E-Paper

পরীক্ষা লাটে, ফোন কিনতে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে

ইন্দাসের আকুই ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বার মাধ্যমিকের টেস্টে ৮০ জনের মধ্যে ১৫ জন পরীক্ষায় বসেনি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, তারাশঙ্কর গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:০৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট-এ পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার ভাবাচ্ছে শিক্ষকদের। কারণ জানতে পরীক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে তাঁদের। কেউ সংসার টানতে, কেউ বা স্রেফ স্মার্টফোন কেনার টাকা জোগাড় করতে পড়াশোনা লাটে তুলে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছে।

ইন্দাসের আকুই ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বার মাধ্যমিকের টেস্টে ৮০ জনের মধ্যে ১৫ জন পরীক্ষায় বসেনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরজিৎ দলুই বলেন, “অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে নানা উত্তর পেয়েছি। কেউ বলেছে ধান তোলার সময়ে মাঠে অনেক কাজ। কেউ ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছে। কেউ আবার বলছে, হাতের কাজ শিখলে কাজে লাগবে। পড়াশোনা বেশি করে কী হবে! এই প্রবণতা বিপজ্জনক।” ওই স্কুলেরই এক অভিভাবক পুতুল রুইদাসের কথায়, “আমরা গরিব। সংসারে টাকার প্রয়োজন। সে সব দেখেই হয়তো ছেলে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছে।”

সোনামুখীর ধানশিমলা বিদ্যাভবনেও মাধ্যমিকের টেস্টে ২১৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জন অনুপস্থিত ছিল। পাত্রসায়রের বেলুট উচ্চ বিদ্যালয়ে টেস্টে অনুপস্থিতির হার প্রায় ১২ শতাংশ। পাত্রসায়রের নাড়িচা সর্বমঙ্গলা বিদ্যাপীঠের উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে আবার ৭২ জনের মধ্যে ১৩ জন পরীক্ষায় বসেনি।

নাড়িচা সর্বমঙ্গলা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক গৌরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনুপস্থিত কিছু পড়ুয়ার বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের কাছে যা শুনেছি, তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। স্রেফ দামি মোবাইল ফোন কিনবে বলে পাড়ার দাদাদের সঙ্গে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছে কোনও কোনও ছাত্র। পরিবারের লোকেরাও তাদের আটকাতে পারেননি।” খাতড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও তালড্যাংরা ফুলমতি হাই স্কুলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অনেক পরীক্ষার্থীই অনুপস্থিত ছিল।

ছবিটা অনেকটা এক পুরুলিয়া জেলার মাধ্যমিকের টেস্টেও। রঘুনাথপুর হাই স্কুলে ১৩৯ জনের মধ্যে টেস্ট দেয়নি ২৫ জন। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের শাঁকড়া হাই স্কুল ও মেট্যাল সহর হাই স্কুলে পরীক্ষায় বসেনি ১০ জন করে পড়ুয়া। নিতুড়িয়ার জনার্দণ্ডি হাই স্কুলে পরীক্ষা দেয়নি ১২ জন। পাড়ার তেতুলহেঁটি হাই স্কুলে সংখ্যাটা ন’জন। জনার্দণ্ডির প্রধান শিক্ষক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, মেট্যাল সহরের প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ চক্রবর্তী, তেতুলহেঁটির প্রধান শিক্ষক শান্তনু মুখোপাধ্যায় জানান, ওই পড়ুয়াদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, যারা টেস্টে বসেনি তাদের অধিকাংশই সংসারে সাহায্য করতে বাইরে না হয় স্থানীয় ভাবে দিনমজুরির কাজ করছে।

এ নিয়ে এবিটিএ-র বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অস্মিতা দাশগুপ্ত বলেন, “স্কুলগুলিতে এক দিকে শিক্ষকের অভাব, অন্য দিকে রাজ্যে উচ্চ শিক্ষিতদের চাকরি নেই। এখানে ভবিষ্যতের দিশা নেই। তাই পড়াশোনার প্রতি অনীহা বাড়ছে।” তা মানতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া সভাপতি গোরাচাঁদ কান্তের দাবি, ‘‘করোনা-পরবর্তী প্রভাব এখনও চলছে। শিক্ষক, অভিভাবক থেকে রাজ্য সরকার— সবার চেষ্টায় তা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’’

প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’-এর পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক অভিষেক মিশ্রের মতে, ‘‘রোজগারের তাগিদেই পড়া ছাড়ছে গরিব পরিবারের পড়ুয়ারা। তাই আমাদের সংগঠন মনে করে ‘ড্রপ আউট’ আরও কমানোর জন্য পড়াশোনার পদ্ধতির পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও পেশামুখী করতে হবে।’’

তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের পুরুলিয়ার সভাপতি সত্যকিঙ্কর মাহাতোর দাবি, ‘‘উচ্চশিক্ষিত হওয়ার অন্য কোনও বিকল্প নেই। এই বোধটা চারিত হওয়া প্রয়োজন অভিভাবকদের মধ্যে। না হলে ড্রপ আউটের সমস্যা কখনই মিটবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia bankura

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy