পুরুলিয়ায় কুষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পড়ে থাকা কাঠের গুঁড়ি।—নিজস্ব চিত্র
বনদফতরের আধিকারিককে হেনস্থা করে কাঠ বোঝাই গাড়ি নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠল। বুধবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার ঘটনা। এই ঘটনার পাশাপাশি, পুরুলিয়ার একটি কুষ্ঠ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গাছ কাটানোর অভিযোগ উঠে এসেছে। পুরুলিয়া কংসাবতী (উত্তর) বিভাগীয় বন আধিকারিক সোমা দাস জানান, গাছ কাটা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বনদফতর। পালিয়ে যাওয়া লরিটির নম্বর-সহ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বন ও ভূমি বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো এবং ওই বিষয়ক স্থায়ী সমিতির সদস্য সুমিতা সিংহ মল্লর দাবি, এলাকার একটি কুষ্ঠ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দির মধ্য থেকে গাছ কেটে দু’টি গাড়িতে করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে তাঁরা খবর পান। শহরের এক প্রান্তে, ভাটবাঁধের কাছে ওই প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে তাঁরা দেখতে পান, একটি শাল এবং একটি মেহগনি গাছ কাটা হয়েছে। তাঁদের দাবি, শাল কাঠ নিয়ে একটি গাড়ি আগেই চলে গিয়েছিল। অন্য গাড়িটিতে মেহগনি কাঠ বোঝাই করা হচ্ছিল। কিছু বড় গুঁড়ি ছড়িয়েছিল আশপাশে। হলধরবাবুদের দাবি, গাড়িটির চালকের কাছে কাঠ নিয়ে যাওয়ার বৈধ অনুমতি পত্র ছিল না। তাঁরা বনদফতরে খবর দেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুরুলিয়ার বিট অফিসার কাদল পাণ্ডে। অভিযোগ, তিনি যখন চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, সেই সময় বেশ কয়েকজন জড়ো হয়ে গাড়িটি ছেড়ে দিতে বলেন। তিনি রাজি না হলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। শুরু হয় হেনস্থা করা। কাদল পাণ্ডে পুলিশে ফোন করে সাহায্য চাইতে গেলে তাঁর মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গাড়ির কাছ থেকে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে দূরে নিয়ে যাওয়া হয় আর সেই সুযোগে কাঠ নিয়ে গাড়িটি পালিয়ে যায়। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘গাড়িটি বেরিয়ে যাওয়ার পরে মোটরবাইক নিয়ে পিছু ধাওয়া করেছিলাম। কিন্তু নাগাল পাইনি।’’
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকটি বড় গুঁড়ি মাটিতে পড়ে রয়েছে। কুষ্ঠ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, গাছগুলি তাঁরা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। যারা গাছ কিনে, কেটে নিয়ে যাচ্ছিল তারাই বিষয়টির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কাদের বিক্রি করা হয়েছিল গাছগুলি? জবাবে সদুত্তর মেলেনি কারও কাছ থেকেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকালেও কিছু গাছের ক্ষেত্রে কাটার আগে বনদফতরের লিখিত অনুমতি প্রয়োজন হয়। হলধরবাবুর দাবি, শাল ও মেহগনি গাছ কাটার অনুমতিপত্র ওই প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকেরা দেখাতে পারেননি। বিট অফিসার কাদল পাণ্ডেও জানান, গাছ কাটার জন্য বনদফতরের কাছে প্রতিষ্ঠানটির তরফে কোনও আবেদন করা হয়নি।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিষ্ঠানের কর্মী পঞ্চানন গরাঁই বলেন, অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি তাঁদের জানা না থাকায় আবেদন করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ওই গাছগুলির জন্য বিদ্যুৎ পরিষেবায় সমস্যা হচ্ছিল। কিছু দিন আগেই শর্ট সার্কিট হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে দু’টি গাছ কেটে ফেলা হয়। বাকি কোনও গাছেই হাত দেওয়া হয়নি।’’ বন দফতরের আধিকারিককে হেনস্থার বিষয়টি তাঁর জানা নেই দাবি করে তিনি বিষয়টির নিন্দাও করেন।
বন দফতর সূত্রের খবর, পালানোর আগে কাঠ বোঝাই অবস্থায় গাড়ির ছবি তোলা রয়েছে। ডিএফও সোমা দাস বলেন, ‘‘গাড়ির নম্বর দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ পাশাপাশি অনুমতি না নিয়ে গাছ কাটার জন্য বন সংরক্ষণ আইন মোতাবেক তদন্তও করা হবে বলে তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy