ভগীরথ তপস্যা করে মর্ত্যে গঙ্গাকে নিয়ে এসেছিলেন। পুরুলিয়া শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে জলের সমস্যা ছিল বটে, তবে ছিলেন আইআইটির বিশেষজ্ঞরাও। তাঁরাই গত বছর যন্ত্রপাতি নিয়ে পরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন কোথায় খনন করলে মিলতে পারে জল। শনিবার খননও হয়েছে সেই মতো। কিন্তু তার আগে রীতিমতো উপোস করে পুজোআচ্চা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সামিল হয়েছিলেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাস দাসও।
শহরের ওই ওয়ার্ডের নিমটাঁড় এলাকায় শনিবার রাতভর চলেছে খননের কাজ। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই এলাকায় মাটির নীচে সব জায়গায় জল মেলে না। গ্রীষ্মের গোড়া থেকেই জলের হাহাকার শুরু হয়ে যায়।
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাস দাস বলেন, ‘‘পুরুলিয়ায় টাঁড় মানে শুকনো জমি। সেই থেকেই এলাকার নাম হয়েছে নিমটাঁড়। গ্রীষ্মের আগেই প্রায় সমস্ত পুকুর সেখানে শুকিয়ে যায়। শহরের পানীয় জলের উৎস কংসাবতীর অবস্থাও প্রায় একই হয়। তখন জলের ভরসা বলতে নলকূপ। কিন্তু সাধারণ নলকূপের জলস্তরও নেমে যায় কিছু দিনের মধ্যেই।’’
গত বছর এলাকার তিন-চারটি জায়গায় নলকূপের জন্য খনন করা হয়েছিল। কিন্তু জল মেলেনি। রাশি রাশি ধুলো উঠেছিল শুধু। তার পরেই আসেন খড়গপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষা করে তাঁরা একটি জায়গা দেখিয়ে দিয়ে যান।
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি জেলা সফরে এসে পুরসভাকে জলের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ করে গিয়েছেন। সেই টাকা দিয়েই বিশেষজ্ঞদের দেখানো জায়গায় গভীর নলকূপ খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান বিভাসবাবু। তবে তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষজ্ঞরা বলেই গিয়েছিলেন। তার পরেও এলাকার বাসিন্দারা চাইছিলেন পুজোআচ্চা করে তারপরেই খনন হোক। মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটাকে মর্যাদা দিতেই এই আয়োজন।’’
এলাকার বাসিন্দা শিবানী কালিন্দী, কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘আগে কয়েকটা জায়গায় খোঁড়া হয়েছে, তবুও জল পাওয়া যায়নি। তাই পুজোর জন্য আমরা উপোস রেখেছিলাম।’’ ফলে বিশেষজ্ঞদের চিহ্নিত করে দেওয়া জায়গায় খননের জন্য বেশ কিছু নিয়মকানুন বাতলাতে ডাক পড়ে পুরোহিতের।
এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোলা ঘোষালরা জানান, পুরোহিতের কথামতো ঠিক হয় পয়লা বৈশাখ সূর্যাস্তের সময়ে খননের কাজ হবে। বিকেলে গঙ্গাপুজো করা হয়। নারকেল ফাটিয়ে, মাঙ্গলিক আচার মেনে মন্ত্র পড়ে শুরু হয় খনন।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা শাখার সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, ‘‘বিজ্ঞানে পুজোর সঙ্গে জল মেলার কোনও সম্পর্ক নেই। এটা নিছকই মানুষের ধর্মীয় সংস্কার।’’ তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, ‘‘এই শুকনো এলাকায় জল আসাটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। এটা শুধু সংস্কার নয়, একটা উৎসবের মতোই।’’
এক দিনের খোঁড়াখুঁড়ির পরে জলও মিলেছে। আর পুরোহিত নন্দ শাস্ত্রী তা দেখে বলছেন, ‘‘গরমে জল পাওয়া মানে ঈশ্বরকেই পাওয়া।’’