Advertisement
E-Paper

দিনভর চেষ্টা, খনিতে নেই যুবতীর খোঁজ

সঙ্গীত নাগ

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৫
উদ্ধার: সুস্মিতার খোঁজে পরিত্যক্ত কয়লাখনিতে নামছেন এনডিআরএফ-এর ডুবুরি বিশ্বজিৎ মান্ডি। রবিবার নিতুড়িয়ার রানিপুরে। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার: সুস্মিতার খোঁজে পরিত্যক্ত কয়লাখনিতে নামছেন এনডিআরএফ-এর ডুবুরি বিশ্বজিৎ মান্ডি। রবিবার নিতুড়িয়ার রানিপুরে। নিজস্ব চিত্র

দিনভর চেষ্টা চালিয়েও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কয়লাখনি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে পারল না। শুক্রবার সকালে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের রানিপুরে ইসিএলএ-এর পরিত্যক্ত খনিতে এক যুবতী ঝাঁপ দেন বলে খবর চাউর হয়। তার পর থেকে টানা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। রবিবার ভোর ৬টা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের কুড়ি জন জওয়ান। দুপরে খনির মধ্যে ডুবুরি নামানো হয়। কিছুক্ষণ পরে অসুস্থ হয়ে তিনি উঠে আসেন। খনির ভিতরে যে ভাবে বিষাক্ত গ্যাস জমে রয়েছে, তার মধ্যে কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করছে এনডিআরএফ।

রানিপুর গ্রামের প্রান্তে ইসিএলের পরিত্যক্ত কয়লাখনিটি রয়েছে। ওই গ্রামেরই বছর বাইশের যুবতী সুস্মিতা গোপ। আগামী মার্চে তাঁর বিয়ের কথা হয়েছিল। শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সুস্মিতা। তার পরে এক জন নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে জানান, তিনি ওই যুবতীকে খনির ভিতরে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন।

খবর পেয়েই উদ্ধারের কাজে তৎপর হয় প্রশাসন। প্রথমে পাঠানো হয় সিভিল ডিফেন্সকে। তারা ব্যর্থ হওয়ার পরে দুর্গাপুর থেকে আসে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তারাও না পারায় মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর উদ্যোগী হয়ে উদ্ধার কাজে এনডিআরএফকে আনান। শনিবার রাতে নদীয়ার হরিণঘাটা থেকে এনডিআরএফের দলটি পৌঁছয় নিতুড়িয়ায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঠিক হয়, রবিবার সকাল থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হবে।

তার আগে দড়ি দিয়ে কয়লাখনির মুখের অংশ ঘিরে দিয়েছিল নিতুড়িয়া থানার পুলিশ। কাউকেই ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি। রবিবার সকাল ৬টা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। সাড়ে তিন দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়লাখনির ভিতরের অবস্থা নিয়ে কোনও তথ্যই ছিল না এনডিআরএফের কাছে। খনির মধ্যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে জমে থাকা জল ও বিষাক্ত গ্যাসে প্রথমে ডুবুরি নামানো যায়নি।

দু’টি বড় বালতিতে জল ভরে খনির দু’দিক দিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা ভিতরে জমে থাকা জলের উপরে ফেলতে শুরু করেন। এনডিআরএফ জানাচ্ছে, এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ওয়াটার সাকিং’। ভিতরের জল তোলপাড় হলে আটকে থাকা যুবতীর ভেসে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সকাল ৬টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত এ ভাবে নাগাড়ে চেষ্টা করেও ফল মেলেনি।

শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই নামনে দলের ডুবুরি বিশ্বজিৎ মান্ডি। মিনিট পঁচিশ তিনি ভিতরে ছিলেন। বন্ধ খনির বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে উঠতে বাধ্য হন। তবে পঞ্চাশ-ষাট ফুট নীচে নেমেও ডুবুরি কারও সন্ধান পাননি বলে জানা গিয়েছে। দুপুরের পরে উদ্ধারকাজ স্থগিত করে দেয় এনডিআরএফ।

এনডিআরএফ-এর দলটির দায়িত্বে থাকা ইনস্পেক্টর চিন্ময় কাত্যায়ন এ দিন বলেন, ‘‘বন্ধ হয়ে যাওয়া সাতশো ফুট গভীর কয়লাখনির ভিতরে এই ধরনের উদ্ধারকাজ আগে আমরা করিনি। এটা নতুন অভিজ্ঞতা।” তিনি জানান, উদ্ধার কাজে মূল সমস্যা হচ্ছে জমে থাকা জল ও বিষাক্ত গ্যাসে। তাঁর দাবি, সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করে খনির মধ্যে নেমেছিলেন ডুবুরি। ৩৫ ফুট পর্যন্ত নামতে পারতেন। কিন্তু প্রায় ষাট ফুট পর্যন্ত নেমে দেখেছেন। কাউকে পাওয়া যায়নি। ওই যুবতী অন্তত একশো-দেড়শো ফুট নীচে কোথাও আটকে থাকতে পারেন বলে মনে করছে এনডিআরএফ। তবে এখনই উদ্ধার কাজ বন্ধ করছে না তারা। চিন্ময়বাবু বলেন, ‘‘প্রশাসন যেমন নির্দেশ দেবে সেই মতো কাজ করা হবে।”

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি। ঘণ্টাখানেক ছিলেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন নিতুড়িয়ার তৃণমূলের সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবও। বিকেলে যুবতীর বাবা সুধীরবাবুর সঙ্গে দেখা করেন এনডিআরএফের ইনস্পেক্টর চিন্ময়বাবু। সুস্মিতাকে উদ্ধারে সর্ব শক্তি দিয়ে তাঁরা কাজ করে চলেছেন বলে তাঁর বাবাকে জানিয়েছেন তিনি।

Coal Mine ECL NDRF
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy