Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ছটে চড়া বাজারদর

চাঁপাকলা বিকোচ্ছে তিনশো টাকায়

দীপাবলি থেকে ফলের বাজারে দাম যে চড়েছে আর নামার লক্ষণই নেই। ছটের প্রথম দিনে কার্যত ব্যাজার মুখেই বাজার সারতে দেখা গেল দুই জেলার ক্রেতাদের। ততটাই মুখ উজ্জ্বল বিক্রেতাদের।

বাজারে জোগান ঠিক রাখতে বাইরে থেকে কলা আমদানি করতে হচ্ছে বাঁকুড়া এবং (ডান দিকে) পুরুলিয়ায়। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

বাজারে জোগান ঠিক রাখতে বাইরে থেকে কলা আমদানি করতে হচ্ছে বাঁকুড়া এবং (ডান দিকে) পুরুলিয়ায়। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

দীপাবলি থেকে ফলের বাজারে দাম যে চড়েছে আর নামার লক্ষণই নেই। ছটের প্রথম দিনে কার্যত ব্যাজার মুখেই বাজার সারতে দেখা গেল দুই জেলার ক্রেতাদের। ততটাই মুখ উজ্জ্বল বিক্রেতাদের।

শুক্রবার শুরু হয়েছে ছট উৎসব। চলবে সোমবার পর্যন্ত। শুক্রবারের লাউ-ভাতের পরে শনিবার হবে ক্ষীর বা পায়েসের সাথে লুচি বা চাপাটি। পরেরদিন রবিবার সকাল থেকে নির্জলা উপোস করে বিকেলে অস্তগামী সূর্যের উদ্দেশ্যে জলাশয়ে নেমে প্রথম অর্ঘ্য দেবেন মহিলারা। অর্ঘ্যের ডালা সাজানো হবে কলা, ডাব, আখ, বাতাবি লেবু-সহ বিভিন্ন ধরনের ফল গাছ সমেত আদা ও বিভিন্ন সব্জি দিয়ে। সেই অর্ঘ্যের ডালা আনা হবে বাড়িতে।

সমস্ত রাত ডালার উপরে প্রদীপ জ্বালিয়ে গান গেয়ে রাত জাগার প্রথা রয়েছে। ওই রাতেই ছটের বিশেষত্ব ঠেকুয়া তৈরি হয়। পরেরদিন রবিবার ভোরে ফের জলাশয়ে নেমে সূর্যের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় অর্ঘ্য দেওয়ার সাথে পুজোর সমাপ্তি।

আদ্রার প্রবীণ বাসিন্দা ভোলাপ্রসাদ সিংহ, ও পারবেলিয়ার বাসিন্দা কৃষ্ণা গিরি বলেন, ‘‘সূর্যের সাথে জনজীবন, চাষাবাদের ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকায় সূর্যদেব ও ঊষাদেবীর উদ্দেশ্যে কার্তিক মাসের ষষ্ঠীতে এই পুজো হয়।”

আর এই উৎসবকে ঘিরেই বাজার চড়ে গিয়েছে ফলের। তাই শুক্রবার আদ্রার মুন্না মোদি, ভোলাপ্রসাদ সিংহ, পুরুলিয়া শহরের সনৎ সাউ বা মীনা রাম-কে বাজারে কেনাকাটি করতে গিয়ে আক্ষেপ করতে শোনা গেল, ‘‘ছটে অর্ঘ্যের ডালাতে ফল লাগবেই। কিন্তু যা দাম! হাত দিতেই ভয় করছে।’’ অন্যদিকে ক’দিন ধরে বাজার চড়া থাকায় স্বভাবতই খুশি বিক্রেতারা। পুরুলিয়া শহরের বিক্রেতা জিতেন্দ্র চৌরাশিয়া বলেন, ‘‘এ বার ফল বিক্রি করে মন্দ লাভ হচ্ছে না।” পুরুলিয়ারই আর এক ফল ব্যবসায়ী শেক আখতার জানান, শুক্রবারেই তিনি ১০০০ কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন।

দিওয়ালি শেষ হতেই ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়াতে শুরু হয় ছটের প্রস্তুতি। সদর শহর পুরুলিয়া, রেল শহর আদ্রা ও আসানসোল লাগোয়া নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ায় বসবাস বিহারের অনেক বাসিন্দারই। ফলে ওই সব এলাকায় বড় আকারেই ছট পালিত হয়। গত কয়েক বছর আগেই পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধের সামনে এবং পারবেলিয়াতে দামোদরের তীরে বড় আকারের সূর্য মন্দির তৈরি হয়েছে।

তবে ঘটনা হল পুরুলিয়াতে ছটে ফলের বাজারের জোগানের পুরোটাই আসে এই রাজ্যের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া ও বিহারের সমস্তিপুর, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। আদ্রা ও পুরুলিয়া দুই শহরের বড় ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা জানান, ছটে বাতাবি লেবু আসে বিহারের সমস্তিপুর থেকে। চাপাঁকলার জোগান দেয় মূলত অন্ধ্রপ্রদেশ ও হুগলি। আবার সিঙ্গাপুরী কলা আসে মুর্শিদাবাদের করিমপুর থেকে। ডাব আসে উলুবেড়িয়া ও কিছুটা দিঘা থেকে। আবার আখের জোগান দেয় মূলত রাঁচি।

ওই ব্যবসায়ীদের মতে পুজোর মরসুম হওয়ায় এমনিতেই ভিন্‌ জেলা বা ভিন্‌ রাজ্যের ফল ব্যবসায়ীরা দাম চড়িয়ে রাখেন। তারপরে অনেক দূর থেকে ফল আসায় স্বভাবতই দামটা বেশি পড়ছে।

পুরুলিয়া ও আদ্রায় এ দিন চাঁপাকলার কাঁদি বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে। বাতাবি লেবুর দাম ছিল প্রতিটি ২০ টাকায়। প্রতিটি আনারস বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়, আখের দামও ছিল ২০ টাকা (প্রতিটি)। ক্রেতাদের কথায়, নাশপাতি কয়েক দিন আগে পর্যন্ত ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে কিন্তু ছটের জন্য দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে। আপেল অবশ্য মোটামুটি একই আছে— ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।

শুক্রবার ছটের প্রথম দিন স্নান সেরে বাড়িতে লাউয়ের তরকারি ও ভাত খাওয়ার প্রথা রয়েছে। এই সুযোগে দু’দিন আগে পনেরো টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম শুক্রবারে ৩০ টাকা কেজিতে পৌঁছে গিয়েছে।

ছট পুজো উপলক্ষে বাঁকুড়া শহরেও রাতারাতি দর বেড়ে গিয়েছে ফলের। বিশেষ করে কলার দর আকাশ ছুঁয়েছে। ১০ কেজি ওজনের এক কান্দি কলার দর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছিল ২০০ টাকা। শুক্রবার সকাল থেকে সেই কাঁদির দামই বেড়ে হয়েছে ২৫০-২৬০ টাকা! স্বভাবতই মাথায় হাত পড়েছে মধ্যবিত্তের।

মাচানতলার ফল ব্যবসায়ী জীতেন সেন জানান, এ বার কলার জোগান অনেকটাই কম। তাই দর বেড়ে গিয়েছে। শুধু কলাই নয়। পেয়ারা, আপেল, নাসপাতি, লেবু, নারকেলের মতো ফলের দামও বেড়ে গিয়েছে কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা। কিছু দিন আগেও লাউ কেজি পিছু ১৫-২০ টাকা দরে মিলছিল। শুক্রবার লাউয়ের দাম উঠে যায় কেজিতে ৪০-৫০ টাকা। বাঁকুড়ার কালীতলার বাসিন্দা বিজয় পাঠকের কথায়, “ফল ও সব্জির দর প্রতি বছরই ছটের সময় বাড়ে। তবে এ বার যেন লাগামহীন বেড়েছে।” বাঁকুড়ার কেশিয়াকোল এলাকার বধূ নিকিতা উপাধ্যায়ের কথায়, “বাজার দর অকল্পনীয় ভাবে বাড়ছে। পুজোর আগে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।’’

তবে বাঙালির পালাপার্বনের মতো ছট উপলক্ষেও জনসংযোগ সারতেও দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের। যেমন এ দিন আদ্রার আড়রা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান তুফান রাই দলবল নিয়ে এ দিন অন্তত এক হাজার লাউ বিলি করেছেন। এ দিন থেকেই আদ্রার স্বর্গদ্বার সরোবর, কমলাস্থানের পুকুর, পাঁচুডাঙার আমতলার ঘাটে আড়রা পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

banana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE