জন্ম, বেড়ে ওঠা বীরভূমে। পড়াশোনা করেছেন দুবরাজপুর শ্রীশ্রী সারদা বিদ্যাপীঠে। কলকাতার এক নামী সংস্থায় চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। শনিবার দুপুরে সেই যুবকেরই দেহ উদ্ধার হয়েছে কসবার হোটেলের ঘর থেকে। অথচ শুক্রবার রাতেও বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল নিহত আদর্শ লোসাল্কার। তার ১২ ঘণ্টার মধ্যে কী ভাবে ছেলের মৃত্যু হল, বীরভূমে বসে বুঝে উঠতে পারছেন না বাবা বিমলকুমার লোসাল্কা।
কসবার হোটেলে দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কলকাতায়। শনিবার দুপুরে হোটেলের ঘর থেকে ৩৩ বছরের আদর্শের দেহ উদ্ধার হয়। আদর্শদের বাড়ি ছিল বীরভূমের দুবরাজপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাজারপাড়া এলাকায়। স্কুলস্তরের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় চলে আসেন ওই যুবক। বছর চার-পাঁচ আগে কলকাতারই এক নামী সংস্থায় চাকরি পান। ঘর ভাড়া নেন বাঙ্গুর অ্যাভিনিউয়ে। সেখান থেকেই সল্টলেকের অফিসে যাতায়াত করতেন ওই যুবক।
আদর্শের বাবা বিমলকুমারের একটি কাপড়ের দোকান রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘গত কাল রাতে ছেলে ফোন করেছিল। বলেছিল বাইকে করে নিউ আলিপুরের দিকে যাচ্ছি! সেই শেষ কথা হয়।’’ তার পর বিকেলে পুলিশের থেকে ফোন পান, কলকাতার হোটেল থেকে ছেলের নগ্ন দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহতের পরিবার সূত্রে খবর, তিন বন্ধুর সঙ্গে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন আদর্শ। তবে শুক্রবার রাতে একাই নিউ আলিপুরে যাচ্ছিলেন ওই যুবক। সঙ্গে কেউ ছিল না। অন্তত বাড়িতে ফোন করে তেমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি। তার পর কী হয়েছিল, যুবকের সঙ্গে হোটেলে চেক-ইন করা বাকি দু’জন কারা ছিলেন, শেষমেশ কী ভাবেই বা মৃত্যু হয় তাঁর— সে সব নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটছে না।
আরও পড়ুন:
পুলিশ সূত্রে খবর, আদর্শের সঙ্গে হোটেলে ঢুকেছিলেন আরও দু’জন। তার মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। হোটেলে ঢোকার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর গভীর রাতে বাকি দু’জন হোটেল ছেড়ে চলে যান। তাঁদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, তিন জনই হোটেলে ঘর ভাড়া নেওয়ার সময়ে পরিচয়পত্র দেখিয়েছিলেন। সেই পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কসবা থানার পুলিশের তরফে দুবরাজপুর থানায় খবর পাঠানো হয়। সেখান থেকেই খবর দেওয়া হয় আদর্শের পরিবারকে। যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর চাউর হতেই এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। ইতিমধ্যে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন আদর্শের পরিজনেরা।