রাজগ্রাম বিবেকানন্দ হিন্দু বিদ্যালয়ে সোমবার। নিজস্ব চিত্র
উচ্চমাধ্যমিকেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে বাঁকুড়ায়। তবে জেলা শিক্ষা প্রশাসনের কাছে ‘মন্দের ভাল’ খবর এই যে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীর সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু ছাত্রের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে বাঁকুড়ায় গতবারের থেকে কম পরীক্ষার্থী এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে। এ বছর বাঁকুড়া থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসা পড়ুয়ার সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় কম ছিল।
জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া জেলায় ৮৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রে মোট ৩৪ হাজার ৭৯২ পরীক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে বসবে। গতবারের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৯৭২ জন। ছাত্রের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ২৫৭ জন। ছাত্রীর সংখ্যা অবশ্য গতবারের তুলনায় ২৮৫ জন বেড়েছে।
জেলা থেকে ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় খুশি প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষক সংগঠনগুলি। যদিও এর কারণ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে তৃণমূলপন্থী এবং বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনগুলির মধ্যে। ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ বা ‘সবুজসাথী’র প্রকল্পগুলির কারণেই ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। একই অভিমত প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি তথা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য গৌতম দাস। তিনি বলেন, “আগে মাধ্যমিক বা অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পরেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হত। এখন কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মত প্রকল্পগুলি মেয়েদের উচ্চশিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করছে। তারই ফল হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাঁকুড়ায় উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে।” যদিও এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলেই মনে করেন বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র বাঁকুড়া জেলা সহ সম্পাদক আশিস পাণ্ডে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাম আমলেও ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছিল। ছাত্রীরা এখন আগের থেকে পড়াশোনার প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল। সেই কারণেই ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।’’
কেন পরীক্ষায় বসা ছাত্রের সংখ্যা কমছে তার নির্দিষ্ট কোনও ব্যাখ্যা নেই শিক্ষা দফতরের কাছে। তবে বেশ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষের অভিমত, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরই কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা থেকে যাওয়ায় উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রের সংখ্যা কমতে পারে। এই প্রশ্নে তাঁদের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন আশিসবাবু। তাঁর সংযোজন, ‘‘এসএসসি বা পিএসসি-র মতো পরীক্ষাগুলি নিয়মিত হয় না। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ছাত্রেরা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বাইরে কাজ করতে চলে যাচ্ছে।’’ গৌতমবাবুর মন্তব্য, ‘‘ছাত্র পরীক্ষার্থী কিছুটা কমেছে ঠিক। তবে এই হ্রাস উদ্বেগজনক নয়।”
মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন জায়গায়। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মোবাইল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতেও দেখা গিয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীকে। আজ, মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। সেখানে ওই ধরনের ঘটনা এড়াতে এবার বাড়তি সতর্ক শিক্ষাদফতর। তাই প্রশ্নফাঁস, নকল বা অন্য অবাছ্ছিত কাজকর্ম ঠেকাতে এবার আরও কড়া শিক্ষা প্রশাসন।
পরীক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘণ্টা আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মোবাইল নিয়ে কেউ ঢুকছে কিনা তা জানতে চেকিংও করা হবে পরীক্ষার্থীদের। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পঙ্কজ সরকার বলেন, “কোনও ভাবেই যাতে পরীক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy