‘অপারেশন মুসকান’ অভিযানে ধরা পড়া পুরুলিয়ার সাত কিশোরকে ফেরাল ছত্তীসগঢ় পুলিশ। শনিবার রাতে ছত্তীসগঢ়ের রাইপুর থেকে বরাবাজার থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা এই সাত কিশোরকে জেলায় পৌঁছে দেয় ছত্তীসগঢ় চাইল্ড লাইন ও পুলিশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এগারো মাস আগে বরাবাজারের হিজলা, নিশ্চিন্তপুর, ফতেপুর, চিরকুন্ডি, কুকুরচাড়ি গ্রাম থেকে আট কিশোরকে স্থানীয় এক যুবক কাজ দেওয়ার নাম করে ছত্তীসগঢ়ে নিয়ে যায়। তারপর থেকে এরা সেখানেই ছিল। জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক শিশির মাহাতো জানান, ‘অপারেশন মুসকান’ অভিযানে এদের খোঁজ মেলে। তারপর বাড়ির ঠিকানা জেনে ছত্তীসগঢ় চাইল্ড প্রোটেকশন কমিশনার পশ্চিমবঙ্গের চাইল্ড প্রোটেকশন কমিশনারকে গোটা ঘটনা জানান। স্টেট চাইল্ড প্রোটেকশন কমিশনার বিষয়টি পুরুলিয়ার জেলাশাসককে জানান। তারপরই বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শনিবার রাতেই সাত কিশোরকে পুরুলিয়ায় ফেরানো হয়েছে। এদের আপাতত আদ্রার এক হোমে রাখা হয়েছে।
জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিটের সদস্য অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিভিন্ন রাজ্যেই অপারেশন মুসকান নামে এই অপারেশন চালানো হয়। এটি আদতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প। স্থানীয় পুলিশ, চাইল্ড লাইন, শ্রম দফতর, চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট এই অভিযানে সামিল হয়। বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে শিশু শ্রমিক রয়েছে কিনা বা যারা রয়েছে, তাদের সঠিক পরিচয় পত্র রয়েছে কিনা, কাউকে আটকে রাখা হয়েছে কিনা এ সবই খতিয়ে দেখা হয়।
সে রকমই এক অভিযানে, গত এপ্রিলে সাত কিশোরের খোঁজ মেলে। বিষয়টি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন জানার পরে বরাবাজারের ওই গ্রামগুলিতে খোঁজ নেওয়া হয়। তখনই সামনে আসে গোটা ঘটনা। জানা যায়, স্থানীয় এক আড়কাঠির মাধ্যমে এরা এগারো মাস আগে ছত্তীসগঢ়ে গিয়েছিল। সেখানে কাজ দেবে বলা হয়েছিল। যে হোমে এদের ঠাঁই হয়েছে তার সম্পাদক নবকুমার দাস বলেন, ‘‘ছেলেগুলির সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এলাকার পরিচিত কোনও ব্যক্তির মাধ্যমে এরা ছত্তীসগঢ়ে পৌঁছয়। বাড়িতে কোনও কাজ নেই বলেই এদের ভিন্রাজ্যে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করত। মজুরিও পেত ওরা।’’
বেশ কিছু দিন কাজ করার পরে আর সেখানে থাকতে ভাল লাগছিল না বলে জানায় ওই কিশোররা। কেন? হোম সূত্রের খবর, একটি ছোট তাঁবুর মধ্যে থাকতে হত। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগও রাখতে পারত না তারা। এক দিন এক ফাঁক পেয়ে এদেরই এক জন বাড়িতে ফোন করে। সেই ফোন পেয়ে বাড়ির লোক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপরেই উদ্যোগী হয় প্রশাসন। গোটা বিষয়টি জানানো হয় ছত্তীসগঢ় চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিটকে। এরপরেই. অপারেশন মুসকান অভিযান!
এ দিন যাদের ফেরানো হল তাদের এক জন রাহুল শবর। রাহুলের কথায়, ‘‘আমাদের আর ওখানে থাকতে ভাল লাগছিল না। কিন্তু আসতে পারছিলাম না। বলা ভাল, আমাদের আসতে দিচ্ছিল না। তখন আমিই এলাকার পরিচিত এক জনকে ফোন করি। সব খুলে বলি।’’ বাড়ির জন্য মন কেমন করছে, একবাক্যে জানাল সকলেই।
জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার শিশির মাহাতো জানিয়েছেন, আজ, সোমবার বরাবাজার ব্লকে বিডিও-র উপস্থিতিতে এদের সকলকে বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।