E-Paper

বইমেলায় ভিড় বাড়ছে নতুন প্রজন্মের

স্মার্টফোন নতুন প্রজন্মকে গল্পের বই-বিমুখ করেছে বলে অভিযোগ সমাজের একাংশের। এ বারের বইমেলার অভিজ্ঞতা থেকে সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ বই বিক্রেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৬
পুরুলিয়া বইমেলায় বই প্রেমীদের ভিড় আনন্দ পাবলিশার্সের স্টলে।

পুরুলিয়া বইমেলায় বই প্রেমীদের ভিড় আনন্দ পাবলিশার্সের স্টলে। —নিজস্ব চিত্র।

বই বিক্রি বাড়ল পুরুলিয়া বইমেলায়। ক্রেতাদের মধ্যে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের সংখ্যাও এ বার নজরকাড়া। যা নিয়ে উৎসাহীত বইমেলার আয়োজকেরা। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক সুমন চট্টপাধ্যায় জানান, তরুণ প্রজন্মের পাঠকেরা মেলায় এসেছে বই কিনছে, বই দেখছে, বইয়ের খোঁজ নিচ্ছে, এটা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।

আজ, বুধবার শেষ হচ্ছে বইমেলা। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক বলেন, ‘‘গতবার মেলায় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার (মুদ্রিত মূল্যের হিসেবে) বই বিক্রি হয়েছিল। এ বার মেলার পঞ্চম দিন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ ৭০ লক্ষ টাকা ছুঁয়েছে। শেষ দিন গ্রন্থাগারগুলির কেনা বইয়ের টাকা দেওয়া হবে। তাতে বই বিক্রির টাকার পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’’

স্মার্টফোন নতুন প্রজন্মকে গল্পের বই-বিমুখ করেছে বলে অভিযোগ সমাজের একাংশের। এ বারের বইমেলার অভিজ্ঞতা থেকে সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ বই বিক্রেতারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এখন ব্যোমকেশ, ফেলুদা, পাণ্ডব গোয়েন্দা, মিতিন মাসিতে মেতে রয়েছে। প্রফেসর শঙ্কু-র মতো কিশোর সাহিত্যও বাজার টানছে।

ব্যোমকেশের বই হাতে রঘুনাথপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মধুমিতা রায় বলেন, ‘‘ফেলুদা, পাণ্ডব গোয়েন্দা আছেই। এ বার ব্যোমকেশ কিনলাম।’’ পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা তৃষিত কুন্ডু কিনেছে ফেলুদার বই। জয়পুরের বাসিন্দা স্কুল পড়ুয়া অনুষ্কা চৌধুরী জানায়, টিনটিন সমগ্র পেয়ে অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হল। বই বিক্রেতা সুদীপ রায় থেকে সুদর্শন মণ্ডলের কথায়, ‘‘সাধারণ পাঠকের সঙ্গে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাই প্রচুর বই কিনছে।’’

জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জেলা বইমেলা ছাড়াও এখন জেলার বিভিন্ন ব্লকে বইমেলা হয়। নতুন প্রজন্ম বই কিনছেন, এটা অবশ্যই সদর্থক দিক।’’

জেলা গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক মৃণালকান্তি মণ্ডল জানান, নতুন প্রজন্মের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই বইয়ের প্যাকেট। এটা অবশ্যই ভাল লক্ষণ। বইয়ের প্যাকেট বস্তাবন্দি করার সময় রঘুনাথপুরের দুরমুট বাণী পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক বলাই মণ্ডল বলেন, ‘‘অধিকাংশ বই কিনেছি নতুন প্রজন্মের চাহিদা মেনেই। কারণ বইমেলা ফুরোলেই তরুণ পাঠকেরা এসে সেই বইগুলিই চাইবে।’’

অন্য বইয়ের চাহিদাও রয়েছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে। ঝালদা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নারায়ণ মাহাতো বলেন, ‘‘পুরনো ভারতবর্ষের উপরে কোনও বইয়ের খোঁজে এসেছিলাম। পেয়েও গেলাম।’’

অযোধ্যাপাহাড় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক অমিতাভ দত্ত বিভিন্ন স্টল ঘুরে জেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বই সংগ্রহ করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘‘হিলটপে আমাদের গ্রন্থাগারে পর্যটকদেরও আনাগোনা বাড়ছে। তাঁরা এসে জেলার কী বই রয়েছে, খোঁজ করেন। তাঁদের জন্য পুরুলিয়া জেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বই পৃথক একটি আলমারিতে রাখা হয়েছে। সেই সংগ্রহে নতুন কী বই সংযোজন করা যায়, সেগুলি খুঁজে দেখছি।’’

এ বার বইমেলার সূচনার দিনে সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র বলেছিলেন, তিনি কমবেশি শখানেক বইমেলার সূচনা করেছেন। কিন্তু সূচনা লগ্নে বইকে ঘিরে পুরুলিয়ায় এত মানুষের উপস্থিতি তাঁকে মুগ্ধ করেছে। মেলার বাকি দিনগুলিতে বইপ্রেমী মানুষের সেই উন্মাদনাই দেখা গিয়েছে, দাবি আয়োজকদের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy