প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে যে এমন ফ্যাসাদে পড়তে হবে কে জানত!
সবে বাড়ির পথ ধরেছেন মাঝবয়সি সৌমিত্র রায়। হঠাৎই ‘হুপ’ শব্দে তাঁর ঘাড়ের উপর চেপে বসে একটি বাঁদর। আঁতরে উঠে চিৎকার করে ওঠেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর সঙ্গীরা চিৎকার করে ওঠেন— ‘‘বাঁদর চেপেছে। সর্বনাশ!’’ কিন্তু, তাকে নামায় কার সাধ্য। বাঁদর ততক্ষণে সৌমিত্রবাবুর টুপি পরা মাথা দু’হাতে ধরে, দুই পায়ে তাঁর ঘাড় চেপে ধরেছে। জোর করে নামাতে গেলে যদি কামড়ে কিংবা আঁচড়ে দেয় এই ভয়ে বাঁদরটিকে আর ঘাঁটাননি। কোনওরকমে বাড়ির তিনশো মিটার পথ বাঁদর ঘাড়েই সৌমিত্রবাবু হেঁটে যান। কিন্তু, ভাবতে পারেননি, আরও অনেক বাঁদরামি সহ্য করা তাঁর কপালে রয়েছে।
বুধবার সকালে ওই বাঁদর ঘাড়ে নিয়ে ব্যবসায়ী সৌমিত্রবাবু মাধবগঞ্জের মুচিগলিতে বাড়ি ঢুকতেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দরজা খুলতেই বাঁদরটা আমার ঘাড় ছেড়ে লাফিয়ে উঠে পড়ে স্ত্রী শিউলি রায়ের ঘাড়ে। স্ত্রীর চুল ধরে বাঁদর টানাটানি শুরু করে। স্ত্রী চিৎকার করে ওঠে।’’
তাঁদের ছেলে, একাদশ শ্রেণির ছাত্র জিৎ তখন ঘুমাচ্ছিল। মায়ের চিৎকারে সে মশারি ফেলে তেড়ে আসতেই বাঁদরটা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার হাঁটুতে বাঁদরটা আঁচড়ে রক্ত বার করে দেয়। এরপরে আর সেখানে দাঁড়য়নি বাঁদরটা। লাফিয়ে বেরিয়ে আসে রায় বাড়ি থেকে।
বিপদ বুঝে সৌমিত্রবাবু মোবাইলে সমস্ত কথা জানান ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবিলোচন দে-কে। তিনি ফোন করেন বন দফতরে। ততক্ষণে বাঁদর তখন রায় বাড়ি ছেড়ে পাশের রজক বাড়ির ছাদে উঠে পড়েছে। বাঁদরের রায় বাড়িতে বাঁদরামির খবর ছড়িয়ে পড়ায় পাড়ায় তখন হুলস্থূল পড়ে গিয়েছে। শশাঙ্ক রজক, সুশান্ত দত্ত, প্রতিমা রজকেরা বলেন, ‘‘কখন বাঁদরটা কার ঘরে ঢুকে পড়ে, ভয়ে দরজা এঁটে দিই।’’
কাউন্সিলরের অভিযোগ, ‘‘বন দফতরের চার কর্মী এসেছিলেন। কিন্তু, বাঁদর ধরার কোনও সরঞ্জাম তাঁদের সঙ্গে ছিল না। না ছিল জাল, না খাঁচা। লাঠি নিয়ে তাঁরা ঘোরাঘুরি করছিলেন আর মোবাইলে বাঁদরটা ছবি তুলে যাচ্ছিলেন।’’
উপায়ন্তর না দেখে সৌমিত্রবাবু এগিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটাকে যে ভাবে আঁচড়েছে, তাতে আগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু, বাঁদরটার কিছু ব্যবস্থা না করে যাওয়াও যাচ্ছিল না। তাই সাহস করে বাঁদরটাকে কলার লোভ দেখিয়ে কাছে ডাকি। ভেবেছিলাম, কোনও ভাবে লোভ দেখিয়ে ওকে বন দফতরের অফিসে দিয়ে আসব। কিন্তু, সে ব্যাটা যে ফের আমার ঘাড়ে চেপে বসবে, কে জানত!’’ বাঁদর সৌমিত্রবাবুর ঘাড়ে বসে কলা খেতে শুরু করে।
অগত্যা বাঁদর ঘাড়ে নিয়েই তিনি এক জনের মোটরবাইকে চেপে ২০ মিনিটের পথ বিষ্ণুপুর রেঞ্জ অফিসে যান। সেখানেই বন কর্মীদের হাতে বাঁদরটিকে তুলে দেন তিনি। তারপরে হাসপাতালে ছেলেকে ভ্যাকসিন দেওয়াতে ছোটেন।
কিন্তু, বনকর্মীদের ওই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মাধবগঞ্জের বাসিন্দারা। বিষ্ণুপুরের রেঞ্জ অফিসার শ্যামসুন্দর কর শর্মা বলেন, ‘‘তাড়াহুড়ো করে কর্মীরা জাল নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলেন। বাসিন্দারা বাঁদরটিকে তাড়ানোর জন্য ফোন করেছিলেন। ধরার জন্য বলেননি। বনকর্মীদের ভূমিকা কী ছিল, খোঁজ নিচ্ছি।’’