দূরদর্শী: পরের ভোটের জন্য ‘অগ্রিম’ দেওয়াল দখল। ছবি: কল্যাণ আচার্য
হোটেলের ঘর, সিনেমার টিকিট বা বিমানের আসন— অগ্রিম সংরক্ষণ করা যায় সে সবই।
ভোট-বাজারে তার সঙ্গে জুড়েছে বাড়ির দেওয়ালও। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দেখা মিলেছে তার।
দলীয় প্রার্থীর নাম, প্রতীক সহ প্রচার লিখনে নির্বাচনের আগেই দেওয়াল ‘দখল’ করতে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। পছন্দের দেওয়ালে প্রাথমিক ভাবে লিখে রাখা হয় ‘সাইট ফর’। পরে ওই সব বাড়ির মালিকদের অনুমতি নিয়ে দেওয়ালে প্রচার লিখন করাই নিয়ম।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এখন অবশ্য কয়েক বছরের জন্য দেওয়াল দখলের প্রবণতা শুরু হয়েছে। তাতে শাসকদল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, পিছিয়ে নেই বিরোধী শিবিরও। লাভপুরের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, কীর্ণাহার স্টেশনে যাওয়ার রাস্তায় চোখে পড়েছে এমনই কয়েকটি দেওয়াল দখলের ছবি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, লাভপুরের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি দেওয়ালে ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দখলের কথা লেখা রয়েছে। তাতে নাম রয়েছে শাসকদলের। কীর্ণাহার রেলস্টেশন যাওয়ার রাস্তায় চুন করা একটি পাঁচিলে শাসকদলের পক্ষেই ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত তা দখলে থাকার কথা লেখা হয়েছে।
পিছিয়ে নেই বিরোধীরাও। কীর্ণাহার ১ পঞ্চায়েত যাওয়ার রাস্তার পাশে সিপিএমের পক্ষেও একটি দেওয়ালে একই ভাবে ‘২০১৯-২১’ লেখা রয়েছে।
নানুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সাকুলিপুর যাওয়ার পথে একই ভাবে একটি দেওয়াল ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘দখলে’ থাকার কথা লিখেছে বিজেপি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মনে রেখেই এ ভাবে দেওয়াল ‘দখল’ করা হয়েছে।
ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল কর্মী সাবির হোসেন, লাভপুরের বিজেপি কর্মী সুনীল মণ্ডল, নানুরের সিপিএম কর্মী সাদেক আলির বক্তব্য, ‘‘এ ভাবে দেওয়াল দখলে দু’রকম সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত পরের নির্বাচনের আগে আর দেওয়াল দখলের জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। দ্বিতীয়ত অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আগের কোনও নির্বাচনে লেখা দেওয়াল লিখন পরের ভোটের সময়ই স্পষ্ট থাকে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন ও প্রার্থী নাম বদলে দিলেই চলে। তাতে পরিশ্রম, খরচ দুই-ই বাঁচে।’’
কিন্তু ওই ভাবে দেওয়াল দখলের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাড়ি মালিকদের চাপের মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর অনেকের বক্তব্য, মানুষের রাজনৈতিক অবস্থান বা সমর্থন পরিবর্তনশীল। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এখন যে বাড়ির মালিক শাসকদলের সমর্থক হিসেবে তাঁর বাড়ির দেওয়ালে ওই দলের প্রচার লেখার অনুমতি দিয়েছেন, পরবর্তী নির্বাচনে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বদলে গিয়েছে। সেই সময় তিনি বিরোধীদের প্রচারে দেওয়াল লেখার অনুমতি দিতে চাইলেও, এমন ভাবে ‘দখল’ থাকা’ দেওয়ালে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনের আগে দেওয়াল লিখনের জন্য আলাদা ভাবে বাড়ির মালিকের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘দখল’ থাকা দেওয়ালে তেমন কোনও অনুমতি ছাড়াই প্রচার লিখন করা হয়।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম এবং বিজেপর জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য— ‘‘ওই ভাবে দেওয়াল দখল করে রাখার যুক্তি নেই। প্রতিটি নির্বাচনের সময় দেওয়াল লিখনের আগে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এখন যিনি অনুমতি দিয়েছেন, পরবর্তী নির্বাচনে তিনি তা না-ও দিতে পারেন।’’ তাঁদের মন্তব্য, ‘‘বিরোধী শিবিরের কেউ কেউ অতি উৎসাহে ওই ভাবে দেওয়াল দখল করে রাখলেও, এমন প্রবণতা শাসকদলেরই বেশি।’’
তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমাদের ওই ভাবে দেওয়াল দখল করে রাখার প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ মানুষ ধারাবাহিক ভাবে আমাদেরই দেওয়াল লিখনের অনুমতি দেন। সেই জন্যই হয়তো কোথাও কোথাও কর্মীরা ওই ভাবে দেওয়াল দখলের কথা লিখে থাকতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy