Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Nalhati

গুজবে কান নয়, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসরে ব্লক প্রশাসন

নাগরিকত্বের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, এই গুজবে সোমবার সকাল থেকে দিনভর উত্তেজনা ছিল মুরারই ২ ব্লকের কামাড়খুর গ্রামে।

জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৪
Share: Save:

গুজব থামার নামই নেই। মুরারই ২ ব্লকে সিএসপিদের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ চলছে দেখে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ব্লক প্রশাসন স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল, সঙ্ঘের মহিলারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে কোনও তথ্য সংগ্রহ করেননি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইন্টারনেট সাথী প্রোগ্রামে কয়েক’টি এলাকায় কিছু স্থানীয় মহিলাদের মোবাইলের ব্যবহার সংক্রান্ত কিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। যার সঙ্গে এনআরসি, সিএএ বা এনপিআর-এর কোনও সম্পর্ক নেই।’ ওই বিজ্ঞপ্তিতে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

নাগরিকত্বের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, এই গুজবে সোমবার সকাল থেকে দিনভর উত্তেজনা ছিল মুরারই ২ ব্লকের কামাড়খুর গ্রামে। সোমবার দুপুরে বিডিও অফিসেও আসেন গ্রামের অনেকে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, সিএসপি-র ওই মহিলা কোনও বাড়িতে বলছেন, ব্লক থেকে আবার কোন বাড়িতে পঞ্চায়েত থেকে সমীক্ষা করতে পাঠিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বিডিও-র কাছে প্রশ্ন করেন, সরকারি ভাবে কি এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। ফলে বিডিও অফিস থেকে চলে গেলেও সন্ধ্যার পরে সিএসপির মহিলার বাড়িতে চড়াও হয় গ্রামের অনেকে। কিন্তু, আগে থেকেই ওই মহিলা বাড়ি ছাড়া ছিলেন। ফের মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামবাসীর অনেকে আবারও বিডিও অফিস ঘেরাও করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ঘেরাও চলে। বিক্ষোভকারীরা সিএসপিকে তাদের সামনে আনার জন্য বিডিওকে বলেন।

এর পরেই তড়িঘড়ি বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে ব্লক প্রশাসন। প্রশাসন জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহ একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে হয়েছে। তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। গ্রামীণ মহিলাদের আধুনিক ইন্টারনেট শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে ‘ইন্টারনেট সাথী’ প্রকল্প চালু হয়। টাটা ট্রাস্টস ও গুগুলের উদ্যোগে মহিলাদের জন্য এই ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রকল্প চালু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে কিছু গ্রামের বাছাই করা কিছু মহিলাকে ইন্টারনেট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষিত মহিলারা আবার নিজেদের এলাকায় গিয়ে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের সব মহিলাকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার পদ্ধতি শেখাচ্ছিলেন।

এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করল প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘মুরারই ২ ব্লকে এনআরসি ও সিএএ নিয়ে কোনও সমীক্ষা হচ্ছে না। আপনারা গুজবে কান দেবেন না।’ এই মর্মে ১৮টি গাড়িতে করে বিভিন্ন গ্রামে প্রচারও শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন। এর আগে রুদ্রনগর, মিত্রপুর ছাড়াও অনেক গ্রামে এই আতঙ্ক ছড়ায়। যদিও অনেকেই মনে করছেন, গুজব যে হারে বাড়ছিল তাতে আরও আগে
বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রশাসন স্পষ্ট করলে এমন অবস্থা হত না।

বিডিও (মুরারই ২) অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, “বেসরকারি সংস্থার হয়ে বেশ কয়েক জন মহিলা গ্রামে মোবাইল প্রশিক্ষণের কাজ করছে। এখন যেহেতু এনআরসি ও সিএএ নিয়ে আতঙ্ক চলছে, তাই মানুষ ভেবেছেন, সেই সংক্রান্ত সমীক্ষা হচ্ছে। গুজবের জন্যই এটা হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে গ্রামে গিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু হয়েছে।’’ এই নিয়ে মঙ্গলবার প্রত্যেকটি পঞ্চায়েতের প্রধান, সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে বৈঠক করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nalhati Rumours CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE