্শ সময়। আর তখনই বৃষ্টির অভাবে ভুগছে জেলা। জুলাইয়ে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে গড়ের থেকে ৫০ শতাংশ কম। আগের বছর বৃষ্টির অভাবে জেলা জুড়ে ধান চাষ মার খেয়েছিল। তাই এ বারও চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কৃষি দফতরের মতে, জুলাইয়ের আগামী দু’সপ্তাহ ধান চাষিদের জন্য বৃষ্টিপাত খুবই জরুরি।

জুনের শেষে দিকে জেলায় ভাল বৃষ্টি হওয়ায় বীজতলা তৈরির সুযোগ পেয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু জুলাই থেকে থমকে গিয়েছে ধারাপাত। ফলে, শুরু হয়েও এগোচ্ছে না ধানচাষ। বৃষ্টির অভাবে বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই পরে ধান চাষ করতে গেলে আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে চাষিদের।

কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, জুনেও বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ছিল। জুনে জেলায় গড়ে ২৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘাটতি ছিল ৮ শতাংশ। জুলাইয়ে গড়ে ৩২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ১৩ জুলাই পর্যন্ত গড়ে বৃষ্টিপাত হয় ১৩০ মিলিমিটারের মতো। সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৫.২ মিলিমিটার। প্রায় ৫০ শতাংশে ঘাটতি আছে। যা দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাতের সামগ্রিক ঘাটতি ৩৯ শতাংশের থেকে ১১ শতাংশ বেশি।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাতে মোট ৩০ হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা।সেখানে বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনায় বীজতলা তৈরি হয়েছে ২৪ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে। এখনও পর্যন্ত ২০ শতাংশ জমিতে বীজতলা তৈরি করা যায়নি।

কৃষি দফতরের জেলা উপ অধিকর্তা শিবনাথ দে বলেন, ‘‘এখন থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধান চাষের মূল সময়। গত বছর অবশ্য অগস্টের শেষ পর্যন্ত চাষ হয়েছিল। বর্তমান অবস্থা সঙ্কটজনক বলা যাবে না। বিক্ষিপ্ত ভাবে মল্লারপুর, লাভপুরের মতো কয়েকটি জায়গায় ভাল বৃষ্টি হওয়ার জন্য ধান রোয়ার কাজ শুরু করেছে। অনেকে বৃষ্টির ভরসায় না থেকে গভীর নলকূপের ব্যবস্থায় ধান রোপণের কাজ শুরু করেছেন। তবে বৃষ্টি নির্ভর এলাকায় ধান রোপণের কাজ শুরু হয়নি। বর্তমান অবস্থায় জেলায় ৪০ থেকে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই ধান বসানোর কাজ সার্বিক ভাবে শুরু হবে।’’

কৃষি আধিকারিক জানান, অল্প বৃষ্টিতে চাষিরা ভুট্টা, বাদাম, অড়হর, মিলেট চাষ করতে পারেন। এর জন্য চাষিদের বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করার কাজ শুরু হয়েছে। এ দিকে, রাজগ্রাম থেকে রাজনগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা অপেক্ষায় দিন গুণছেন। ধান রোয়ার জন্য জমিও তৈরি করেছিলেন। ময়ূরেশ্বর থানার গিধিলার সুরেশ বসু, লাভপুরের দাঁড়কার সুদেব হাজরা, নলহাটির সুলতানপুরের অসীম মণ্ডল, রামপুরহাটের আয়াষের নবকুমার মণ্ডলরা বলেন, ‘‘বৃষ্টির অভাবে বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সময়ে ধান চাষ করা যাচ্ছে না।’’

নানুরের রতনপুরের মনসুর আলি, সাঁইথিয়ার বনগ্রামের সঞ্জয় মণ্ডলরা বলেন, ‘‘বৃষ্টি অভাবে ঢেঁড়স, বেগুন জমিতে সাবমার্সিবলের জল কিনে গাছ বাঁচাতে হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে আনাজ উৎপাদনেও ঘাটতি হচ্ছে। বাজারে আমদানিও কম হচ্ছে। ফলে, বাজারে আনাজের দাম বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় লঙ্কা, পটল, কড়লা, ঢেঁড়স, শশা আনাজের দাম কিছুটা কমেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rampurhat paddy farmers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy