E-Paper

সাঁওতালি মন্ত্রেই পুজো আদিবাসী রমণী সরস্বতীর

সামাজিক বয়কট, হুমকি সত্ত্বেও দমে যাননি তিনি। প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। সম্মতি পেয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো।

শুভেন্দু তন্তুবায়

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:২৮
ছক ভেঙে: বাড়িতেই নিত্য দুর্গা পুজো করেন সরস্বতী হাঁসদা।

ছক ভেঙে: বাড়িতেই নিত্য দুর্গা পুজো করেন সরস্বতী হাঁসদা।

তাঁরা প্রকৃতির পূজারী। মূর্তিপুজো সেখানে নিষিদ্ধ। তবু সমাজের বাধাবিপত্তি সহ্য করেও দু’দশকের বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজো করে আসছেন আদিবাসী রমণী সরস্বতী হাঁসদা। নিজেই সাঁওতালিতে মন্ত্র পড়েন। গোড়ায় যাঁরা বাধা দিয়েছিলেন, এখন তাঁদেরই অনেকে পুজোয় যোগ দেন। মণ্ডপের সামনে ধামসা-মাদল বাজিয়ে আদিবাসী নাচ-গানে মাতেন তাঁরা। হিড়বাঁধের দোমোহানি গ্রামের সরস্বতীর দুর্গাপুজো এ বার ২৩ বছরে পড়ছে। পাচ্ছেন পুজোর জন্য সরকারি অনুদানও। তবে পুজো শুরু করতে গিয়ে কম বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। সরস্বতীর দাবি, দেবী দুর্গা স্বপ্নে তাঁকে পুজো করতে বলেছিলেন। তা শুনে স্বামী-সন্তানেরা রাজি হয়ে যান। কিন্তু বাধা আসে সমাজ থেকে। সামাজিক বয়কট, হুমকি সত্ত্বেও দমে যাননি তিনি। প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। সম্মতি পেয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো।

বছর পঞ্চান্নর সরস্বতী অক্ষরজ্ঞানহীন। তিনি বলেন, ‘‘দেবীর নির্দেশ আমাকেই পুজো করতে হবে। কিন্তু সংস্কৃত মন্ত্র জানা নেই। তাই আমাদের আরাধ্য দেবতা মারাং বুরুর মন্ত্রেই দেবী দুর্গাকে আরাধনা করি।’’ তবে ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন থেকে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজোর রীতিনীতি সাধ্য মতো মেনে চলেন। বলির চল নেই। নতুন প্রতিমা বাড়িতে রেখে তিনি নিত্যপুজো করেন। দশমীতে বিসর্জন দেন আগের বছরের প্রতিমা।

সরস্বতী জানান, অল্প জমিতে চাষবাস ও দিনমজুরি করে স্বামী সামান্য আয় করতেন। কিন্তু দুর্গাপুজোর আয়োজনে তিনি খামতি রাখতেন না। স্বামী মারা যাওয়ায় দুই ছেলে এখন দায়িত্ব নিয়েছেন। পুত্রবধূরা পুজোর উপাচার সাজানো, আলপনা দেন। ছোট বৌমা কল্পনা হাঁসদা বলেন, ‘‘পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করি।’’

আদিবাসী অধ্যুষিত দোমোহানি গ্রামে এটাই একমাত্র পুজো। শুধু পড়শিরাই নয়, দেউলাগড়া, লছমনগড়, ভুয়াকানা, খান্দারানী, বাউরিডিহা থেকেও অনেকে পুজো দেখতে আসেন। পড়শিরাও পুজোয় চাঁদা দেন। তিন দিন ধরে পুজো প্রাঙ্গণে চলে পঙ্‌‌ক্তিভোজ। গ্রামের কৃষ্ণ হাঁসদা, জয় হেমব্রম, গৌর হেমব্রম বলেন, ‘‘পুজোয় আমরা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকি।’’ যদিও ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর বাঁকুড়া জেলা গডেৎ বিপ্লব সরেন দাবি করেন, ‘‘এক সম্প্রদায়ের উৎসবে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষজন শামিল হতেই পারেন। কিন্তু পুজো করার বিষয়টি আলাদা। আমরা মূর্তিপুজোয় বিশ্বাসী নই।’’ তবে খান্দারানি গ্রামের দীপক মণ্ডল, বাউরিডিহার গৌতম গোপ মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘সরস্বতী একক ভাবে পুজো শুরু করলেও এখন তা সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। তাই আমরাও ওই পুজোয় শামিল হই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Adivasis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy