সেবা: চিকিৎসায় সেরে উঠছেন নাগরী। নিজস্ব চিত্র
এ রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠে। প্রশ্ন উঠে চিকৎসকদের দায়িত্ববোধ নিয়েও। কিছু ক্ষেত্রে হয়ত সেটা সত্যিও। কিন্তু ব্যতিক্রমও রয়েছে। সম্প্রতি তার প্রমাণ পেলেন দুবরাজপুরের গোহালিয়াড়া গ্রামের নাগরী বাউড়ি। কলকাতার প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাকটিভ সার্জন মণীশ মুকুল ঘোষ নিখরচায় জটিল এক অস্ত্রপ্রচারে মধ্য পঞ্চাশের ওই মহিলার অক্ষম বা পা-টাই কার্যত ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আপ্লুত নাগরীর উপলব্ধি, শহরে এখনও এত ভাল মানুষেরা থাকেন! বলছেন, তবে শুধু কলকাতার ওই চিকিৎসকই নন, নাগরীর পা ফিরে পেতে আরও দু’জন মানুষের অবদান যথেষ্ট। একজন হলেন উত্তরপ্রদেশের কাশি থেকে বক্রেশ্বরে আসা নাগাসম্প্রদায়ভূক্ত এক সাধু দুর্গেশ গিরি। এবং দ্বিতীয় জন হলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কলকাতার এক ব্যবসায়ী সুব্রত বসু। নাগরী বলছেন, ‘‘ওঁরা না থাকলে কলকাতার ওই চিকিৎসকের কাছে যে পৌঁছতেই পারতাম না।’’
ঠিক কী হয়েছিল নাগরীর?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোহালিয়াড়া গ্রামের দাস পাড়ায় বাসিন্দা ওই মহিলার আর্থিকভাবে বিপন্ন। স্বামী মারা গিয়েছেন আগেই। ছেলে বউ, মেয়ে দেখে না। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করাই দুষ্কর ছিল। তার মধ্যেই গত দু’বছর ধরে তাঁর বাঁ পায়ে ক্ষত। পায়ের পিছন দিকে জঙ্ঘার নীচ থেকে হাটুর নীচ পর্যন্ত পুড়ে যাওয়ায় জ্বালা। যার জন্য হাঁটুটাই কার্যত বেঁকে গিয়ে চলার শক্তি হারিয়ে ছিলেন নাগরী। নাগরীর দেবীর চিকিৎসক মনীশ মুকুল কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে প্রথমে নাগরীর হাঁটু সোজা করেন। এরপর অস্ত্রপ্রচার। সেই ক্ষত ঢাকতে স্কিন গ্রাফটিং করেন। বর্তমানে মহিলাকে প্রায় সুস্থ করে ফেলেছেন। শনিবার গোহালিয়াড়ায় ফিরেছেন নাগরী। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘এখন দিন কয়েক নিয়ম মেনে চলা। ভাল খাওয়াদাওয়া করলে পূর্বের ক্ষমতার ৭০ শতাংশ ফেরত পাবেন।’’
নাগাসম্প্রদায়ভূক্ত সাধু দূর্গেশ গিরি বছর কয়েক আগে বক্রেশ্বর ধামে আসেন। সম্প্রতি বক্রেশ্বের কাছে একটি আশ্রম গড়েছেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, প্রান্তিক কিছু মানুষের সেবায় যদি কিছু করা যায়। একেবারেই যাঁদের খাবার জোটে না, এমন জনা সাতেক প্রান্তিক মানুষের জন্য নিজের হাতে রান্না করে তাঁদের খাবার পৌঁছে দেন প্রতিদিন। মাস দু’য়েক ধরে এলাকার কিছু মানুষের কাছে চেয়ে চিন্তেই এ কাজ করছেন তিনি। সেই তালিকায় ছিলেন নাগরী বাউড়িও। কিন্তু ওই প্রৌঢ়ার চলাফেরা বন্ধ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। দূর্গেশ বলেন, ‘‘সপ্তাহ দুয়েক আগে নাগরীকে দেখতে গিয়ে বন্ধু চিকিৎসককে দেখানোর ব্যবস্থা করেন সুব্রতবাবুই। বক্রেশ্বর ওঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজ দেখেতে প্রায়ই এখানে আসেন। সেই সূত্রে আমার সঙ্গে আলাপ।’’
সুব্রতবাবু বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল একবার অন্তত ভাল চিকিৎসক দেখানো প্রযোজন। বর্ধমানে আমার ওই বন্ধু সার্জনকে দেখানো হয়। তিনি জানিয়েছিলেন, অপারেশন করে চলার শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া যায়। শুধু মাত্র নার্সিংহোমের খরচটুকু জোগাড় করতে পারলেই হল। প্রায় হাজার ত্রিশেকের টাকা জোগাড় হয় মিলিতভাবেই। ২৫ তারিখ অস্ত্রপ্রচার হয় তাঁর। ২ তারিখ ছাড়া পান।’’ কী বলছেন নাগরীর চিকিৎসক মণীশ মুকুল?
তিনি বলেন, ‘‘হাঁটু ভাঁজ করতে না পারা জন্য ওঁর পা টা কার্যত অকেজো হয়ে গিয়েছিল। আরও অনেক জটিলতা ছিল। অপুষ্টি জনিত সমস্যা। তবে এখন অনেক ভাল। হাঁটতে পারছেন তিনি।’’
কিন্তু অপারেশেনের পরে বাড়ি ফিরে সেবা যত্ন জরুরি। এ বারও এগিয়ে এসেছেন সাধুবাবা। বর্তমানে তাঁর আশ্রমেই ঠাঁই হয়েছে নাগরীর। ছেলে বৌ না এলেও মেয়ে এসে দেখভাল করছেন।
নাগরী বলছেন, ‘‘আমার ধন্যি কপাল, ওঁরা সকলে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy