Advertisement
E-Paper

হাটে বসছে ‘হাসির দোকান’

বরাবাজারের সাপ্তাহিক হাটে বিনা পয়সায় এ ভাবেই ‘হাসি’ ফেরি করছেন কয়েক জন যুবক যুবতী। রবিবার কিসান মান্ডির ওই হাটে গিয়েছিলেন নোয়াডি গ্রামের শশাঙ্ক মাহাতো।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩১
উৎসাহী: বরাবাজারের কিসান মান্ডিতে। নিজস্ব চিত্র

উৎসাহী: বরাবাজারের কিসান মান্ডিতে। নিজস্ব চিত্র

বামনিডি গ্রামের কলেজ পড়ুয়া সুবল কিস্কু অনেক ক্ষণ ধরে বেছে একটা ফ্রক তুলে নিলেন। বললেন, ‘‘আমার পাশের বাড়িতেই একটা মেয়ে থাকে। ওর এ রকম একটা ফ্রক হলে খুব উপকার হবে।’’ মুরগাডি গ্রামের অনিল মাহাতোর মুখেও হাসি। কিশোর ছেলের জন্য রঙিন টি-শার্ট নিয়েছেন। বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে রঙিন গেঞ্জি কেনার বায়না ধরেছিল। সংসারের খরচ বাঁচিয়ে হাতে তেমন কিছু থাকে না। আজ খুব খুশি হবে।’’

বরাবাজারের সাপ্তাহিক হাটে বিনা পয়সায় এ ভাবেই ‘হাসি’ ফেরি করছেন কয়েক জন যুবক যুবতী। রবিবার কিসান মান্ডির ওই হাটে গিয়েছিলেন নোয়াডি গ্রামের শশাঙ্ক মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘ধর্মকাঁটার কাছে দেখি কয়েক জন জামাকাপড়ের দোকান দিয়েছে। এক পড়শির মুখে শুনলাম, টাকা-পয়সা নিচ্ছে না। ভেবেছিলাম মশকরা করছে বুঝি। গিয়ে দেখি, সত্যি সত্যি।’’

নাম— ‘হাসির দোকান’। যাঁরা কাছে গিয়েছেন, দেখেছেন নানা রকমের পোশাক রয়েছে। ছেলেদের, মেয়েদের। ছোটদের, বড়দের। নতুন নয়। তবে ছেঁড়াফাটাও নয়। টেকসই। ‘‘আজকাল এইটাও বিনা পয়সায় কে দেয়?’’, বলছিলেন শশাঙ্কবাবু। দোকান সামলাচ্ছিলেন অমিত মোদক, সুস্মিতা সিংহ মোদক, বর্ণালি চৌধুরীরা। জয়নগর পাড়ার বাসিন্দা অমিতের একটি দোকান রয়েছে। উপরপাড়ার বর্ণালি কলেজপড়ুয়া। চকবাজারপাড়ার সুস্মিতা স্কুলছাত্রী।

হঠাৎ এমনটা কেন? অমিত জানান, তাঁর দোকানে বিভিন্ন অনলাইন পরিষেবা দেওয়া হয়। প্রায়ই দেখেন, কোনও কিশোরী মেয়ে মলিন ফ্রক পরে দোকানে এসেছে। ‘‘বা কোনও বাচ্চা ছেলে যে জামাটা গায়ে চাপিয়ে এসেছে, সেটা দেখলেই বোঝা যায় ওর নয়। বড় কারও’’, বলছিলেন অমিত। সেই থেকেই তাঁদের মাথায় আসে, বাড়তি পোশাক যাঁদের খামোখা পড়েই থাকে, তাঁদের থেকে নিয়ে যদি ওই ছেলেমেয়েগুলিকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।

সুস্মিতা, বর্ণালি এবং অমিত কয়েক দিন ধরে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে বেশ কিছু জামাকাপড় জোগাড় করেন। কেচে ইস্ত্রি করানোর পরে সেগুলি বিলি করা শুরু হয়। তাঁরা জানাচ্ছেন, আপাতত প্রতি রবিবার কিসান মান্ডিতে এই ‘দোকান’ চালু থাকবে। ক্রেতারা জিনিস নিয়ে যাওয়ার সময়ে একগাল হাসি দিয়ে যাচ্ছেন। ওটাই যেন ‘দাম’। তাই নাম রাখা হয়েছে, ‘হাসির দোকান’।

এমন দোকানের কথা জানেন বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্যও। রবিবার এক ফাঁকে দোকানে ঘুরেও গিয়েছেন। শৌভিকবাবু বলেন, ‘‘ওই ছেলেমেয়েগুলি খুব ভাল কাজ করছেন। এর আগে পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে এই ধরনের একটা পরিকল্পনা হয়েছিল। কিছু কারণ পিছিয়ে যায়। ওঁদের জন্য কিছু করতে পারি কি না দেখছি।’’

Market Barabazar Purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy