Advertisement
E-Paper

সব খরচ করে শহরে ফেরত

পরেশবাবুর সম্বল বলতে একটা চপের দোকান। বেচাকেনা খুব একটা হয় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০৫:৪৫
জীবাণুমুক্তকরা হচ্ছে এলাকা। পাটরাঙা লেনে। নিজস্ব চিত্র

জীবাণুমুক্তকরা হচ্ছে এলাকা। পাটরাঙা লেনে। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা পরিষেবা মেলেনি। উল্টে খরচ হয়ে গিয়েছে ৭০ হাজারেরও বেশি টাকা। সর্বস্বান্ত হয়ে শনিবার পুদুচেরি থেকে ঘরে ফিরলেন বিষ্ণুপুর শহরের বাসিন্দা পরেশ দাস।

পরেশবাবুর সম্বল বলতে একটা চপের দোকান। বেচাকেনা খুব একটা হয় না। বিষ্ণুপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরেশবাবুর ছেলে সুকুমার দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুর অসুখে ভুগছেন। স্ত্রী পার্বতী ভুগছেন হৃদযন্ত্রের সমস্যায়। ‘মরার উপরে খাঁড়ার ঘা’ পড়ে, যখন পরেশবাবুর কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। কম খরচে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার জন্য মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে পুদুচেরি গিয়েছিলেন পরেশবাবু। প্রতিবেশীরা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন পঞ্চাশ হাজার টাকা। শনিবার স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে ঘরে ফিরে পরেশবাবু বললেন, ‘‘এমন সঙ্কট আগে আসেনি।’’

পরেশবাবুর ছোট ছেলে শম্ভু একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবার চপের গুমটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। দাদার শরীর অসুস্থ। এই অবস্থায় সকলের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করাতে পুদুচেরি গিয়েছিলেন বাবা, মা ও দাদা। কিন্তু লকডাউন চলায় চিকিৎসা মেলেনি। ফিরে আসার মতো টাকাও বাবার কাছে ছিল না। কোনও রকমে ধারদেনা করে বাড়ি ফিরে এসেছেন।’’ চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ তাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, তা থাকা-খাওয়ায় খরচ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। শম্ভুবাবু জানান, ‘‘খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। কিন্তু যার জন্য পুদুচেরি যাওয়া, মেলেনি সেই চিকিৎসাটুকুও।’’

বিষ্ণুপুর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পাটরাঙা লেনে বাড়ি পরেশবাবুর। শনিবার ফেরার পরে তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। পরেশবাবু বলেন, ‘‘লকডাউন ঘোষণার পরেই চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় পুদুচেরির ওই হাসপাতালে। টাকাকড়ি সব শেষ হয়ে যায়। সরকারি সাহায্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে আবেদন জানাই। কিন্তু কাজ না হওয়ায় ভাড়া বাসে ফিরে এসেছি।’’ পুদুচেরিতে আটকে পড়া কয়েকটি পরিবারকে নিয়ে একটি বাস হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল কয়েকদিন আগে। মাথাপিছু সাড়ে ৬ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে উঠেছিলেন পরেশবাবুরা। খড়্গপুরে নেমে বাড়ি ফেরার জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করেছিলেন। তার জন্যও কয়েক হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানাচ্ছেন শম্ভুবাবু। পরেশবাবুর অভিযোগ, ‘‘পথে অনেক জায়গায় পুলিশ গাড়ি আটকায়। কোথায় গিয়েছিলাম, কোথায় যাব— এমন অনেক প্রশ্ন করে। পথে ভোগান্তি কম হয়নি। তবে আস্তে আস্তে সবই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল।’’

রবিবার সুকুমারের শরীর খারাপ হলে তাঁকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বলে পরিবার সূত্রে খবর। এ দিন অসহায় ওই পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছেন পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর আনন্দ রায় ও রবিলোচন দে। স্থানীয় বাসিন্দা মমতা সেন, বাপ্পা দাস, হিরালাল সেন, বাসুদেব কর বলেন, “এই পরিবারটির পাশে সকলেরই দাঁড়ানো উচিত। সরকারি সহায়তা ওঁদের খুব প্রয়োজন।”

Coronavirus Lockdown Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy