E-Paper

বাজি-গ্রামের খ্যাতি এখন ডাকের সাজে

জগন্নাথপুর গ্রামের আনন্দ মালাকার বলেন, ‘‘ডাকের সাজের পাশাপাশি বাজি তৈরি আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবসা। লাইসেন্সও ছিল। সাবধানতা মেনেই কাজ করতাম।

তারাশঙ্কর গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫২
দিনবদল: ডাকের সাজ তৈরির ব্যস্ততা জগন্নাথপুরে।

দিনবদল: ডাকের সাজ তৈরির ব্যস্ততা জগন্নাথপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

এক সময় যে হাত আতশবাজি, শব্দবাজিতে জাদু দেখাত, সেই হাতই এখন প্রতিমার ডাকের সাজে তাক লাগাচ্ছে। বাজি নিয়ে পুলিশের কড়াকড়িতে গত বছর তিনেকে আমূল বদলে গিয়েছে বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়ার জগন্নাথপুর। এক সময়ের বাজি প্রস্তুতকারকেরা বলছেন, এতে আয় কমলেও, স্বস্তি মিলেছে।

শব্দবাজি থেকে তুবড়ি, রংমশাল— বিভিন্ন রকমের আতশবাজির জন্য খ্যাতি ছিল জগন্নাথপুরের। আটটি পরিবারের ১৬-১৭ জন বাজি তৈরি করতেন। এখানে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পরিবেশ কর্মীদের আন্দোলন ও আদালতের একের পর এক নির্দেশে গত এক দশকে ধাপে ধাপে সব রকম বাজি তৈরিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই বাজি-গ্রামে। পুলিশের নজরদারি অবশ্য জগন্নাথপুরের উপর থেকে পুরোপুরি সরেনি। দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের পরেও
খোঁজ নিয়েছে পুলিশ।

জগন্নাথপুর গ্রামের আনন্দ মালাকার বলেন, ‘‘ডাকের সাজের পাশাপাশি বাজি তৈরি আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবসা। লাইসেন্সও ছিল। সাবধানতা মেনেই কাজ করতাম। লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকেই বারুদ এনে কাজ হত। কিন্তু পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে লাইসেন্স খারিজ হয়। এখন আমরা ডাকের সাজ আর চাষবাসেই মন দিয়েছি।’’ দুর্গাপ্রতিমার সেরা ডাকের সাজের জন্য আনন্দ মালাকার নদিয়া, হাওড়া, ঝাড়খণ্ডে পুরস্কৃতও হয়েছেন।

তবুও বাজির স্মৃতি ভুলতে পারেন না অনেকে। বেণীমাধব মালাকার বলেন, ‘‘তখন বছরভর বিয়েবাড়ি ও নানা অনুষ্ঠানে বাজির বরাত আসত। আতশবাজির মাধ্যমে বর-বউয়ের নাম ফুটিয়ে তোলা, মালাবদল দেখানো হত।’’ সে সব এখন অতীত। তবে পেশা বদলে সে ভাবে কোনও সরকারি সাহায্য পাননি জগন্নাথপুরের এই বাসিন্দারা। বাপ-ঠাকুরদার আর এক পেশা ডাকের সাজ তৈরিকে আঁকড়ে নিজেরাই বিকল্প রুজির পথ খুঁজে নিয়েছেন। প্রতিমার ডাকের সাজ ছাড়াও বিয়ের টোপর তৈরি করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। তবে বৈধ বাজি তৈরি করেও যে দিন গুজরান করা যায়, তা তাঁরা জানেনই না। সাক্ষীগোপাল মালাকার বলেন, ‘‘সবুজবাজি সম্পর্কে ধারণাই নেই। সরকার যদি প্রশিক্ষণ দেয়, বাজার যদি পাওয়া যায়, আমরা সবুজ বাজিই তৈরি করব।’’ বড়জোড়ার বিডিও রাজীব আহমেদের আশ্বাস, "ওই পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন দফতর থেকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।"

পাত্রসায়রের কুশদ্বীপেও অল্প কয়েক ঘর বাজি কারিগর রয়েছেন। তাঁরাও জানিয়েছেন, কৃষিকাজ ও ছোট ব্যবসায় মন দিয়েছেন। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, নজরদারির পাশাপাশি ওঁদের বোঝানোয় কাজ হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga idol barjora

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy