Advertisement
০২ মে ২০২৪
bankura

প্রাক্তন মাও নেতা রাজারামের নামে হুলিয়া জারি ঝাড়খণ্ড আদালতের! ধন্দে এ রাজ্যের পুলিশ

২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর রাজারাম সোরেন এবং জাগরী বাস্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সেই রাজারামের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করল ঝাড়খণ্ডের আদালত।

Mao leader Rajaram Mahato who surrendered to Chief minister Mamata Banerjee gets notice from Jharkhand court

—প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ১৭:৫৪
Share: Save:

২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পর মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মাওবাদীদের প্রাক্তন কমান্ডার রাজারাম সোরেন। সে দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী তথা মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কে-ও। আত্মসমর্পণের ১২ বছর পর সেই রাজারামের নামেই হুলিয়া জারি করল ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর আদালত। রবিবার ঝাড়খন্ডের পটমদা থানার পুলিশ হুলিয়া নিয়ে হাজির হয় বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার মিঠাম গ্রামে থাকা রাজারামের বাড়িতে। নিয়ম অনুযায়ী, বাড়ির দেওয়ালে সেঁটে দেওয়া হয় আদালতের ওই নোটিস। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজারামকে হাজিরা দিতে হবে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর আদালতে। বস্তুত, আত্মসমর্পণকারী কোনও মাওবাদীর নামে এই প্রথম হুলিয়া জারির ঘটনা ঘটল।

পুলিশ সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে ঝাড়খণ্ডের পটমদা থানা এলাকায় একটি নাশকতার ঘটনায় রাজারামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। ওই একই মামলাতেই তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনেও মামলা রুজু করে পুলিশ। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই জামশেদপুর আদালতে রাজারামের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারির আবেদন জানায় ঝাড়খণ্ড পুলিশ। জামশেদপুর আদালত রাজারামের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ফেরার অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে এমন হুলিয়া জারি করে থাকে আদালত। কিন্তু ১২ বছর আগে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সস্ত্রীক আত্মসমর্পণকারী রাজারামের ক্ষেত্রে কেন ওই রকম হুলিয়া জারি করা হল, তা নিয়ে ধন্দে রাজ্য পুলিশও। এ নিয়ে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, “রাজারাম সোরেনের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়েছে এই খবর আমরা পেয়েছি। শুনেছি, তাঁর বাড়িতে এসে ঝাড়খণ্ড পুলিশ নোটিস দিয়ে গিয়েছে। আমরা বিষয়টি উচ্চস্তরে জানিয়েছি। পাশাপাশি, পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য আইনি পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে।’’

রাজারামের ভাই দুখিরাম সোরেন বলেন, “রবিবার বিকালে পটমদা থানার পুলিশ এসে আমাদের দেওয়ালে একটি কাগজ সেঁটে দিয়ে যায়। আমি লেখাপড়া জানি না। তাই কাগজে কী লেখা ছিল, তা বলতে পারব না। পুলিশ আমাদের কাছে রাজারাম কোথায় থাকে এবং কী করে তা জানতে চায়। আমরা জানিয়েছি, রাজারাম এখন বাড়িতে থাকে না। পরিবার নিয়ে ও এখন বাইরে বসবাস করে। তখন পটমদা থানায় গিয়ে ওকে দেখা করার কথাও বলে যায় পুলিশ।’’

পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, ১৯৯৮-’৯৯ সালে এমসিসি (মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার)-তে যোগ দেন মিঠাম গ্রামের রাজারাম। প্রথম থেকে রাজারামের সাংগঠনিক দক্ষতা নজর টানে সংগঠনের নেতৃত্বের। ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জনযুদ্ধ গোষ্ঠী এবং এমসিসি যুক্ত হয়ে সিপিআই (মাওবাদী) নামের সংগঠন আত্মপ্রকাশ করলে রাজারাম পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর এবং ঝাড়খণ্ডের একাংশকে নিয়ে গঠিত জোনাল কমিটির সদস্য হন। রাজারামের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই এক বছরের মধ্যে তাঁকে অযোধ্যা স্কোয়াডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৫ থেকে ’০৬ সাল পর্যন্ত রাজারামের নেতৃত্বেই পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদীদের গেরিলা প্ল্যাটুন গড়ে ওঠে। আর এই প্ল্যাটুন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজারামের অন্যতম সহযোগী ছিলেন স্কোয়াড সদস্যা জাগরী বাস্কে। সংগঠনের কাজ করার সময়ই দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। ২০০৬ সালে রাজারাম জাগরীকে বিয়েও করেন। তাঁদের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে।

২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁদের একমাত্র পুত্রকে নিয়েই রাজারাম এবং জাগরী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সে সময় মাওবাদী নেতা আকাশ একটি বার্তায় জানিয়েছিলেন যে, ২০০৬ সালে বিয়ের পর থেকেই সংগঠন থেকে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন জাগরী। ২০১০ সালের জুন মাস থেকে সংগঠনের সমস্ত পদ থেকে রাজরামকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে অযোধ্যা প্ল্যাটুনে বিক্রম ওরফে অর্ণব দামের প্রভাব বাড়তে থাকায় গুরুত্ব কমে যায় রাজারামের। পরে অর্ণবের সঙ্গে রাজারামের মতানৈক্য হওয়ায় সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর পরেই ধীরে ধীরে সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয় রাজারাম এবং জাগরীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jharkhand Police bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE