E-Paper

খাওয়ার পরেই বিষক্রিয়া, গ্রামে অসুস্থ শতাধিক 

শনিবার খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হলেন প্রায় ১৫০ জন। শনিবার মাঝরাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত অসুস্থেরা এই হাসপাতালে আসতে থাকেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:০১
খাদ্যে বিষক্রিয়ায় অসুস্থদের চিকিৎসা চলছে। রবিবার সিউড়ির সুপার সদর হাসপাতালে।

খাদ্যে বিষক্রিয়ায় অসুস্থদের চিকিৎসা চলছে। রবিবার সিউড়ির সুপার সদর হাসপাতালে। — নিজস্ব চিত্র।

রাজনগর, বোলপুরের পরে আমোদপুর। আবার জেলায় খাদ্যে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটল।

শনিবার খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হলেন প্রায় ১৫০ জন। শনিবার মাঝরাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত অসুস্থেরা এই হাসপাতালে আসতে থাকেন। অসুস্থদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়া থানা এলাকার আমোদপুরের পাগলাডাঙা গ্রামে শনিবার দুপুরে একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন পাগলাডাঙা, মিতদাসপুর, বাঁধের পাড় এবং কামারশোল গ্রামের প্রায় ৩০০ জন বাসিন্দা। সেখানেই দুপুরের খাওয়া পরে বিকেলে মুড়ি এবং বোঁদে খাওয়ানো হয়। এর পরে সন্ধ্যা থেকেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন অধিকাংশ আমন্ত্রিতই। বিশেষত শিশু এবং মহিলাদের মধ্যে বমি ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ দেখা দেয়। শনিবার রাতে প্রায় শতাধিক মহিলা ও শিশু এই উপসর্গ নিয়ে আমোদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছন। সেখান থেকে অধিকাংশ রোগীকেই সিউড়ি সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কেউ কেউ সরাসরি এসে ভর্তি হন সিউড়িতে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে শনিবার মাঝরাতেই হাসপাতালে আসেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, বীরভূম স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বিশ্বজিৎ মোদক। অসুস্থদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কয়েক জনকে ছুটিও দেওয়া হয়েছে। তবে কী থেকে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল, তা খুঁজে দেখার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনি ও রবিবার মিলিয়ে ওই এলাকা থেকে একই উপসর্গ নিয়ে ১০২ জন পুরুষ ও মহিলা এবং ৪৭ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে এক জন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বাও আছেন। তবে কারও শারীরিক অবস্থাই সঙ্কটজনক নয়। হাসপাতালের চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, “সকলেই মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। খাবারে বিষক্রিয়ার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের প্রত্যেক চিকিৎসক, নার্স, কর্মী ও প্রশাসনের সম্পূর্ণ সহযোগিতা থাকায় পরিস্থিতি সামলে দেওয়া গিয়েছে।”

যাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল, সেই পরিবারের সদস্য গোবিন্দ সোরেন বলেন, “শুক্রবার বিকেলে বোঁদে তৈরি করা হয়েছিল। শনিবার বিকেলে তা খাওয়ানো হয়। তৈরির সময়ে কোনও সমস্যা চোখে পড়েনি। তবে ঢাকা দিয়ে রাখার সময় সেখানে কিছু পড়ে গিয়েছিল কি না, তা আমাদের জানা নেই। আমাদের সম্পূর্ণ অজান্তেই এই ঘটনা ঘটেছে। আমাদের পরিবারেও বেশ কয়েক জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তবে সকলেই মোটামুটি সুস্থ আছেন, এটাই বড় কথা।”

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজোর প্রসাদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজনগরের ছোটবাজারের মালিপাড়ার কমপক্ষে ৫০ জন। পয়লা নভেম্বর তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয় এক শিশু-সহ তিন জনের। গত, ১ ও ৩ মার্চ বোলপুরের সুপার মার্কেট এলাকার একটি মিষ্টির দোকানের তৈরি দইবড়া খেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়েন ৩০ থেকে ৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের বাড়িতেই চিকিৎসা হয়। কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ঘটনার প্রতিবাদে গত ৮ মার্চ ওই দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভও দেখান স্থানীয়েরা। এ বার আমোদপুরেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল।

রবিবার সকালে সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখও হাসপাতালে আসেন। হিমাদ্রি আড়ি বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। সাঁইথিয়ায় যিনি ফুড সেফটি অফিসার আছেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সংগৃহীত নমুনা সেন্ট্রাল ল্যাবে পাঠান হবে। হাসপাতালের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে গিয়েও সমস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিপূর্বে বোলপুরে খাদ্য প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে তাঁদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানেও তা করা হবে। পাশাপাশি, আমাদের তরফ থেকেও সতর্কতা আরও বাড়ানো হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Food Poisoning Sick Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy