Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাজিরা কেমন, দেখলেন মন্ত্রী

শ্রমিক ধর্মঘটের বিশেষ প্রভাব দেখা গেল না দুই জেলার শিল্পাঞ্চল এলাকাগুলিতে। বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে বামপন্থী শ্রমিকেরা এ দিন কাজে যোগ দেননি। তবে কলকারখানাগুলি খোলা ছিল। গঙ্গাজলঘাটি শিল্পাঞ্চলেও এ দিন বিভিন্ন কলকারখানা চালু ছিল।

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

শান্ত শিল্পাঞ্চল

শ্রমিক ধর্মঘটের বিশেষ প্রভাব দেখা গেল না দুই জেলার শিল্পাঞ্চল এলাকাগুলিতে। বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে বামপন্থী শ্রমিকেরা এ দিন কাজে যোগ দেননি। তবে কলকারখানাগুলি খোলা ছিল। গঙ্গাজলঘাটি শিল্পাঞ্চলেও এ দিন বিভিন্ন কলকারখানা চালু ছিল। এমটিপিএস সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে কর্মীদের হাজিরা ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশি। ছিল। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ধর্মঘটের বিশেষ প্রভাব পড়েনি। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চলের ডিভিসি এবং সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। তবে ডিভিসির পরিকাঠামো নির্মাণের একটি কাজে কিছু শ্রমিক যোগ দেননি। ধর্মঘটের সমর্থনে কিছু শ্রমিক ডিভিসির গেটে জড়ো হলেও তাঁরা কাউকে কাজে যোগ দিতে বাধা দেননি। উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল ইসিএলের দুই কয়লাখনি নিতুড়িয়ার দুবেশ্বরী ও পারবেলিয়াতেও। নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি ও পাড়ার স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলিতেও কাজকর্ম হয়েছে।

ঘুরল চাকা

শ্রমিক ধর্মঘটের দিন পুরুলিায় এবং বাঁকুড়ার পরিবহণ ব্যবস্থা মোটের উপরে সচলই ছিল। বাঁকুড়া থেকে খাতড়া, বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর-সহ বিভিন্ন রুটে স্বাভাবিক ভাবে বাস চলাচল করেছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রুটে এ দিন কোনও বাস চলেনি। জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল বলেন, “প্রশাসন ভরসা দিয়েছিল। হাতে গোনা দু’-একটি ছাড়া সব বাসই পথে নেমেছে।’’ দীপকবাবুর দাবি, শালী নদীর সেতুতে সমস্যা হওয়ার জন্য বাঁকুড়া-সোনামুখী বাস চলেনি। পুরুলিয়ার বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, জেলার চারশোর মধ্যে শ’ দেড়েক বাস পথে নেমেছিল। শুধু বাঘমুণ্ডি, ঝালদা এবং বান্দোয়ান থেকে শহরে কোনও বাস আসেনি। তিনি জানান, পুঞ্চা, নিতুড়িয়া এবং ছড়রায় কয়েকটি বাস অবরোধের মুখে পড়েছিল। বাস চললেও দুই জেলাতেই যাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা।

মন্ত্রীর নজর

ধর্মঘটের দিন কর্মীদের হাজিরা খতিয়ে দেখতে পুরুলিয়ার বিভিন্ন সরকারি অফিসে ঢুঁ মারলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি জেলাশাসকের অফিসে যান। বিভিন্ন দফতর ঘুরে ঘুরে কর্মীদের থেকে খোঁজ খবর নেন, তাঁদের অফিসে আসতে কোনও অসুবিধা হয়েছে কি না। সেখান থেকে তিনি যান জেলা শিক্ষা দফতরে। জেলা শিক্ষা পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রাধারানি মুখোপাধ্যায় মন্ত্রীকে জানান, তাঁর অফিসের সমস্ত কর্মীই হাজির। সেখান থেকে পাশের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের অফিসে গিয়ে দেখা করেন সংদদের সভাপতি হেমন্ত রজকের সঙ্গে। চিনি ছাড়া এক কাপ লাল চা খেয়ে বেরোনোর সময় মন্ত্রী বলেন, ‘‘কর্মীদের কারও কোনও সমস্যা হয়েছে কি না সেই খোঁজই নিলাম।’’

চেয়ার ভর্তি

সরকারি অফিস কাছারিতে এ দিন অধিকাংশ কর্মীই হাজির ছিলেন। বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, এ দিনের গড় হাজিরা প্রায় ৯৮ শতাংশ। কোনও কোনও দফতরে একশো শতাংশ হাজিরাও দেখা গিয়েছে। বিষ্ণুপুর এবং খাতড়ার মহকুমা অফিসেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। পুরুলিয়া জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, জেলা কালেক্টরেট ও অন্য অফিসগুলিতে এ দিন হাজিরা ছিল প্রায় ৯৪ শতাংশ। জেলা পরিষদে ৯৮ শতাংশ। বাঁকুড়ার ব্যাঙ্কগুলিতেও ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব পড়েছে। বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এ দিন বন্ধ ছিল। যেগুলি খোলা ছিল সেখানেও অন্য দিনের তুলনায় কম ভিড় চোখে পড়েছে।

চায়ে হাজিরা

বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে এ দিন দরজা খুলল না কংগ্রেস পরিচালিত ঝালদা পুরসভার। ধর্মঘটের বিরুদ্ধে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এ দিন পুরসভার সামনে বিক্ষোভও দেখানো হয়। সুনসান চত্বরের পাশে একটি চায়ের দোকানে দেখা মিলল পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সুপ্রভাত মজুমদারের। বললেন, ‘‘তালা খোলেনি। অনেক কর্মীই আসছেন। তাঁরা আমার কাছে সাদা কাগজে সই করে হাজিরা দিচ্ছেন।’’ এই সুযোগে বাড়তি কিছুটা ব্যবসা হওয়ায় খুশি চায়ের দোকানের মালিক রঞ্জিত কান্দু। জানালেন, হাজিরা দিতে এসে প্রায় সবাই একটু গলা ভিজিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকেই

মানবাজার শহরের ঘুম তখনও ভাল করে ভাঙেনি। তার আগেই গুরুত্বপূর্ণ অফিস, ব্যাঙ্কের শাখা, বাজারের রাস্তার দখল নিয়ে নিল পুলিশ। শুক্রবার সকালে আড়মোড়া ভেঙে বাইরে বেরোতেই মানবাজারের বাসিন্দারা দেখেন, রাস্তায় টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। এতো সাততাড়াতাড়ি কেন? এক পুলিশ কর্তা জানান, বছর দু’য়েক আগে এক বন্ধের সময় সাত সকালে বাম কর্মীরা অনেক অফিসের গেটে, দরজার কড়ায় পতাকা গুঁজে দিয়েছিলেন। পরে সে সব খুলতে গিয়ে বিস্তর ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল তাঁদের। সাবধানের মার নেই! তাই এ বারে ভোর হতে না হতেই দরজার সামনে পাহারা বসানো হয়েছিল, যাতে পতাকা গোঁজার সুযোগই না পায় কেউ।

ভালয় ভালয়

বেলা এগারোটা। ধর্মঘটের সমর্থনে সিপিএমের মিছিল বেরিয়েছে পুরুলিয়া শহরে। রাস্তায় তখন ঢোল, ধামসা, পতাকা নিয়ে উৎসবের মেজাজে। সিঙ্গুর বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। বিধানসভা ভোটের পরে জোটের বিজয় মিছিলের সময় পুরুলিয়ায় খোদ বিধায়কের সঙ্গেই দুই তৃণমূল নেতাকর্মীর ঝামেলা বেধেছিল। এদিনও এলাকায় মোতায়েন পুলিশ কর্মীরা আশঙ্কায় ছিলেন, দুই মিছিল মুখোমুখি হলে কোনও ঝামেলা না হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব কিছু ভালয় ভালয় মিটল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE