E-Paper

মা-কাকিমার হাতে তৈরি নাড়ুর ঠাঁই স্মৃতিতে

বাজার দখল করছে ‘রেডিমেড নাড়ু’। নানা উপকরণে তৈরি নাড়ু এখন মেলে প্যাকেটে। সে নাড়ুর চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রিও হয় দেদার।

সৌরভ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৬
পুজো উপলক্ষে সিউড়ির টিকাপাড়া রোডে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেট করা নাড়ু।

পুজো উপলক্ষে সিউড়ির টিকাপাড়া রোডে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেট করা নাড়ু। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুর্গাপুজোর সঙ্গে ঘরে তৈরি নাড়ুর আত্মীয়তা বড় নিবিড়। দশমীর দিন বড়দের প্রণাম, সমবয়সিদের সঙ্গে কোলাকুলি করতে আসা পড়শি-পরিজনদের হাতে তৈরি নারকেলের নাড়ু দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর রীতিও শতাব্দী প্রাচীন। পুজো এলেই ঘরে-ঘরে গুড় জাল দেওয়া, মা-কাকিমাদের এক সঙ্গে বসে নারকেল কোড়ার ছবি বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে সেই কবেই।

গ্রামে সেই ঐতিহ্য কম-বেশি চালু থাকলেও শহর বা শহরাঞ্চল থেকে তা কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে। গত এক দশকে ঐতিহ্য হারানোর আক্ষেপ আরও তীব্র হয়েছে। কম-বেশি সকলেই স্বীকার করেন, এখন হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতে নাড়ু তৈরির ছবি দেখা যায়। পুজো এলে ঘরে-ঘরে ঠাকুমা-দিদিমা, মা-কাকিমারা স্মৃতির সমুদ্রে হারিয়ে যান।

বাজার দখল করছে ‘রেডিমেড নাড়ু’। নানা উপকরণে তৈরি নাড়ু এখন মেলে প্যাকেটে। সে নাড়ুর চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রিও হয় দেদার। সিউড়ি শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে প্যাকেটজাত নাড়ু আগেও মিলত। ইদানীং তার দেখা মিলছে দশকর্মা ভান্ডারেও। সিউড়ির টিকেপাড়া এলাকায় মহম্মদ সাজিদ ওরফে মাসুর মতো অনেকেই শুরু করেছেন প্যাকেটজাত নাড়ুর ব্যবসা। তাঁরা লক্ষ্য করেছিলেন, বাড়িতে নাড়ু তৈরির প্রবণতা কমে গেলেও পুজোর সময়ে ঘরে-ঘরে নাড়ুর সমাদর অটুট। সেই শূন্যতার বাণিজ্যিক ব্যবহার
করছেন তাঁরা।

সাজিদ জানান, বছর ছয় আগে সিউড়ি সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকার চার মহিলাকে নাড়ু তৈরি করে তা প্যাকেটজাত করার বরাত দিয়েছিলেন তিনি। প্রয়োজনীয় সমস্ত কাঁচামালও দেন। প্রথম বছরে প্রায় ৪০০০ টাকা বিনিয়োগে শ’দুয়েক প্যাকেট নাড়ু বিক্রি করেছিলেন।
চাহিদা বাড়তে থাকায় প্রত্যেক বছরই বাড়িয়েছেন বিনিয়োগের পরিমাণ। বেড়েছে লাভের অঙ্ক। সাজিদ জানান, এ বছর লক্ষাধিক টাকার নাড়ু বানিয়েছেন তিনি।

প্রত্যেক বছর বর্ষার সময়ে আখের গুড় ওঠার পরেই নাড়ু তৈরি শুরু করেন গ্রামের অনেক মহিলা। দুর্গাপুজোর মাসখানেক আগে থেকে দোকানে সেগুলি বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর নারকেল, সিউ, বোঁদে, ছোলা, মুড়ি, চিঁড়ে, তিল দিয়ে সাত রকমের নাড়ু বানিয়েছেন সাজিদ। সব মিলিয়ে ৩৫০০ প্যাকেট নাড়ু তৈরি হয়েছে।

অনেকেই নেমেছেন এই পেশায়। তাঁদের দাবি, পুজোর মরসুমে এই ব্যবসায় লাভের অঙ্ক বাড়ছে ফি বছর। এক ব্যবসায়ী বলেন, “শহর ও শহরের বাইরের বহু মানুষ প্রত্যেক বছর অনেক টাকার নাড়ু কেনেন। এ বার অনেক বেশি পরিমাণ নাড়ু বানালেও দশমীর আগেই সব শেষ হয়ে যাবে। লক্ষ্মীপুজোর আগে মুড়ির নাড়ু বানাতে হবে বলে মনে হচ্ছে।”খুশি বিক্রেতারাও। এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রত্যেক বছরই মোটা টাকার নাড়ু বিক্রি হয়। ইদানীং বিক্রি বাড়ছে হাতে বানানো নিমকিরও। দশমীর শুভেচ্ছা বিনিময়ের থালায় নাড়ুর পাশে জায়গা পাবে নিমকি।’’ সিউড়ির এক দশকর্মা ভান্ডারের মালিক বলেন, ‘‘গত বছর অল্প পরিমাণ নাড়ু রেখেছিলাম। চাহিদা দেখে এ বছর বরাত বাড়িয়েছি।’’

আক্ষেপ সেই একটাই— প্যাকেটের নাড়ুতে মা-কাকিমার হাতের ছোঁয়াটাই হারিয়ে গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy