Advertisement
E-Paper

সনাতনের ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ

আগাম তা আঁচ করেই সনাতনকে নিয়ে কার্যত চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়েছে পুলিশ। নিয়ম মতো আদালতে তোলার আগে বন্দিদের সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৪
সোচ্চার: ফাঁসির দাবি। নিজস্ব চিত্র

সোচ্চার: ফাঁসির দাবি। নিজস্ব চিত্র

সাড়ে তিন বছরের শিশুর উপরে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ সামনে আসার পরেই তার কঠিন শাস্তি দাবি করেছিলেন পরিবারের লোকজন। পড়শিরাও চটে আগুন। পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামের শিশু নির্যাতনে মূল অভিযুক্ত সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) ফাঁসি চেয়ে শহরে মিছিল বের করেছিলেন বাসিন্দারাও। তাই সনাতনকে হাতে পেয়ে আদালতে চত্বরে ঝাঁকে ঝাঁকে পুলিশ নামিয়ে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলল পুলিশ প্রশাসন। তাকে দেখতে প্রচুর ভিড়ও হয়েছিল। বুধবার নজিরবিহীন এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পুরুলিয়া আদালত। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিক্ষোভ ঠেকিয়ে রাখা যায়নি।

আগাম তা আঁচ করেই সনাতনকে নিয়ে কার্যত চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়েছে পুলিশ। নিয়ম মতো আদালতে তোলার আগে বন্দিদের সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে আসানসোল স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে সনাতনকে নিয়ে পুলিশ হারমাডিতে নিতুড়িয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরুলিয়া মফস্সল থানায় (এই থানাতেই একসময়ে হোমগার্ড হিসেবে কাজ করত সনাতন)।

সেখানে সে দিব্যি খোসমেজাজেই ছিল। জানা গিয়েছে, ছোট্ট ঘুম দিয়ে এ দিন সকালে সে বার তিনেক চা ও জলখাবারে রুটি-সব্জি খেয়েছে। দাগি আসামী না হলেও, তার ভাবলেশহীন চেহারা দেখে পোড় খাওয়া পুলিশ কর্মীরাও অনেকে অবাক হয়ে যান। তবে প্রকাশ্যে যখনই সনাতনকে নিয়ে আসা হয়েছে, সে আসানসোল স্টেশন হোক কিংবা আদালত চত্বরে, তার মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়।

আদালতে তোলা হচ্ছে, খবর ছড়িয়ে পড়তে শহরবাসী তো বটেই, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ো হয়ে যান। ততক্ষণে ঝালদার এসডিপিও কল্যাণ সিংহ রায়, বলরামপুরের সিআই দেবাশিস পাহাড়ি, চার-পাঁচটি থানার ওসি ও প্রচুর পুলিশ ঘিরে ফেলে আদালত চত্বর। বেলা ১২টা নাগাদ পাইলট ভ্যান-সহ পুলিশের চারটি গাড়ি সবেগে ঢোকে আদালতে। পিছনের গাড়ি থেকে মুখে কালো কাপড় ঢাকা সনাতনকে ঘিরে ধরে দ্রুত আদালতের মধ্যে ঢুকে পড়েন পুলিশ কর্মীরা। ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হয় ভিড়।

তার আগেই বিজেপির মহিলা মোর্চা সনাতনের ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে গিয়েছে। সনাতনের নিয়ে আসার কিছুক্ষণ আগে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যানার নিয়ে এসে শহরের কিছু বাসিন্দা ফাঁসি দাবি করেন। লোকজনের মধ্যেও সনাতনকে নিয়ে নানা রকম মন্তব্য শোনা যাচ্ছিল। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নৃশংস ওই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সনাতনের উপরে লোকজন চড়াও হতে পারেন, এই আশঙ্কাতেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’’ তবে পুলিশকে স্বস্তি দিয়ে ওই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

এ দিন প্রথমে তাকে মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক কুমকুম চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে তোলা হয়। তবে খুনে অভিযুক্ত সনাতনের বিরুদ্ধে পকসো-র ৬ ধারায় মামলা চলায় পরে তাকে বিশেষ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সুযশা মুখোপাধ্যায়ের সামনে হাজির করানো হয়। জানা গিয়েছে, এ দিন আদালতের মধ্যেও নির্বিকার ভাবেই দাঁড়িয়েছিল সনাতন। সেখানে শুধু পুলিশ কর্মীরাই ঢোকেন।

ওই আদালত বেশ কিছু দিন ধরেই আইনজীবীরা বয়কট করছেন। ফলে সনাতনের পক্ষেও যেমন আইনজীবী ছিল না, তেমনই সরকার পক্ষের আইনজীবীও ছিলেন না। ভবিষ্যতেও সনাতনের পক্ষে পুরুলিয়া আদালতের কোনও আইনজীবীই সওয়াল করবেন না বলে এ দিন জানিয়েছেন পুরুলিয়া আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতুলচন্দ্র মাহাতো। তিনি দাবি করেন, ‘‘জঘন্যতম অপরাধের অভিযুক্ত সনাতনের উপযুক্ত শাস্তিই হওয়া উচিত। আমরা আইনজীবীরা আপাতত এই মামলায় তার পক্ষে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তই নিয়েছে। আমরা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকেও অনুরোধ জানাব, যাতে তার পক্ষে কোনও আইনজীবী যেন নিয়োগ না করা হয়।’’

Neighbours Sanatan Goswami Punishment সনাতন গোস্বামী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy