Advertisement
E-Paper

ভিন্ রাজ্যে ভূত তাড়াতে এসে পুলিশের খপ্পরে পড়লেন ওঝা

তবে পুলিশ দেখেই যে সবার টনক নড়ে যায়, এমনটা নয়। মাতব্বরেরা ভূত তাড়াবেন বলে গোঁ ধরে বসেছিলেন।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
কথা: কালুয়াড়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

কথা: কালুয়াড়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

দুটো পাঁঠা, গোটাকয় মুরগি আর নগদ কয়েক হাজার টাকা— প্রণামী বলতে এই। ঝাড়খণ্ড থেকে ওঝা এসেছিলেন ভূত তাড়াতে। তবে তিনি ভূতকে ধরার আগে পুলিশ ধরল তাঁকে। রবিবার দুপুরে আদ্রা থানার গগনবাইদ পঞ্চায়েতের কালুয়াড়া গ্রামের ঘটনা।

কিছুদিন আগে গ্রামের কয়েক জন বিভিন্ন অসুখে পড়েন। গুজব রটে যায়, চিকিৎসক দেখিয়েও কাজ হচ্ছে না। ষোলোআনার মাতব্বরেরা বসে ঠিক করেন, ওঝার কাছে যাওয়া হবে। যাওয়া হল ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে। সেখানে রাহেরবেড়া গ্রামে এক ওঝার মস্ত নামডাক। বাড়িতে বসেই তিনি নিদান দিয়ে দিলেন, কালুয়াড়া গ্রামের এক বাসিন্দার ঘরে বাসা বেঁধেছে এক ভূত।

অতঃকিম? দুটো পাঁঠা, গোটাকয় মুরগি আর নগদ কয়েক হাজার টাকা। যত তেঁএটে ভূতই হোক না কেন, এইটুকু দিলেই ওঝা তাকে পগারপার করে দিতে পারেন। ষোলোআনার লোকজন ফিরে কড়া নাড়লেন ওই বাসিন্দার ঘরে। ওঝার নিদান জানালেন। আর শুনিয়ে দিলেন, ভূত যার, তাড়ানোর খরচও তার-ই।

তাঁর ঘরে ভূত গেঁড়ে বসেছে, আর তিনিই জানেন না! বাড়ির ছোট ছেলেপিলেরাও রাতে একা একা শৌচে চলে যায়, ভূত তাদের কিচ্ছুটি বলে না। এ দিকে ভয়ে মাতব্বরেরা তটস্থ। বাড়ির কর্তা প্রথমে আমল দিতে চাননি। কিন্তু ভূতের চেয়ে সালিশি সভা আরও বিষম বস্তু। চাপের মুখে গ্যাঁটের কড়ি ভূতের পিছনে খরচ করতে রাজি হতে হয় বাড়ির কর্তাকে।

রাজশেখর বসুর গল্পের মহেশ মাস্টারমশাই অঙ্ক কষে সহকর্মীদের দেখিয়ে ছেড়েছিলেন, ভূত হল শূন্যের বর্গমূল। মহেশের মতো না হলেও প্রত্যেক জায়গাতেই কিছু বিচক্ষণ মানুষজন থাকেন। ফলে ওঝার আসার খবর চলে যায় যুক্তিবাদী সমিতিতে। যুক্তিবাদী সমিতির কর্মকর্তা সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রশাসনকে বিষয়টি জানান।

আদ্রার গোঁসাইডাঙা গ্রামে দুই প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে কিছুদিন আগেই মস্ত গোল পাকিয়েছিলেন এমনই এক ওঝা। প্রৌঢ়াদের উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ। অনেক দিন ধরে সেই নিয়ে টানাপড়েন চলে। ফলে এ বারে খবর পেয়েই সতর্ক হয়ে যায় প্রশাসন।

রবিবার দুপুরে গাড়ি চড়ে গ্রামে আসেন ওঝা। কিন্তু ভূতের সঙ্গে আলাপ ভালমতো জমে ওঠার আগেই বাধা পড়ে যায়। সংগঠনের লোকজন নিয়ে হাজির হয়ে যান যুক্তিবাদী সমিতির সত্যজিৎবাবু। ষোলোআনার মাতব্বরদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। মহকুমাশাসকের নির্দেশে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যান রঘুনাথপুরের দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কলেশ্বরী কোড়া ও সুদেষ্ণা দে মৈত্র। সঙ্গে আদ্রার থানার পুলিশ আর বিডিও (কাশীপুর) মানসী ভদ্র চক্রবর্তী।

তবে পুলিশ দেখেই যে সবার টনক নড়ে যায়, এমনটা নয়। মাতব্বরেরা ভূত তাড়াবেন বলে গোঁ ধরে বসেছিলেন। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ষোলআনার সঙ্গে আলোচনায় বসে কুসংস্কারের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত বোঝানো সম্ভব হয়েছে। যজ্ঞ করতে গ্রামে আসা ওঝাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

দিনের শেষে প্রশাসনের কাছে ষোলোআনা মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছে, যাঁর বাড়িতে ভূত আছে বলে গুজব রটানো হয়েছিল তাঁর সঙ্গে গ্রামের সবাই মিলেমিশে থাকবেন। আর ভবিষ্যতে ভূতের নাম করে নিয়ে এমন কাণ্ডকারখানা করবেন না।

police Adra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy