Advertisement
E-Paper

‘ভোট দিতে পারব তো’, প্রশ্ন বাহিনীকে

চার গ্রাম ঘুরে একটি প্রশ্নেই থমকাল কেন্দ্রীয় বাহিনী। হোঁচট খেলেন জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা এসেছে, সে খবর চাউর হতেই মিঞা পাড়ার নিজের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর পঞ্চান্ন’র লুঙ্গি-গেঞ্জির মীর জুলফিকার আলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০২:০৩
ভরসার হাত। বুধবার নানুরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

ভরসার হাত। বুধবার নানুরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

চার গ্রাম ঘুরে একটি প্রশ্নেই থমকাল কেন্দ্রীয় বাহিনী। হোঁচট খেলেন জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।

গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা এসেছে, সে খবর চাউর হতেই মিঞা পাড়ার নিজের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর পঞ্চান্ন’র লুঙ্গি-গেঞ্জির মীর জুলফিকার আলি। সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দেওয়াটা এ বার নিশ্চিত করতে পারবেন তো?’’

কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং প্রশাসনের কর্তারা আশ্বস্ত করতে না করতেই কার্যত হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন লুঙ্গি-গেঞ্জি। ‘‘২০১১ এবং ২০১৪ সালের বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে কমবেশী হলেও এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল। তা স্বত্ত্বেও ভোট দিতে যাওয়ার সময় কাকে ভোট দিচ্ছি তা দেখার জন্য পিছু নিয়েছিল কিছু যুবক। প্রতিবাদ করাতে অবশ্য পিছু হটে। কিন্তু সবাই তো আর প্রতিবাদ করতে পারে না। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার করতে হয় তাঁদের। তাই অনেকেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই সব যুবকদের মর্জিমাফিক ভোট দিতে হয়। নয়তো বাড়ি থেকেই বেরই হন না অনেকে।’’

একটানা কথাগুলো বলে থামলেন আরএসপি’র রাজ্য কমিটির সদস্য, জুলফিকার আলি।

তাঁর গ্রাম নবস্থা নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের অধীন। রাজ্য-রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দেওয়া হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল ওই পঞ্চায়েতেরই সূঁচপুরে। সেই হত্যাকাণ্ডের সহানুভূতির হাওয়া পালে লাগিয়ে নানুরে তৃণমূলের উত্থান হয়। ২০০৩ সালে লাগোয়া থুপসড়া পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল-বিজেপি জোট। কারণ সূচপুরে নিহত ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুরের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন থুপসড়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। থুপসড়া দখল করলেও নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতে দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। বরং ওই এলাকায় বারবার আরএসপি’র সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছে সিপিএমের। এমনকী যে সব ত্রিস্তর নির্বাচনে আসন রফা হয়নি সেইসব ক্ষেত্রে একে অন্যের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের অভিযোগ পর্যন্ত তুলেছেন।

কিন্তু ওই পর্যন্তই। কাজের কাজ কিছু হয়নি। সেসময় তৃণমূল বহু আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি। সীমিত সংখ্যক যে সব আসনে প্রার্থী খাড়া করত সে সব আসনে বুথে এজেন্টদের বসতেই দেওয়া হত না। নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আর্কষণ করেও কোনও লাভ হত না বলে অভিযোগ। ঘটনা হল, গত নির্বাচনে বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। বর্তমানে পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদায়ী বিধায়ক গদাধর হাজরার সঙ্গে যুবনেতা কাজল সেখের দড়ি টানাটানি চলছে। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে স্বস্তিতে নেই তৃণমূল সমর্থকেরাও। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে সেই একই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে বামেদের মুখেও। বুধবার সেই আভাসই মিলেছে আরএসপি নেতার কথাতে।

এ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রায় ৫০ জনের একটি দল নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের নবস্থা, সূঁচপুর, শেহালা এবং জলুন্দি পঞ্চায়েতের পালিটা গ্রামে ‘রুটমার্চ’ করে। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক নিবিল ঈশ্বরারী, জেলা ভূমি-রাজস্ব আধিকারিক নীলকমল বিশ্বাস, বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ, নানুরের বিডিও মৃণালকান্তি বিশ্বাস, ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রশাসনের কর্তারা গ্রামবাসীদের ‘কেউ হুমকি দেখাচ্ছে কিনা’ জাতীয় ধরা বাঁধা প্রশ্ন করেন। গ্রামবাসীরাও গতে বাঁধা উত্তর দেন।

এ দিন অভিযোগ জানানোর জন্য অবশ্য একটি ‘টোল ফ্রি’( ১৮০০৩১৩৭৪৬৪) নম্বর দেওয়া হয় গ্রামবাসীদের। প্রশাসনের সামনে মুখ না খুললেও প্রায় প্রতিটি গ্রামেই শোনা গিয়েছে অন্য কথা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকেই বা কি হবে? এর আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা ছিল রীতিমতো হতাশাব্যঞ্জক। একই সুর শোনা গিয়েছে স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্যের মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রেখে যে ভাবে ভোট করেছে শাসকদল, তাতে এবারে আর না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’

paramilitary forces election security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy