Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গার্ডওয়াল ভেঙে ধসল জাতীয় সড়ক

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, শনিবার মাঝরাতে জলের চাপে হঠাৎ ভেঙে যায় সেচখালের গার্ডওয়াল। প্রবল গতিতে জল বেরিয়ে সরাসরি ধাক্কা মারে জাতীয় সড়কের গায়ে। সেতু সংযোগকারী ওই অংশে রাস্তার উচ্চতা বেশ ভালই।

বিপর্যয়: ময়ূরাক্ষী সেচ ক্যানালের পাড় ভেঙে হু হু করে বইছে জল। সিউড়ির কাছে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বিপর্যয়: ময়ূরাক্ষী সেচ ক্যানালের পাড় ভেঙে হু হু করে বইছে জল। সিউড়ির কাছে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share: Save:

সেচখালের গার্ডওয়াল ভেঙে জলের তোড় ধসিয়ে দিল রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রায় ৬০ মিটার অংশ। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে সিউড়ি শহর থেকে ৬ কিমি দূরে চন্দ্রভাগা নদীর সেতুর ঠিক আগে। ক্ষতি সামলে ওই রাস্তায় যান চলাচল ফের কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে ধন্দে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এই বিপর্যয়ের জেরে বীরভূমের দুবরাজপুর, খয়রাশোল, ইলামবাজারের সঙ্গে সিউড়ি ১ নম্বর ব্লকের কিছু অংশ এবং রানিগঞ্জ-আসোনসোলের সঙ্গে বীরভূমের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হল। জেলায় ঘুরে আসতে আসতে হবে কলকাতা এবং দুর্গাপুরের বাসকেও।

জাতীয় সড়কের (ডিভিশন ১২) এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘সেচ দফতর এই সেচখালে জল সরবরাহ বন্ধ করে দিলেও বর্ষার জমা জল রয়েছে। জল কমলেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু হবে। তবে কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এখনই বলা যাচ্ছে না।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষিজমিতে জলসেচের সুবিধার জন্য ৫০ বছরেরও বেশি আগে ময়ূরাক্ষী জলাধার থেকে বিশালপুর, ২২ কিলোমিটার এই সেচখালটি তৈরি হয়েছিল। চন্দ্রভাগা নদীর উপর দিয়ে অনেকটা ওভারব্রিজের ধাঁচে এই সেচখালটি রয়েছে। ঠিক পাশ দিয়েই গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বর্ষাকালে টইটম্বুর হয়ে থাকে সেচখালটি।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, শনিবার মাঝরাতে জলের চাপে হঠাৎ ভেঙে যায় সেচখালের গার্ডওয়াল। প্রবল গতিতে জল বেরিয়ে সরাসরি ধাক্কা মারে জাতীয় সড়কের গায়ে। সেতু সংযোগকারী ওই অংশে রাস্তার উচ্চতা বেশ ভালই। ঘণ্টা দু’য়েক ক্রমাগত জলের ধাক্কা সয়ে শেষ পর্যন্ত হুড়মুড়িয়ে ধসে যায় রাস্তা। দু’পাশে আটকে পড়ে অসংখ্য ভারী যানবাহন। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, ‘‘খবর পাওয়া মাত্র সেচ দফতরকে বলে জল বন্ধ করানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সব কিছু যাতে দ্রুত স্বাভাবিক হয়, সেটা আমি নিজেও সেটা দেখছি।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা মিলল বেসরকারি টেলিকম সংস্থার কারিগরি বিভাগের কর্মী অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর চোখের সামনেই জলের তোড়ে ধসে গিয়েছে জাতীয় সড়কের প্রায় ৬০ মিটার অংশ। অভিষেক বলছেন, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ হঠাৎ এই অংশের সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। কেন সেটা হল দেখতে রাত আড়াইটে নাগাদ চন্দ্রভাগা সেতুর কাছে এসে দেখি ওই কাণ্ড। গার্ডওয়াল ভেঙে প্রবল শক্তিতে জল বেরিয়ে আসছে। ভোর চারটে নাগাদ দেখি ধসে যাচ্ছে জাতীয় সড়কটাই।’’

একটু ভোর হতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে কাছের পলসড়া, ভুরকুনা, পানুরিয়া, উত্তররায়পুর এলাকায়। দলে দলে লোক জন ছুটে আসতে থাকেন। বেকায়দায় পড়েন সেতুর দু’দিকে আটকে পড়া দূরপাল্লার ভারী যানচালকেরা। ট্যাঙ্কার নিয়ে গুয়াহাটি যাওয়ার পথে আটকে পড়েছেন অরূপ গগই। পাঁচামি থেকে স্টোনচিপস নিয়ে কলকাতার পথে যাওয়ার দাঁড়িয়ে গিয়েছেন ডাম্পার চলক শাহ আলমও। তাঁদের কথায়, ‘‘কী করব বুঝতে পারছি না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল, মুক্ত বাগদি, বুধন দলুইদের আবার অভিযোগ, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের অভাব তো আছেই। তার উপরে অতিরিক্ত জল ছাড়ায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’’

যদিও সে কথা মানতে নারাজ সেচ দফতরের সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (ময়ূরাক্ষী ক্যানাল সেচ) দেবাশিস রায়। তিনি বলেন, ‘‘সেচখাল সাধারণত মাটি থেকে কম উচ্চতায় থাকে। এক্ষেত্রে চন্দ্রভাগা নদীর উপর দিয়ে অনেকটা ওভারব্রিজের ধাঁচে সেতুটি আছে। তাতেই কোনও ভাবে দুর্বল হয়ে বিপর্যয় হয়েছে।’’ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দুবরাজপুর থেকে বক্রেশ্বর হয়ে কিংবা চিনপাই থেকে পারুলিয়া হয়ে বিকল্প পথে আটকে পড়া গাড়িগুলিকে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Highway Guardwall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE