E-Paper

কাশ্মীরে জঙ্গিহানা, ফিরতে চান পরিযায়ী শ্রমিকেরা

কাশ্মীরের গান্ধেরবাল জেলার গগনগিরে রবিবার সন্ধ্যায় জঙ্গি হামলায় নিহত হন পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক ও এক চিকিৎসক।

তন্ময় দত্ত 

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কাশ্মীরের জঙ্গিহানায় অন্তত পাঁচ জন পরিযায়ী শ্রমিক এবং এক চিকিৎসকের মৃত্যুর পরে ওই রাজ্যে কর্মরত বীরভূম জেলার পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তড়িঘড়ি ঘরে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তাঁদের অনেকেই।

রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম সোমবার বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি বাংলার কোনও পরিযায়ী শ্রমিক এই ঘটনায় আহত বা নিহত হননি।’’ তিনি জানান, বীরভূমের কোনও পরিযায়ী শ্রমিক কাশ্মীর ছেড়ে রাজ্যে ফিরতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাশ্মীরে যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা রয়েছেন তাঁদের ফোন করা হচ্ছে।

কাশ্মীরের গান্ধেরবাল জেলার গগনগিরে রবিবার সন্ধ্যায় জঙ্গি হামলায় নিহত হন পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক ও এক চিকিৎসক। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গুন্ড এলাকায় শ্রীনগর-লে জাতীয় সড়কের জ়েড-মোড় সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ করছিলেন তাঁরা। সেই সময় আচমকা জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারান তাঁরা। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। জঙ্গিদের খোঁজে সেনা-তল্লাশি শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

নলহাটি ও মুরারই বিধানসভা এলাকার বহু শ্রমিক কাশ্মীরে কর্মরত। এলাকায় কাজ না-থাকায় পাইকর থানার নয়াগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার মানুষ আপেল বাগানে, চাষের কাজে ও নির্মাণ শ্রমিকের কাজে কাশ্মীরে রয়েছেন। জঙ্গি হামলার পরে আতঙ্কিত পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘরে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছেন। ট্রেনের টিকিট পেতে চেষ্টাও চালাচ্ছেন অনেকেই। কাশ্মীরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ জানান, যাঁরা চাষের কাজের জন্য কাশ্মীরে যান, তাঁদের সাহায্য করে থাকেন সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মানুষ। তাঁরা স্থানীয় রাজনীতি ও জঙ্গিদের বিষয়ে সেই ভাবে অবগত নন। অথচ জঙ্গিদের সহজ ‘নিশানা’ হন পরিযায়ী শ্রমিকেরা।

নয়াগ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আব্দুল খালেক, অলিউল শেখ ফোনে জানান, এখন তাঁরা কাশ্মীরের বারামুলায় রয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। ঘটনার কথা রাতে জেনেছেন। বিষয়টি পরিবারকে না জানালেও খবর দেখে পরিবারের লোকজন ফোন করতে শুরু করেন সোমবার সকাল থেকেই। পরিবারের সদস্যদের উদ্বেগ কাটাতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন জেলার বহু পরিযায়ী শ্রমিক।

এই হামলার পরে অন্য রাজ্যের শ্রমিকেরাও বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন। তাঁদের দাবি, সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে ভিন্‌ রাজ্যে যাচ্ছেন তাঁরা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলেই মজুরি মেলে সাতশো টাকা। অতিরিক্ত কাজে বাড়তি টাকা পাওয়া যায়। অথচ নিজের জেলায় তিনশো টাকার বেশি মজুরি নেই। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাশ্মীরে আসেন অনেকেই।

প্রসঙ্গত, মাস দুয়েকের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে জেলার তিন পরিযায়ী শ্রমিকের। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের ঠাণে জেলার কপুরবাউড়ি থানা এলাকার একটি নির্মীয়মাণ বহুতল থেকে গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয় নলহাটি থানার পানিটা গ্রামের বাসিন্দা সোমনাথ দেবনাথের (৩২)। ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হয় নলহাটি ২ ব্লকের গোকুলপুর গ্রামের আলিমুল শেখের (২১)। তিনি পুণেতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন।১২ অক্টোবর নলহাটি ২ ব্লকের নয়াপাড়া পঞ্চায়েতের গোকুলপুর গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় গোলকপতি মার্জিতের (৩৬) দেহ উদ্ধার করে মুম্বই পুলিশ। পর পর এত জনের মৃত্যু দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে কাশ্মীরে কর্মরত পরিযায়ীদের পরিবারের।

সোমবার সকালে পাইকর থানার নয়াগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, যে-সব পরিযায়ী শ্রমিক কাশ্মীরে রয়েছেন তাঁদের ফোন করে পরিবারের লোকজন সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। তেমনই দুই পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী ফরিদা বিবি, মাউনজেরা বিবি বলেন, ‘‘আমাদের খুব চিন্তা হয়। টিভিতে খবর দেখার পর থেকেই মন অস্থির করছে। স্বামীকে ফোন করে দ্রুত বাড়ি ফিরতে বলেছি।’’ তাঁদের সংযোজন, ‘‘আগে প্রাণ, দরকারে নুন ভাত খেয়ে জীবন কাটানো যাবে।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার দাবি, “রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই বলেই জেলার মানুষকে ভিন্ রাজ্যে যেতে হচ্ছে। কাশ্মীরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকেরা সুরক্ষিত বলে জেনেছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kashmir migrant labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy