Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোপাইয়ে চালু শ্রমজীবী হাসপাতালের বহির্বিভাগ

গা-হাত-পায়ে ব্যাথা। পেট খারাপ। তার ওপর জ্বরজ্বালা তো এলাকায় রয়েইছে। কিন্তু, টানা দু’দিন ধরে বর্ষার জেরে এলাকায় সর্দি, কাশি আর জ্বরজ্বালায় আক্রান্তদের সংখ্যা আরও বাড়ছে। ‘‘তবে, গ্রাম থেকে বেরিয়ে আলপথ বেয়ে খানাখন্দে ভরা মোরাম রাস্তার পথ ধরে সড়কে ওঠা। সেখান থেকে কোনও রকমে গাড়িতে উঠে চিকিৎসক বা হাসপাতালের খোঁজে শহরে যাওয়া। রাস্তার অসুবিধে এবং আসা-যাওয়ার ভোগান্তির কথা মনে পড়লেই রোগ আপনিই ছেড়ে যায়!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০০:৫১
Share: Save:

গা-হাত-পায়ে ব্যাথা। পেট খারাপ। তার ওপর জ্বরজ্বালা তো এলাকায় রয়েইছে। কিন্তু, টানা দু’দিন ধরে বর্ষার জেরে এলাকায় সর্দি, কাশি আর জ্বরজ্বালায় আক্রান্তদের সংখ্যা আরও বাড়ছে। ‘‘তবে, গ্রাম থেকে বেরিয়ে আলপথ বেয়ে খানাখন্দে ভরা মোরাম রাস্তার পথ ধরে সড়কে ওঠা। সেখান থেকে কোনও রকমে গাড়িতে উঠে চিকিৎসক বা হাসপাতালের খোঁজে শহরে যাওয়া। রাস্তার অসুবিধে এবং আসা-যাওয়ার ভোগান্তির কথা মনে পড়লেই রোগ আপনিই ছেড়ে যায়!’’— গড়গড়িয়ে বলছিলেন জনার্দন মণ্ডল, মহাদেব চক্রবর্তী, মাধব বাবাজি, চন্দন দাসেরা। যদিও রোগীর অবস্থা জরুরি বুঝলে শহরে বা বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা সকলেই কৃষিজীবী এবং শ্রমজীবী মানুষ। শান্তিনিকেতন লাগোয়া কোপাইয়ের আশপাশের গ্রামে তাঁদের বাস।
তবে, শনিবার থেকে তাঁদের মধ্যে দেখা গিয়েছে অন্য রকমের উৎসাহ। হবে না-ই বা কেন? আসলে এলাকার কৃষিজীবী, শ্রমজীবী মানুষের সহযোগিতায় চাঁদপুরে হতে চলেছে শ্রমজীবী হাসপাতাল। শুধু তাই নয়, পাকাপাকি ভাবে সপ্তাহে এক দিন ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগের পরিষেবা চালু হয়েছ। শনিবার সেই পরিষেবারই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। এলাকার পাঁচশোর কিছু বেশি রোগী ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়েছিলেন শনিবার চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য। কিন্তু, টানা দু’দিন নাগাড়ে বৃষ্টির জন্য প্রতিকূল পরিবেশে সকল রোগীকে দেখা সম্ভব হয়নি কলকাতা থেকে আসা চিকিৎসক নবারুণ ঘোষালদের।

শুধু নবারুণবাবুরাই নন, ইতিমধ্যেই শ্রমজীবী হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছেন চিকিৎসক পার্থ গিরি, তাপস ভট্টাচার্য, রূপক ঘোষ, মোহিত সাহা, অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় এবং সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাই দু’দিনের অঝোর বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এলাকার কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন চাঁদপুরে। নিজেদের হাতের নাগালে ডাক্তারবাবুদের পাওয়া কার্যত তাঁদের কাছে নাকি দুরূহ ব্যাপার। তাই ওই কোপাই এলাকার কৃষিজীবী, শ্রমজীবী মানুষেরা শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন। সিউড়ির পেশায় আইনজীবী স্বপন রুজ জমি দিয়েছেন। শ্রমজীবী হাসপাতালের পক্ষে আহ্বায়ক কিশোর ভট্টাচার্য এবং স্বপন রুজ বলছেন, ‘‘দশ টাকার বিনিময়ে শ্রমজীবী পরিবারের সদস্য হওয়া যায় এখানে। আনুষ্ঠানিক ভাবে বহির্বিভাগের পরিষেবা চালুর কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্যতম কর্ণধার ফণিভূষণ ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার, কৃশাণু মিত্র, সুব্রত চক্রবর্তী প্রমুখ।’’

শ্রীনিধিপুর পঞ্চায়েতের চাঁদপুর, সোলেমানপুর-সহ আশপাশের ২৭টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ জন পাবেন এই পরিষেবা। স্থানীয়দের উদ্যোগে চালু হওয়া এই শ্রমজীবী হাসপাতালের প্রধান কারিগর ফণিগোপালবাবু বলেন, “বেলুড়, শ্রীরামপুর, সরবেরিয়ায় শ্রমিক, কৃষকেরা যে হাসপাতাল গড়ে তুলেছে, এখানেও তাঁরাই করবেন। বাণিজ্যিক ভাবে আমরা স্বাস্থ্য পরিষেবা দিই না। শুধু হাসপাতালের পরিষেবাই নয়, হাসপাতাল ছাড়াও জৈব কৃষি কাজ, পশুপালন, হস্তশিল্পের কাজকর্মও এখানে হবে।”

তিন দশকের কিছু বেশি সময় ধরে এমন হাসপাতাল চালিয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। বন্ধ কারখানার কিছু শ্রমিক এবং কিছু চিকিৎসককে নিয়ে শুরু হওয়া উদ্যোগ আজ রাজ্যের স্বাস্থ্য-ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। সিউর, চাঁদপুর, সোলেমানপুর, কবিরাজপুর, বল্লভপুর, খয়ের গোড়িয়া, গোপীবল্লভপুর, আদিবাসী পাড়া, খাঁয়েরপাড়া, বাদুরিয়া, শ্রীরামপুর, কালাগ্রাম, ইসানপুর, মহোদরী মতো একাধিক গ্রামের বাসিন্দা অনিল চক্রবর্তী, চন্দন দাস, মাধব বাবাজি, উজ্জ্বল পাল প্রমুখেরা তাই কোমর বেঁধে নেমেছেন তাঁদের শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ে তোলার কাজে। ওই শ্রমজীবী হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় মেধাবীদের নিখরচায় হাসপাতালের নানা বিধ কাজকর্ম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা ওই হাসপাতালে নানা কাজে যোগ দেবেন। দল, মত নির্বিশেষে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ এগিয়ে এসে এমন কর্মকাণ্ডে নিজেদের যুক্ত করার জন্য আহ্বান জানান ওই হাসপাতালের উদ্যোক্তা এবং আগতেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE