Advertisement
১১ মে ২০২৪

সদ্যোজাতকে খুনের অভিযোগে ধৃত মা

কয়েক বছর ধরে সন্তান চাইছিলেন। সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শও নিয়েছেন। কিন্তু জন্মের আট দিন পরে সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে কুয়োয় ফেলে হত্যা করার অভিযোগে তার মা-কেই গ্রেফতার করল পুলিশ।

এই কুয়ো থেকেই উদ্ধার হয় নবজাতকের দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

এই কুয়ো থেকেই উদ্ধার হয় নবজাতকের দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
Share: Save:

কয়েক বছর ধরে সন্তান চাইছিলেন। সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শও নিয়েছেন। কিন্তু জন্মের আট দিন পরে সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে কুয়োয় ফেলে হত্যা করার অভিযোগে তার মা-কেই গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে বাঁকুড়া শহরের পাটপুর এলাকার ঘটনা। সোমবার ধৃত মৃদুলা ঘোষালকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

মৃদুলাদেবীর শ্বশুর চণ্ডীদাস ঘোষাল জানান, ১৩ নভেম্বর বাঁকুড়া মেডিক্যালে অস্ত্রোপচার করে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই বধূ। সাত দিন হাসপাতালে থাকার পরে রবিবার সদ্যোজাতকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। রাতে সন্তানকে নিয়ে মা সুলেখা মিশ্রের সঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন। চণ্ডীদাসবাবু বলেন, ‘‘গভীর রাতে বৌমার চিৎকারে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়। ও বলছিল, একটা মেয়ে নাকি ঘরের ভিতরে ঢুকে বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে কুয়োয় ফেলে দিয়েছে।’’ এ দিকে কী ভাবে কী ঘটেছে তার কিছুই টের পাননি মৃদুলাদেবীর মা সুলেখাদেবী।

রাতেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে দমকল কর্মীরা গিয়ে কুয়ো থেকে সদ্যোজাতের দেহ উদ্ধার করেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশকে অচেনা মহিলার কথা বললেও পরে জেরার মুখে ভেঙে পড়েন মৃদুলাদেবী। পুলিশের দাবি, সন্তানকে নিজেই কুয়োয় ফেলে দিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই বধূ জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার করে সন্তানের জন্ম হওয়ায় তাঁর শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। সন্তানকে মানুষ করতে পারবেন না ভেবেই তিনি নাকি এই কাজ করেছেন।’’

মৃদুলাদেবীর স্বামী দেবীকান্ত ঘোষাল পেশায় বিমা সংস্থার এজেন্ট। বছর তিনেক আগে সম্বন্ধ করে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। পরিবারের দাবি, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সন্তান চাইছিলেন। বছর দেড়েক তাঁরা চিকিৎসকের পারমর্শও নিয়েছেন। গর্ভধারণের পরে খুশি ছিলেন মৃদুলাদেবী। ভাবি সন্তানের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলতেন। তিনিই এই কাজ করার পরে বিস্মিত পরিজনেরা। দেবীকান্তবাবু কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। সমানে কেঁদে চলেছেন তাঁর মা মাধবীদেবী। চণ্ডীদাসবাবু বলেন, “নাতনি হওয়ার পরে সবাই খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। আমার ছেলের প্রথম সন্তান ছিল। আমাদের খাওয়া পরার অভাব ছিল না। বৌমা কেন যে এটা করল!’’

মৃদুলাদেবীর মামা তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্বশুর বাড়ির লোকজন পুত্র সন্তানের জন্য ওকে কোনও দিন চাপ দেননি। ছোটবেলা থেকে ওর কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। এমএ পাশ করেছে। হঠাৎ কী করে এটা করে ফেলল বুঝতে পারছি না।’’ সন্তানের জন্মের পরে মেয়ের সঙ্গে টানা হাসপাতালে ছিলেন সুলেখাদেবী। তাঁর দাবি, ওই ক’দিন মৃদুলাদেবীর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখতে পাননি তিনিও।

তদন্তে নেমে পুলিশও অন্ধকারে। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

newborn killing mother Arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE