Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাতে বোমাবাজি, মেটেলায় গুরুতর জখম প্রৌঢ়

রাতভর দু’পক্ষের বোমাবাজিতে তেতে উঠল দুবরাজপুরের মেটেলা গ্রাম। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, উন্নয়নমূলক কাজের টাকার ‘বখরা’ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়েছিল। 

 ক্ষত: দুবরাজপুরের মেটেলায়। নিজস্ব চিত্র

ক্ষত: দুবরাজপুরের মেটেলায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১৫
Share: Save:

রাতভর দু’পক্ষের বোমাবাজিতে তেতে উঠল দুবরাজপুরের মেটেলা গ্রাম। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, উন্নয়নমূলক কাজের টাকার ‘বখরা’ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়েছিল।

সেই সংঘাতকে কেন্দ্র করেই সোমবার রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নাগাড়ে বোমাবাজি হয় মেটেলায়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসতে হল বিশাল পুলিশবাহিনীকে। বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন গঙ্গাধর মণ্ডল নামে স্থানীয় এক প্রৌঢ়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, তার পরে সিউড়ি জেলা হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত গঙ্গাধরবাবুকে ভর্তি করানো হয়েছে কলকাতার এসএসকেএমে। তাঁর ডান পায়ের ঊরুর কাছের অংশ বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। গোটা ঘটনায় গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, ওই গ্রামে বোমাবাজির পর ডেপুটি পুলিশ সুপারের (সদর) নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়েছিল। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গোহালিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সবচেয়ে বড় গ্রাম এই মেটেলা। সাড়ে ৫ হাজার বাসিন্দা মিলিয়ে গ্রামের তিনটি সংসদ— গোবিন্দপুর-মতিজাপুর, মেটেলা ও মুর্গাতলা। গ্রামের যে এলাকায় সোমবার রাতে বোমাবাজি হয়, মুর্গাতলা নামে সেই সংসদে গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য নেই। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরেই তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থী মারা যান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত শাসকদলের হয়ে কিছু উঠতি নেতাই মুর্গাতলা সংসদের কাজের দেখভাল করেন। পাড়ারই কিছু যুবকের সঙ্গে শাসকদলের ওই অংশের কর্মীদের বেশ কিছুদিন ধরে সংঘাত চলছিল। তা নিয়ে গ্রাম এমনিতেই তেতে ছিল। সোমবার রাতে সেটাই চরমে ওঠে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

বোমার আঘাতে জখম গঙ্গাধরের পরিবারের সদস্য এবং ওই পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাসকদলের সাত-আট জন নেতার হাতেই এলাকার চূড়ান্ত ক্ষমতা। ১০০দিনের কাজ, রাস্তা ঢালাই, আবাস যোজনা বা অন্য কোনও উন্নয়নমূলক কাজের টাকার একটা বড় অংশ ওরা পায়। পাড়ার কিছু তরুণ-যুবক চেয়েছিলেন, ভাগ দিতে হবে তাঁদেরও। সেই আক্রোশে হামলা বোমাবাজি হয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর একাংশের। গঙ্গাধরের স্ত্রী সারথি মণ্ডল বলেন, ‘‘হামলাকারীরা আসলে মারতে চেয়েছিল আমার সদ্য সাবালক ছেলে বিশ্বজিৎকে। কিন্তু ওকে না পেয়ে ওঁর বাবাকে লক্ষ্য করেই বোমা ছোড়ে। কারণ বেনিয়মের প্রতিবাদ করেছিল আমাদের ছেলেই।’’

একই অভিযোগ গ্রামের তরুণ অক্ষয় জমাদারের মা চিন্তা জমাদারের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন এ ভাবে কয়েক জন মিলে গরিব মানুষের জন্য আসা টাকার অংশ ভোগ করবে, সেটারই প্রতিবাদ করেছিল আমার ছেলে। বলেছিল, এ ভাবে চলবে না আমাদেরও সঙ্গে নিতে হবে। সেই জন্য ওরা এসে আমার বাড়িতে বোমাবাজি করেছে। আমাদের সদর দরজা ভেঙে দিয়েছে। কোনও ক্রমে ঘরে ঢুকে নিজেদের বাঁচিয়েছি।’’

মুর্গাতলার আশপাশের পাড়ার বাসিন্দারাও এ দিন অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা কিছু যুবকের জন্যই অশান্তি শুরু হয়েছে।

সোমবার রাতে কমপক্ষে ২৫টি বোমা ফেটেছে বলে তাঁদের দাবি। গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘এমন পরিবেশ কোনও দিন ছিল না এই গ্রামে। খুব আতঙ্কে রয়েছি।’’ এখনও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি গঙ্গাধর বা অন্য কারও পরিবার। গঙ্গাধরের ভাই কাজল মণ্ডল বলন, ‘‘দাদার চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত রয়েছি। ফিরে এসেই থানায় ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করব।’’

যাঁদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তাঁদের এ দিন দেখা মেলেনি। গ্রামবাসীর মৌখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জন অভিযুক্তকে অবশ্য পুলিশ আটক করেছে।

যদিও গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান তথা মেটেলা গ্রামেরই বাসিন্দা অরুণ দাস সরকারি প্রকল্পে বেনিয়মের অভিযোগ বা দলের যোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি,

‘‘আমাদের দলের কারও সঙ্গে সোমবার রাতের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। ওটা পারিবারিক বিবাদ।’’ একই বক্তব্য তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রামপদ দাসের। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। দলের সঙ্গেও কোনও সম্পর্ক নেই। বাড়ির মাহিলারা জানেন না বলেই একথা বলেছেন।’’ তাঁর দাবি, ঝামেলাটা আসলে গ্রামের দু’দল তরুণের মধ্যে। একটি ক্লাবে ওঠাবসা নিয়ে ওদের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা যে এমন মারাত্মক আকার নেবে বুঝিনি। পুলিশ নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Crime Bombing Dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE