পর্যটন: কলেশ্বরের মন্দির ঘিরে এখনও ভক্তের ঢল নামে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
শিব চতুর্দশী তো বটেই, দীর্ঘদিন ধরে বছরভর পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে ময়ূরেশ্বরের কলেশ্বর শিবমন্দিরে। কিন্তু জেলার পর্যটন মানচিত্রে কলেশ্বরের ঠাঁই হয়নি আজও। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা চরম হতাশ। পর্যটন মানচিত্রে কলেশ্বরকে স্থান দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে কলেশ ঘোষ নামে এক গোয়ালা পার্বতীপুরে একটি শিবলিঙ্গ উদ্ধার করেন। তাঁর নামানুসারে ওই শিবের নাম হয় কলেশনাথ। পার্বতীপুর পরিচিত হয় কলেশ্বর নামে। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে স্থানীয় ঢেকার রাজা রামজীবন রায় কলেশ্বরে নির্মাণ করেন নয়টি চূড়া বিশিষ্ট সুউচ্চ মন্দির।
একই সঙ্গে তাঁরই উদ্যোগে ওই মন্দির চত্বরেই নির্মিত হয় আরও কয়েকটি মন্দির। পরবর্তী কালে ওই শিবমন্দির ধ্বংস হয়। সেই স্থলে বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করান দক্ষিণখণ্ডের দ্বারিকানাথ দেবতপস্বী নামে এক সাধক।
শিবচর্তুদশী তো বটেই, সারা বছরই পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে কলেশ্বরে। দুরদুরান্তের মানুষজন জল ঢালতে আসেন শিবের মাথায়। শিবচর্তুদশীতে ৭ দিনের মেলাও বসে। জেলার গণ্ডী ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কলেশ্বরের নাম ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কিন্তু আজও কলেশ্বর সরকারি সদিচ্ছার অভাবে অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। একসময় পুজো পরিচালনা-সহ মন্দিরের উন্নয়নের জন্য রামজীবন বেশ কিছু জমি বরাদ্দ করেন। সেই জমির সিংহভাগই আজ বেহাত হয়ে গিয়েছে বলে মন্দির কমিটির সদস্যরা জানান। এর ফলে পর্যটনের সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও থমকে গিয়েছে যাবতীয় উন্নয়ন। কলেশ্বরকে জেলার পর্যটন মানচিত্রে রাখার করার দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের।
প্রশাসনের সকলস্তরে আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা। নানা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় কলেশ্বরে পা রেখেছেন রাজনৈতিক দলের তাবড় নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের হাতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা নেতাজী সংস্কৃতি মঞ্চের সম্পাদক হিমাদ্রি শেখর দে, শক্তিপদ ভল্লারা বলেন, ‘‘কলেশ্বর পর্যটন মানচিত্রের ঢুকলে এলাকার আর্থসামাজিক চালচিত্রই বদলে যাবে। কিন্তু বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে।’’
সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী দাস বলেন, ‘‘ওই দাবি খুবই সংগত। আমরাও এ ব্যাপারে উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’
বছর দু’য়েক আগে কলেশ্বরে এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী। নানা উন্নয়ন সহ পর্যটন মানচিত্রে রাখার দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তার হাতে তুলে দেন কলেশ্বর শিবালয় এবং আশ্রম কমিটি সদস্যরা।
ওই সংস্থার সভাপতি শুকদেব মিত্র বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের অর্থানুকুল্যে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। কিন্তু পর্যটন মানচিত্রে অর্ন্তভুক্তির বিষয়টি আজও অবহেলিত রয়েছে।’’
সভাধিপতি জানান, ইতিমধ্যেই কলেশ্বরে নানা উন্নয়নের প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। সেগুলি কার্যকর করা হবে। এবং আগামীতে পর্যটন মানচিত্রে রাখার বিষয়ে নিয়ম কানুন খতিয়ে দেখার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy