Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Missing Daughter

নিখোঁজ মেয়ের নথিপত্র আগলে চূড়ামণি

পরিবারটির দাবি, অণিমা ও পাশের বাড়ি থেকে তাঁর কাকা নন্দ বেসরাকে বের করে আনে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা সশস্ত্র লোকগুলি। পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যায়।

অণিমার (ইনসেটে) মা ও দাদা। লেদাম গ্রামের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

অণিমার (ইনসেটে) মা ও দাদা। লেদাম গ্রামের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল ও রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১৫
Share: Save:

রাতবিরেতে দরজায় শব্দ হলে এখনও সিঁটিয়ে যান চূড়ামণি বেসরা। দশ বছর আগে এক রাতে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের লেদাম গ্রামের এই বাড়িতেই হানা দিয়েছিল ‘বনপার্টি’। মাওবাদীরা। নিয়ে গিয়েছিল মেয়ে আর দেওরকে। দেওরের দেহ উদ্ধার হয়েছিল রাত পোহাতে। মেয়ে কোথায় আছে, এখনও জানেন না বৃদ্ধা।

সম্প্রতি খড়্গপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, জঙ্গলমহলের মাওবাদী সন্ত্রাসে দশ বছর বা তার বেশি সময় ধরে যাঁরা নিরুদ্দেশ, তাঁদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও এক জনকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। সে খবর জেনে চূড়ামণি বলেন, ‘‘হলে তো ভালই। মেয়েটার রোজগারেই সংসার চলত। ওকে আর কোনও দিন ফিরে পাব কি না, জানি না!’’

চূড়ামণিদেবীর মেয়ের নাম অণিমা। এখন বয়স হওয়ার কথা প্রায় ৫১ বছর। পাশের গ্রাম রাজাউলির অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চাকরি করে হাজার দেড়েক টাকা পেতেন। তাঁর স্মৃতি বলতে এখন টিনের বাক্সে ভরা তাড়া-তাড়া নথি। অণিমার বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার ‘অ্যাডমিট কার্ড’, অঙ্গনওয়াড়িতে নিয়োগের চিঠি, ভোটারকার্ড— সব আগলে রাখেন চূড়ামণি। ছেলে জগন্নাথ দিনমজুরি করেন। আর তিনি বার্ধক্যভাতার হাজার টাকা পান। তাতে চলে সংসার।

বান্দোয়ান ব্লকের একেবারে প্রান্তে কুমড়া পঞ্চায়েতের লেদাম গ্রাম। বান্দোয়ান-ঝাড়গ্রাম রাস্তা ধরে খেড়িয়াডি মোড় থেকে ডান দিকে বাঁক নিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যেতে হয়। রাস্তার দু’পাশে ঘন জঙ্গল। মাঝে খেড়িয়াডি, তাসগ্রাম, যশপুর, আমগোড়া, রাজাউলির মত ছোট ছোট জনপদ। লেদাম পার করে রাস্তা চলে গিয়েছে বেলপাহাড়ি।

জগন্নাথ জানান, দিনটা ছিল ২০১০ সালের ২২ অগস্ট। তখন দিনের আলো পড়তেই মাওবাদীদের আতঙ্কে বাড়ি-বাড়ি দরজায় খিল পড়ে যেত। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কড়া নাড়া শুনে জগন্নাথ জানিয়ে দিয়েছিলেন, দরজা খুলবেন না। কিন্তু কড়া গলায় বলা হয়েছিল, ‘বনপার্টি’।

পরিবারটির দাবি, অণিমা ও পাশের বাড়ি থেকে তাঁর কাকা নন্দ বেসরাকে বের করে আনে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা সশস্ত্র লোকগুলি। পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যায়। পরদিন ভোরে নন্দবাবুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় জঙ্গল থেকে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘অণিমা এখনও নিখোঁজ।’’

চূড়ামণি বলেন, ‘‘যখন নিয়ে যায়, কিছুই করতে পারিনি। মেয়েটার চোখের দিকেও তাকাতে পারছিলাম না। কী অপরাধ করেছিল ও, এখনও বুঝে পাই না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় জানান, অণিমা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সিপিএমের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিপিএম করতেন তাঁর কাকাও। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে কোনও খোঁজ নেওয়া হয়নি। এখন বিপন্ন ভাবমূর্তি ফেরাতে ত্রাণ ঘোষণা করা হচ্ছে। যারা এই সন্ত্রাস করেছে যারা, তারা আগে চাকরি পেয়ে গেল।’’

তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘মাওবাদীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরকারি সাহায্য আগেও করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর একটি মানবিক উদ্যোগ নিয়ে নিছক রাজনীতি করতে এ সব বলা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Missing Daughter Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE