E-Paper

কলকাতায় কৃপাময়ীর পটচিত্র

কৃপাময়ীর স্বামী গোপাল কর্মকারের লেদ কারখানা রয়েছে। পটচিত্র আঁকতে পারলেও ব্যবসাতেই তাঁর মন।

তারাশঙ্কর গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৩
Kripamoy karmakar Patachitra

কলকাতায় হরিদেবপুরের পশ্চিম পুটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতির মণ্ডপে নিজের আঁকা পটচিত্রের সামনে কৃপাময়ী। নিজস্ব চিত্র।

পটচিত্র আঁকা তাঁদের রক্তে, তাঁদের নেশায়। কিন্তু রোজগার না থাকায় আঁকা ছেড়ে ব্যবসায় ঝুঁকেছিলেন ছেলে। তাই পুত্রবধূকেই হাতে করে পটচিত্র আঁকা শিখিয়েছিলেন শ্বশুরমশাই নিতাই কর্মকার। তিনি চেয়েছিলেন, পুত্রবধূ কৃপাময়ী কর্মকারই এলাকার পটচিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখুন। শ্বশুরের ইচ্ছাপূরণ করেছেন কৃপাময়ী। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে পট আঁকার নেশা ধরিয়েছেন। এ বার কলকাতার পশ্চিম পুটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতির পুজো মণ্ডপ সেজে উঠেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের বীরসিংহ গ্রামের কৃপাময়ীর আঁকা পটচিত্রে।

কৃপাময়ীর স্বামী গোপাল কর্মকারের লেদ কারখানা রয়েছে। পটচিত্র আঁকতে পারলেও ব্যবসাতেই তাঁর মন। তাই কৃপাময়ীকে পটচিত্রের ধারা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব দেন শ্বশুরমশাই। সংসারের নানা কাজের মধ্যেও তিনি দেবদেবীর পটচিত্র আঁকেন। পটের গান লেখেন, গেয়ে শোনান। সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পান। তাঁর পটচিত্র কিনতে বাইরে থেকেও অনেকে বাড়ি আসেন।

শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সংস্কার ভাঙার সাহসও দেখিয়েছেন তিনি। কথিত আছে, বহু কাল আগে মহামারির সময় পাত্রসায়রের জামকুড়ির এক রাজা স্বপ্নে দেবীর যে রূপ দেখেছিলেন, তা পটচিত্রে ফুটিয়ে তোলেন কৃপাময়ীর শ্বশুরবাড়ির কোনও পূর্বপুরুষ। ছবি আঁকার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই থেকে এই পট আঁকার সাহস আর কেউ করেননি। জামকুড়ি রাজবাড়ির পুজোতে নবমীর মধ্যরাতে এখনও পুজো হয় দেবীর ওই মহামারি রূপের। সেই পটচিত্র নষ্ট হওয়ায় ২০১১ সালে রাজবাড়ি থেকে কৃপাময়ীকে নতুন করে ওই পট আঁকতে অনুরোধ করা হয়। অমঙ্গলের আশঙ্কায় পিছিয়ে যাননি কৃপাময়ী। তিনি বলেন, ‘‘সবাই পিছিয়ে গেলে কাজ করবে কে? মায়ের স্মরণ নিয়েই ওই পট নতুন করে আঁকি।’’ গত বছর ওন্দার মাজডিহারও একটি প্রাচীন পট নতুন করে আঁকেন তিনি। ছেলে অরূপ, মেয়ে মালা, পুত্রবধূ বৃষ্টিকেও কৃপাময়ী পটচিত্র আঁকা শিখিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার পশ্চিম পুটিয়ারির পুজো মণ্ডপের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন কৃপাময়ী। পুজো কমিটির তরফে পল্লব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের এ বছরের থিম ‘চারিকল্প’। প্রাচীন কাল থেকে ঘট, পট, সরা ও মূর্তি— এই চারটি কল্পে দেবী পূজিতা হয়ে আসছেন। পট শিল্পী খুঁজতে বাঁকুড়ায় গিয়েছিলেন আমাদের সমীক্ষক দল। সেখানেই কৃপাময়ী কর্মকারের খোঁজ পান তাঁরা।’’

একটি খ্যাতনামা রং প্রস্তুতকারী সংস্থার এ বছরের শারদ সম্মান পেয়েছেন কৃপাময়ী। তথ্য চিত্রে তাঁরা শিল্পকে আঁকড়ে কৃপাময়ীর বেঁচে থাকার কথা তুলে ধরেছেন।

লোক-সংস্কৃতি গবেষক তথা রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (নিরাপত্তা) সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘কৃপাময়ী এক জন প্রতিভাময়ী লোকশিল্পী। তিনি গৃহবধূ হয়েও শ্বশুরবাড়ির শিল্পের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর শিল্পের কদর দেশ-বিদেশে রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Patrasayar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy