Advertisement
E-Paper

সবটাই কি শেষ, চিন্তা

বহু বছর ধরে সংগ্রহ করা সাধারণ মানুষের আমানত ও সমবায়ের নিজস্ব আয় মিলিয়ে বড়জোড়ার ওই সমবায়ে জমা ছিল ১ কোটি ৩১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। তদন্তে গিয়ে জেলা সমবায় দফতরের কর্তারা দেখেন, পড়ে রয়েছে কেবল ২২,২২২ টাকা। বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১৯
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তিলে তিলে কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য জমিয়ে ছিলেন দু’লক্ষ টাকা। কেউ বৃদ্ধ বয়সে আয় সুনিশ্চিত করতে জমিজমা বেচে চার লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। বড়জোড়ার ভৈরবপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির আর্থিক দুর্নীতি সামনে আসার পরে, এখন সেই সব সাধারণ মানুষের পায়ের নীচের মাটি সরে গিয়েছে। ওই সমবায় সমিতির সদস্যদের মুখে মুখে একটাই কথা ঘুরে ফিরে আসছে— ‘সবই কি তবে শেষ হয়ে গেল?’

বহু বছর ধরে সংগ্রহ করা সাধারণ মানুষের আমানত ও সমবায়ের নিজস্ব আয় মিলিয়ে বড়জোড়ার ওই সমবায়ে জমা ছিল ১ কোটি ৩১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। তদন্তে গিয়ে জেলা সমবায় দফতরের কর্তারা দেখেন, পড়ে রয়েছে কেবল ২২,২২২ টাকা। বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমবার ঘটনাটি নিয়ে সমবায় দফতরের বাঁকুড়া রেঞ্জের ডেপুটি রেজিস্টার অব কো-অপারেটিভ সোসাইটি পিয়ালি সাহা বড়জোড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই সমবায়ের পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান, সম্পাদক-সহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার ওই সমবায়ের পরিচালন কমিটির সম্পাদক নেপাল ঘড়ুইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ দিকে জমা রাখা আমানত হারিয়ে বৃহস্পতিবার সমবায়ের ক্যাশিয়ারের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। ক্যাশিয়ারের নাম সমবায় দফতরের দেওয়া অভিযোগ পত্রে নেই। যদিও ভৈরবপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ রাজ প্রথম থেকেই এই দুর্নীতির জন্য ক্যাশিয়ারকেই দায়ী করে আসছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ক্যাশিয়ারের খোঁজ বেশ কিছু দিন ধরে মিলছে না।

এই সব কিছু ছাপিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁদের আমানত ফিরে পাওয়ার দাবিকেই সামনে আনছেন। দুবরাজপুরের বাসিন্দা পেশায় ক্ষুদ্র চাষি বাউল ঘোষ কয়েক বছর ধরে রোজগারের টাকা ওই সমবায়ে রেখেছিলেন। তাঁর দাবি, ২ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা জমা ছিল। বৃহস্পতিবার সে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বাউলবাবু। তিনি বলেন, “মেয়ের বিয়ের জন্য ওই টাকা জমিয়েছিলাম। মেয়ের বিয়ে পাকা হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই দিনক্ষণ ঠিক হবে। এখন আমি কী করব, কোথায় যাব?” দুবরাজপুরের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ শম্ভুনাথ ঘড়ুই জানান, জমিজমা বিক্রি করে চার লক্ষ টাকা রেখেছিলেন সমবায়ে। এখন কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। সমবায়ে জমা টাকার সুদ বছরে কয়েক বার তুলে সংসার চালান তিনি। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে বৃদ্ধ। দুবরাজপুরের যুবক শ্যামল ঘোষ ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে তিন লক্ষ টাকা জমিয়ে সমবায়ে আমানত করে রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন। শ্যামল বলেন, “আমার যা সম্বল ছিল, সব চলে গেল।”

এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া নেপালবাবুর ভাই নরেন ঘড়ুইয়ের দাবি, ওই সমবায়ে প্রায় আট লক্ষ টাকা রেখেছিলেন তিনি। সেই টাকাও নেই। নরেনবাবু বলেন, “আমার দাদাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত ভাবে বলছি, দাদা দোষী নয়। আসল দোষী অন্য কেউ। তাকে গ্রেফতার করা হোক।” আর গ্রামবাসীর দাবি, সমবায়ের সদস্যদের আমানত ফেরত দেওয়া হোক আগে। আর ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা হোক।

তবে আমানতকারীদের টাকা এখনই ফেরানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে পিয়ালিদেবী বলেন, “অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে, তাঁদের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরত দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, আমানতকারীরা যদি টাকা ফেরতের দাবি লিখিত ভাবে জানান, তা হলে রাজ্যের কাছে সেই দাবি পাঠাব।”

Bankura Cooperative Scam Monetary Scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy