শুকনো মাঠে পড়ে রয়েছে ধানের চারা। পুরুলিয়া ২ ব্লকের চরগালি গ্রামে প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।
ক্যালেন্ডার বলছে এখন ভরা বর্ষাকাল। কিন্তু প্রকৃতি আপাতত ক্যালেন্ডারের তোয়াক্কা করছে না। এ দিকে মাথায় হাত পড়েছে জেলার চাষিদের। অন্য বছর এই সময় তাঁরা খেতে প্রায় আধ হাঁটু জলে দাড়িয়ে বৃষ্টি মাথায় চারা রোয়ার কাজ করেন। বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় এই মরসুমে রোয়ার কাজ থমকে রয়েছে।
পুরুলিয়ার চাষিদের একাংশ জানান, গত বছর এই সময় অধিকাংশ জমিতেই ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই মরসুমে ছবিটা অন্য রকম। চারার বয়স প্রায় মাস দেড়েক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জমিতে সেগুলি রোয়ার জন্য জমিতে যতটা জল থাকার দরকার, তা নেই। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত শতকরা ১৪ ভাগ জমিতে ধান রোয়া হয়েছে। তবে কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এখনও আশা রয়েছে। তাঁদের দাবি, আগেও শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত রোয়ার নজির রয়েছে। জেলার এক কৃষিকর্তা বলেন, ‘‘আশা করছি আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রোয়ার কাজ বেশ কিছুটা এগিয়ে যাবে।’’
যদিও সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন বেশ কিছু এলাকার চাষিরা। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কম বেশি সব ব্লকেই চাষের কাজ বেশ পিছিয়ে আছে। বিশেষত দক্ষিণ পুরুলিয়ার বেশ কিছু এলাকায়। বোরো থানার জামতোড়িয়া গ্রামের চাষি নীলকমল সিং এবং মধুসূদন সিং বলেন, ‘‘সারা জুলাই জুড়ে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে। আগস্টে পরিমাণ কিছুটা বড়লেও যথেষ্ট নয়। হাল দিতে গিয়ে দেখেছি, ওপরে খানিকটা ভিজে ভাব থাকলেও জমির ছয় ইঞ্চি নিচে ধুলো উড়ছে। টানা কয়েক দিন মুষল ধারে বৃষ্টি না হলে ধান রোয়া যাবে না।’’ জেলার কৃষি তথ্য আধিকারিক সুশান্ত দত্ত জানান, পুরুলিয়ায় বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২৮০ মিলিমিটার। এই বছর, এখনও পর্যন্ত সাকুল্যে ৫৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পরিসংখ্যানের হিসাবে বৃষ্টি যতটা কমেছে, চাষে তার প্রভাব পড়েছে আরও বেশি। মানবাজারের ব্লক কৃষি আধিকারিক শান্তিগোপাল কর্মকার জানান, জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে চাষিরা চারা তৈরির কাজে নেমে পড়েন। জুলাইয়ে ভাল বৃষ্টি না হওয়ায় মানবাজার ১ ব্লকের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির চারা ধসা রোগে নষ্ট হয়ে গেছে। এ দিকে রোয়ার জন্য জমিতে যতটা জল থাকা দরকার, তা-ও নেই। পাড়া, ঝালদা, জয়পুর, মানবাজার, বরাবাজারের মতো ব্লকগুলিতেও শতকরা ৬ থেকে ৮ ভাগ জমিতে রোয়ার কাজ হয়েছে। তবে পুরুলিয়া ১-সহ দু’একটি ব্লকে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে রোয়া হয়ে গিয়েছে।
জেলার ৭৮ হাজার হেক্টর জমি খাতায় কলমে সেচ সেবিত বলে নথিভুক্ত। কিন্তু চাষিদের দাবি, গরমে নদী, নালা, খাল-বিল শুকিয়ে ফুটিফাটা হয়ে যায়। সেচের জল মিলবে কোথা থেকে! ফলে নিম্নচাপের দিকেই এই মরসুমে চেয়ে থাকেন তাঁরা। কিন্তু শুধু প্রকৃতির মর্জির উপর ভরসা রাখতে এখন সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই। জেলার কৃষি আধিকারিকরা জানান, অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত কতটা চাষের কাজ এগোয় তা নজরে রাখছেন তাঁরা। প্রয়োজনে যাতে বিরি, অড়হর, লুটনি, সরষে এবং ভুট্টার মতো বিকল্প চাষ করা যেতে পারে তার আয়োজনও করে রাখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy