Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বোলপুর ফিরে গেল সুকোমল

ছেলের মাথার ঠিক নেই। সেই ছেলেই ক’দিন ধরে বেপাত্তা। ঘুম উড়ে গিয়েছিল বোলপুরের বেণুভূষণ সিংহের। তাই পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানা তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করে রেখে দিয়েছে শুনে বড় স্বস্তি পেয়েছিলেন প্রৌঢ় মানুষটি।

থানায়: পুঞ্চা থেকে ফিরে যাওয়ার আগে। নিজস্ব চিত্র

থানায়: পুঞ্চা থেকে ফিরে যাওয়ার আগে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

ছেলের মাথার ঠিক নেই। সেই ছেলেই ক’দিন ধরে বেপাত্তা। ঘুম উড়ে গিয়েছিল বোলপুরের বেণুভূষণ সিংহের। তাই পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানা তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করে রেখে দিয়েছে শুনে বড় স্বস্তি পেয়েছিলেন প্রৌঢ় মানুষটি।

শুক্রবার ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। পুঞ্চা থানার পুলিশ কর্মীদের হাত চেপে ধরে তিনি বলেন— ‘‘ছোটবেলায় দীর্ঘ রোগভোগে ছেলেটার মাথা কিছুটা গোলমাল হয়ে যায়। সেই ছেলের এতদিন হদিস না পেয়ে বড় দুর্ভাবনায় ছিলাম। আপনারা না থাকলে ওকে হয়তো ফেরত পেতাম না।’’

বাড়ি থেকে অনেকে হারিয়ে যান। কেউ ফেরেন, কেউ বা চিরকালের জন্য হারিয়ে যান। বীরভূমের বোলপুর থানার কালিকাপুরের বাসিন্দা বছর চব্বিশের সুকোমল সিংহ বাড়ি ছেড়ে কী ভাবে ২৩ এপ্রিল পুঞ্চার দাঁদড় আশ্রমের মাঠে এসে পড়েছিলেন, মনে করতে পারেননি।

পুঞ্চার পাড়ুই গ্রামের বাসিন্দা পলাশ চট্টোপাধ্যায়ের উসখুসকো অবস্থার ওই যুবককে দেখে সন্দেহ হয়। কিন্তু জিজ্ঞাসা করেও ওই যুবকের নাম-ধাম কিছুই জানতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকদিনের খিদে তেষ্টায় তখন ওর মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছিল না। থানায় গিয়ে খবর দিই।’’

থানার এএসআই বিশ্বরূপ রায় ওই যুবককে উদ্ধার করে আনেন। সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে জল-সাবান দিয়ে ডলে ভাল করে স্নান করিয়ে নতুন গেঞ্জি-লুঙ্গি পরান। গরম ভাত, ডাল, তরকারি খেয়ে টানা ঘুম দেওয়ার পর বিকেল থেকে নাম-ঠিকানা জানার পর্ব শুরু হয়। খোঁজ রাখেন ওসি বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দু’দিনের মাথায় জানা যায়, ওই যুবকের নাম সুকোমল সিংহ, বাবার নাম বেণুভূষণ সিংহ। তারপর আর এগোয়নি। তৃতীয় দিনে জানা যায়, বীরভূমের বোলপুর থানার কালিকাপুর গ্রামের সারদাপল্লিতে সুকোমলের বাড়ি।

বোলপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সুকোমলেওর ছবি হোয়্যাটস অ্যাপে পাঠানো হয়। বেণুভূষণবাবুর খোঁজ পাইয়ে দিতে বোলপুর থানার সিভিক ভলান্টিয়ার রাজু ধাড়া খুব দৌড় ঝাঁপ করেন। পেশায় প্রান্তিক চাষি বেণুভূষণবাবু বলেন, ‘‘১৮ এপ্রিল সকাল থেকে ছেলে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। আগেও ও একবার না জানিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার পড়শি-আত্মীয় সবার বাড়িতে খোঁজ করেও ওকে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও এতদূরে চলে আসবে ভাবিনি।’’

সোমবার খবরটা পেয়ে তাঁদের দুর্ভাবনা ঘোচে। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে না পারায় এতদিন আসতে পারেননি। ফেরার পথে জানিয়ে যান, ছেলেকে আরও নজরে রাখবেন। বাবার হাত আঁকড়ে ধরেন সুকোমল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mentally challenged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE