Advertisement
E-Paper

বন্ধ নিয়োগ, সঙ্কটে গ্রন্থাগার পরিষেবা

স্নাতকে ভাল নম্বরের জন্যে দু’টি সহায়ক বই কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন কলেজ শিক্ষক। টাকার অভাবে সে বই কিনতে পারেননি পুরুলিয়া শহরের একটি কলেজের বাংলার প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি ভেবেছিলেন গ্রন্থাগার থেকে তুলে পড়ে নেবেন। কিন্তু কোথায় কী! বেশ কয়েক বার গ্রন্থাগারে ঢুঁ মেরেও নির্দিষ্ট বইয়ের খোঁজ পাননি ওই ছাত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৫

চিত্র ১: স্নাতকে ভাল নম্বরের জন্যে দু’টি সহায়ক বই কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন কলেজ শিক্ষক। টাকার অভাবে সে বই কিনতে পারেননি পুরুলিয়া শহরের একটি কলেজের বাংলার প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি ভেবেছিলেন গ্রন্থাগার থেকে তুলে পড়ে নেবেন। কিন্তু কোথায় কী! বেশ কয়েক বার গ্রন্থাগারে ঢুঁ মেরেও নির্দিষ্ট বইয়ের খোঁজ পাননি ওই ছাত্র।

চিত্র ২: আজ লাগদা। কাল দক্ষিণবহাল। পরশু আবার উদয়পুর। এক সঙ্গে তিনটে গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এক জন। পালা করে তিনটে ব্লকের তিন প্রান্তে অবস্থিত গ্রন্থাগারগুলিতে ছুটছেন তিনি। নিট ফল সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই বন্ধ থাকছে গ্রন্থাগার। ফিরছেন পাঠক।

পুরুলিয়ার গ্রন্থাগার পরিষেবার এমন ছবিই এখন দস্তুর। প্রয়োজনের অর্ধেক গ্রন্থাগারিক ও কর্মী নিয়ে কার্যত ধুঁকছে পরিষেবা। সপ্তাহের অর্ধেক দিন বন্ধ থাকছে বহু গ্রন্থাগার। এই ছবিটা অবশ্য একেবারেই হালের নয়। চলে আসছে কয়েক বছর ধরেই। গ্রন্থাগার কর্মীদের দুটি সংগঠনের কর্তা সুনীল মাহাতো ও অভিজিৎ চৌধুরী খেদের সঙ্গে জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে পাঠকদের গ্রন্থাগারমুখী করা দূর, বরং কমছে পাঠক সংখ্যা।

পুরুলিয়ায় অযোধ্যার সরকারি একটি গ্রন্থাগার বাদ দিলে জেলায় সরকার পোষিত গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১১৭টি। এর মধ্যে জেলা সদর পুরুলিয়ায় রয়েছে জেলা গ্রন্থাগার। অপর মহকুমা সদর রঘুনাথপুর শহরে রয়েছে মহকুমা গ্রন্থাগার। জয়পুর, ঝালদা, মানবাজার ও রঘুনাথপুরের গোবিন্দপুরে শহর গ্রন্থাগারে সংখ্যা চারটি। বাকি ১১১টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার।

ঘটনা হল, গ্রন্থাগারিক ও কর্মীর অভাব শুধু গ্রামের সমস্যা নয়। একই অবস্থা জেলা, মহকুমা ও শহর গ্রন্থাগারেও। জেলা গ্রন্থাগারের কর্মী তথা পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির সম্পাদক সুনীল মাহাতো জানান, জেলা গ্রন্থাগারে থাকার কথা ১০ জন কর্মীর। রয়েছেন অর্ধেক। কর্মী সংখ্যার অপ্রতুলতায় পাঠকদের সঠিক পরিষেবা দিতে স্বভাবতই সমস্যায় পড়ছেন কর্মীরা। রঘুনাথপুর মহকুমা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক শোভনলাল মুর্মু গোবিন্দপুর শহর গ্রন্থাগারেরও দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্টারনেটের যুগে সাধারণ মানুষের বই এর প্রতি আগ্রহ এমনিতেই কমছে। তার মোকাবিলা করতে না পারলে পাঠক হু হু করে কমে যাবে। সে ক্ষতি সমাজের।’’

কর্মীর অভাবে গ্রন্থাগার চালাচ্ছেন দারোয়ান অথবা নৈশ প্রহরী— এমন উদাহরণও রয়েছে। নিতুড়িয়ার ভামুরিয়ার গ্রন্থাগারে কোনও স্থায়ী কর্মী নেই। কাশীপুরের গ্রন্থাগরিক ভামুরিয়ার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। যে দিন তিনি কাশীপুরে থাকেন, সে দিন ভামুরিয়ার গিয়ে ওই গ্রন্থাগার চালান রঘুনাথপুরের গোবিন্দপুরের শহর লাইব্রেরির দারোয়ান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রন্থাগারিকের কথায়, ‘‘এক জন পাঠক কী ধরনের বই চাইছেন তা শুনে অতিরিক্ত কোনও বই রেফারেন্স হিসাবে দেখার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, সেটা কোনও নৈশপ্রহরী বা দারোয়ানের পক্ষে বোঝা কষ্টকর। দুঃখের হল তেমনটাই হচ্ছে।’’

বোঝার উপরে শাকের আঁটির মতো রয়েছে বইয়ের অভাব। এ সব কারণে ক্ষোভ জমেছে পাঠকদের মধ্যে। একই কথা গ্রন্থাগারিকদের সম্পর্কেও বলা যায়। এঁদেরই এক জনের কথায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা গ্রন্থাগারে যাওয়ার জন্য কোনও ভাতা পান না গ্রন্থাগারিকরা। গাঁটের কড়ি খরচ করে যাতায়াত করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত এলাকার গ্রন্থাগারে যাওয়ার জন্য যানবাহনও মেলে না। সে ক্ষেত্রে গাড়ি বা অটো ভাড়া করে যেতে হচ্ছে গ্রন্থাগারিকদের। জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় গ্রন্থাগারিকের শূন্যপদ রয়েছে ৫১। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তথা জেএলএ-এর (জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেনন্ডান্ট) পদ শূন্য রয়েছে ৫৪টি। অর্থাৎ, জেলার ১১৭টি গ্রন্থাগারের মধ্যে কমবেশি পঁয়তাল্লিশ শতাংশ গ্রন্থাগারে স্থায়ী গ্রন্থাগারিক নেই।

কর্মী সংগঠনের কর্মকর্তা সুনীল মাহাতো বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন হল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এক জনকে একাধিক গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। শুধুমাত্র কর্মী সংখ্যার অভাবে পাঠকদের গ্রন্থাগারমুখী করার চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।” সুনীলবাবুর সঙ্গে সহমত কোটশিলার একটি গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক তথা শাসকদল প্রভাবিত সংগঠন বঙ্গীয় সাধারণ গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির নেতা অভিজিৎ চৌধুরী। কোটশিলার ওই গ্রন্থাগারে কোনও কর্মী না থাকায় একাই সব সামলাতে হয় অভিজিতবাবুকে। তাঁর কথায়, যে দিন কাজে জেলা সদরে যেতে হয় সে দিন গ্রন্থাগার বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাম আমল থেকেই পুরুলিয়ায় গ্রন্থাগারের কর্মী নিয়োগ কার্যত হয়নি। সঙ্কট গভীর হয়েছে।”

শাসকদল প্রভাবিত সংগঠন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার নির্বাচনের আগেই রাজ্যে ৫২০ জন কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই প্রস্তাব এখন অর্থ দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ‘‘কর্মী নিয়োগ হলে তবেই সমস্যা মিটবে’’— বলছেন জেলা গ্রন্থাগারিক আধিকারিক (ডিএলও) মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও।

বন্ধ নিয়োগ, সঙ্কটে গ্রন্থাগার পরিষেবা

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পুরুলিয়া

চিত্র ১: স্নাতকে ভাল নম্বরের জন্যে দু’টি সহায়ক বই কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন কলেজ শিক্ষক। টাকার অভাবে সে বই কিনতে পারেননি পুরুলিয়া শহরের একটি কলেজের বাংলার প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি ভেবেছিলেন গ্রন্থাগার থেকে তুলে পড়ে নেবেন। কিন্তু কোথায় কী! বেশ কয়েক বার গ্রন্থাগারে ঢুঁ মেরেও নির্দিষ্ট বইয়ের খোঁজ পাননি ওই ছাত্র।

চিত্র ২: আজ লাগদা। কাল দক্ষিণবহাল। পরশু আবার উদয়পুর। এক সঙ্গে তিনটে গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এক জন। পালা করে তিনটে ব্লকের তিন প্রান্তে অবস্থিত গ্রন্থাগারগুলিতে ছুটছেন তিনি। নিট ফল সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই বন্ধ থাকছে গ্রন্থাগার। ফিরছেন পাঠক।

পুরুলিয়ার গ্রন্থাগার পরিষেবার এমন ছবিই এখন দস্তুর। প্রয়োজনের অর্ধেক গ্রন্থাগারিক ও কর্মী নিয়ে কার্যত ধুঁকছে পরিষেবা। সপ্তাহের অর্ধেক দিন বন্ধ থাকছে বহু গ্রন্থাগার। এই ছবিটা অবশ্য একেবারেই হালের নয়। চলে আসছে কয়েক বছর ধরেই। গ্রন্থাগার কর্মীদের দুটি সংগঠনের কর্তা সুনীল মাহাতো ও অভিজিৎ চৌধুরী খেদের সঙ্গে জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে পাঠকদের গ্রন্থাগারমুখী করা দূর, বরং কমছে পাঠক সংখ্যা।

পুরুলিয়ায় অযোধ্যার সরকারি একটি গ্রন্থাগার বাদ দিলে জেলায় সরকার পোষিত গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১১৭টি। এর মধ্যে জেলা সদর পুরুলিয়ায় রয়েছে জেলা গ্রন্থাগার। অপর মহকুমা সদর রঘুনাথপুর শহরে রয়েছে মহকুমা গ্রন্থাগার। জয়পুর, ঝালদা, মানবাজার ও রঘুনাথপুরের গোবিন্দপুরে শহর গ্রন্থাগারে সংখ্যা চারটি। বাকি ১১১টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার।

ঘটনা হল, গ্রন্থাগারিক ও কর্মীর অভাব শুধু গ্রামের সমস্যা নয়। একই অবস্থা জেলা, মহকুমা ও শহর গ্রন্থাগারেও। জেলা গ্রন্থাগারের কর্মী তথা পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির সম্পাদক সুনীল মাহাতো জানান, জেলা গ্রন্থাগারে থাকার কথা ১০ জন কর্মীর। রয়েছেন অর্ধেক। কর্মী সংখ্যার অপ্রতুলতায় পাঠকদের সঠিক পরিষেবা দিতে স্বভাবতই সমস্যায় পড়ছেন কর্মীরা। রঘুনাথপুর মহকুমা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক শোভনলাল মুর্মু গোবিন্দপুর শহর গ্রন্থাগারেরও দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্টারনেটের যুগে সাধারণ মানুষের বই এর প্রতি আগ্রহ এমনিতেই কমছে। তার মোকাবিলা করতে না পারলে পাঠক হু হু করে কমে যাবে। সে ক্ষতি সমাজের।’’

কর্মীর অভাবে গ্রন্থাগার চালাচ্ছেন দারোয়ান অথবা নৈশ প্রহরী— এমন উদাহরণও রয়েছে। নিতুড়িয়ার ভামুরিয়ার গ্রন্থাগারে কোনও স্থায়ী কর্মী নেই। কাশীপুরের গ্রন্থাগরিক ভামুরিয়ার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। যে দিন তিনি কাশীপুরে থাকেন, সে দিন ভামুরিয়ার গিয়ে ওই গ্রন্থাগার চালান রঘুনাথপুরের গোবিন্দপুরের শহর লাইব্রেরির দারোয়ান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রন্থাগারিকের কথায়, ‘‘এক জন পাঠক কী ধরনের বই চাইছেন তা শুনে অতিরিক্ত কোনও বই রেফারেন্স হিসাবে দেখার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, সেটা কোনও নৈশপ্রহরী বা দারোয়ানের পক্ষে বোঝা কষ্টকর। দুঃখের হল তেমনটাই হচ্ছে।’’

বোঝার উপরে শাকের আঁটির মতো রয়েছে বইয়ের অভাব। এ সব কারণে ক্ষোভ জমেছে পাঠকদের মধ্যে। একই কথা গ্রন্থাগারিকদের সম্পর্কেও বলা যায়। এঁদেরই এক জনের কথায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা গ্রন্থাগারে যাওয়ার জন্য কোনও ভাতা পান না গ্রন্থাগারিকরা। গাঁটের কড়ি খরচ করে যাতায়াত করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত এলাকার গ্রন্থাগারে যাওয়ার জন্য যানবাহনও মেলে না। সে ক্ষেত্রে গাড়ি বা অটো ভাড়া করে যেতে হচ্ছে গ্রন্থাগারিকদের। জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় গ্রন্থাগারিকের শূন্যপদ রয়েছে ৫১। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তথা জেএলএ-এর (জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেনন্ডান্ট) পদ শূন্য রয়েছে ৫৪টি। অর্থাৎ, জেলার ১১৭টি গ্রন্থাগারের মধ্যে কমবেশি পঁয়তাল্লিশ শতাংশ গ্রন্থাগারে স্থায়ী গ্রন্থাগারিক নেই।

কর্মী সংগঠনের কর্মকর্তা সুনীল মাহাতো বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন হল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এক জনকে একাধিক গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। শুধুমাত্র কর্মী সংখ্যার অভাবে পাঠকদের গ্রন্থাগারমুখী করার চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।” সুনীলবাবুর সঙ্গে সহমত কোটশিলার একটি গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক তথা শাসকদল প্রভাবিত সংগঠন বঙ্গীয় সাধারণ গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির নেতা অভিজিৎ চৌধুরী। কোটশিলার ওই গ্রন্থাগারে কোনও কর্মী না থাকায় একাই সব সামলাতে হয় অভিজিতবাবুকে। তাঁর কথায়, যে দিন কাজে জেলা সদরে যেতে হয় সে দিন গ্রন্থাগার বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাম আমল থেকেই পুরুলিয়ায় গ্রন্থাগারের কর্মী নিয়োগ কার্যত হয়নি। সঙ্কট গভীর হয়েছে।”

শাসকদল প্রভাবিত সংগঠন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার নির্বাচনের আগেই রাজ্যে ৫২০ জন কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই প্রস্তাব এখন অর্থ দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ‘‘কর্মী নিয়োগ হলে তবেই সমস্যা মিটবে’’— বলছেন জেলা গ্রন্থাগারিক আধিকারিক (ডিএলও) মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও।

recruitment library
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy